অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কী ও এর চিকিৎসা কি

Published by

আমাদের দেশে বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার সমস্যা। বিশেষ করে বয়স্ক এবং মহিলাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। সমস্যা হল অ্যানিমিয়া হলে বিষয়টিকে আমরা খুব বেশি পাত্তা দিতে চাইনা। আমাদরে ধারণা, অ্যানিমিয়া শুধু পুষ্টির অভাবে হয়। তাই ভালো মন্দ খেলেই অ্যানিমিয়া সেরে যাবে। আমাদের এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। মূল বিষয়টি হল অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা নানা কারণেই দেখা দিতে পারে। অ্যানিমিয়াকে সাধারণ ভাবে আমরা দেহে রক্তের অভাব বলে সনাক্ত করলেও অ্যানিমিয়ার কিছু কিছু ভাগ রয়েছে। এমনই একটি ভাগের নাম হল অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া (Aplastic anemia)।

সাধারণ অ্যানিমিয়া ও অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার মধ্যে পার্থক্য কি ?

সাধারণ অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতার ক্ষেত্রে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। তবে, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় অস্থিমজ্জার (Bone Marrow) কোষগুলি থেকে যথেষ্ট পরিমাণে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি ব্যাহত হয় বা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে লোহিত, শ্বেত রক্ত কণিকা ও অণুচক্রিকার সংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি কমতে থাকে। কখনও কখনও তা একেবারে আশঙ্কাজনক জায়গায় পৌঁছে যায়।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কেন হয় ?

i. বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, কিছু ওষুধ, বিভিন্ন শিল্পে বা কৃষিকাজে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক, কীটনাশক, সলভেন্ট (যেমন- অর্গানো ফসফেট কমপাউন্ড)-এর জন্য অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। আরও নিখুঁতভাবে বলতে গেলে সাইটোটক্সিক জাতীয় ওষুধ, ফিনাইটোইন, ক্লোরাম ফেনিকল, বেঞ্জিন, পার্ভোরাইরাস ও হেপাটাইটিস-বি জাতীয় ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ ইত্যাদি কারণেও এই অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া শরীরে বাসা বাঁধে।

ii. তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হয় এমন যন্ত্র বা পদার্থের কাছাকাছি অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করলে হতে পারে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া।

iii. ভাইরাল হেপাটাইটিস হতে পারে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার কারণ। দেখা গিয়েছে ভাইরাল হেপাটাইটিস আক্রান্ত রোগীর কিছু অংশের মধ্যে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া থাকতে পারে।

iv. অটোইমিউন ডিজিজ-এর কারণেও হতে পারে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া। এক্ষেত্রে দেহের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জাকে ধ্বংস করতে থাকে।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার প্রকারভেদ

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া মূলত দুই ধরনের—

১. অ্যাকোয়ার্ড বা অর্জিত অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া :- অর্জিত বলতে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ওই রোগটি নিয়ে জন্মায়নি। কিন্তু পরে কোনও কারণে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। অর্জিত অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২. জন্মগতভাবে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া :- কোনও ব্যক্তি যখন বাবা-মা কিংবা পরিবারের কারও থেকে এই রোগ পান, তখন তাকে জন্মগত বলা হয়। এক্ষেত্রে, বংশগতভাবে এই রোগ শরীরে থাকলেও পরে এর উপসর্গগুলি দেখা যায়। কতগুলি রোগ আছে, যেগুলির কারণে জন্মগতভাবে অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে, ফ্রাংকোনি সিনড্রোম, মায়েলোডিসপ্ল্যাস্টিক সিনড্রোম এবং পিএনএইচ সিনড্রোমের মতো অসুখ।

বিভিন্ন কেমিক্যাল এক্সপোজার বা ওষুধের কারণেও সমস্যা তৈরি হতে পারে। এছাড়া, অস্থিমজ্জায় থাকা স্টেম সেল থেকে রক্ত কণিকা তৈরি হয়। কিন্তু অটোইমিউন ডিজঅর্ডারের কারণে স্টেম সেলের বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যায় এবং চর্বি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়। যার ফলে রক্ত কণিকার ভয়ানক ঘাটতি তৈরি হয় শরীরে।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার লক্ষণগুলি কী কী ?

লোহিত রক্ত কণিকার কাজ হচ্ছে অক্সিজেন বহন করা। কিন্তু অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় লোহিত রক্ত কণিকা কমে যায়।এর ফলে রোগী খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েন। দেখা দেয় অবসাদগ্রস্ততা, বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, মাথা ধরার লক্ষণও। এমনকি হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা থাকতে পারে। পাশাপাশি, শ্বেত রক্তকণিকার অভাবে সংক্রমণ সহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। অনুচক্রিকা কম থাকলে রক্ত তঞ্চিত হতে চায় না। রোগীর নাক ও মুখ থেকে রক্তপাত হতে থাকে। ছোট্ট ছোট্ট ক্ষত তৈরি হলেও তা থেকে রক্তপাত বন্ধ হতে চায় না। এগুলিই প্রাথমিক লক্ষণ।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা

সাধারণ কিছু রক্ত পরীক্ষার সঙ্গে বোন ম্যারো পরীক্ষারও সাহায্য নেন চিকিৎসকরা। দেখে নেওয়া হয়, কণিকাগুলো কতটা কমেছে। এরপর ওষুধ দিয়েই প্রথমে রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে সেরেও যায়। তবে ওষুধে কাজ না হলে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টও করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে যান।

অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় তিনটি ধাপ কি কি ?

 অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ায় তিনটি ধাপ রয়েছে। মাইল্ড, মডারেট ও সিভিয়র। পরিস্থিতি মডারেট ও জটিল বা সিভিয়র হলে একজন হেমাটোলজির ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখবেন, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার সময়ে চিকিৎসা না হলে তা প্রাণ সংশয়ের কারণ হতে পারে। তাই কোনও রকম উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago