শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় খুঁজছেন? তাহলে এই ১৭ টি নিয়ম মেনে চলুন- অংশুলা ব্যানার্জী

Published by

শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় খুঁজছেন? কিংবা ভাবছেন কি খেলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে? তাহলে এই প্রতিবেদনটি আপনার জন্যইআসলে মানুষের শরীরের ওজন নির্ভর করে তার শারীরিক কাঠামো গঠনগত উপাদানের ওপরমানুষের উচ্চতার সাথে ওজনের একটি সম্পর্ক আছেসাধারণ ভাবে মানুষের উচ্চতা বয়সের ওপর নির্ভর করে তার আদর্শ ওজন নির্ধারণ করা হয়বর্তমান সময়ের অতিব্যস্ত জীবন, অবসাদ এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন বেশিরভাগ মানুষকেই স্থূল করে তুলছে, যার ফলে নানা রকম রোগব্যাধির শিকার হচ্ছে মানুষ বেশ অল্প বয়সেইএই অতিরিক্ত ওজন কমানোর কিছু উপায় নিয়েই এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হল

)খাদ্যে প্রোটিনের পরিমান বাড়ানো

ওজন কমানোর লক্ষ্যে প্রোটিন একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করেপ্রোটিন হজম এবং বিপাকের (metabolism) সময় শরীরের ক্যালোরি বার্ন হয়, সুতরাং দেখা গেছে যে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য একদিনে বিপাক ক্রিয়াকে ৮০১০০ ক্যালোরি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা খিদে দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকেকিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খেলে মানুষ একদিনে ৪০০ ক্যালোরি মতো খাদ্য কম গ্রহণ করেছে

)প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলা

প্রসেসড ফুডে অতিরিক্ত শর্করা, অতিরিক্ত ফ্যাট থাকে, ফলে এই খাবার ওজন বাড়িয়ে তোলে এবং এই ধরনের খাবারের সবথেকে বিপজ্জনক দিক হল, এই খাবারগুলো খাদ্য গ্রহণের প্রতি এক ধরনের আসক্তি তৈরি করে, ফলে মানুষ খিদে না থাকলেও বেশি বেশি পরিমানে এই ধরনের খাদ্য খেতে থাকে

)স্বাস্থ্যকর খাদ্য সংগ্রহে রাখা

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মানুষ বাড়িতে যে ধরনের খাদ্য মজুত রাখে, তার ওপর নির্ভর করে তার খাদ্যাভাস এবং ওজনঅনেক রকমের স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক খাদ্য আছে, যা আমরা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসাবে ব্যবহার করতে পারি, যেমন- দই, গোটা ফল, বাদাম, গাজর, সিদ্ধ ডিম ইত্যাদি। 

)শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ

খাদ্যে চিনি বা শর্করা, বা আলাদা করে চিনি খাওয়া শুধু ওজন নয়, টাইপ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হার্টের রোগ কে তরান্বিত করেসরাসরি অথবা খাদ্যের মাধ্যমে সব রকম ভাবেই শর্করা গ্রহণ করা ভীষণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ওজন কমাতে গেলে

)জল পান

জল পানের সাথে ওজন কমার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সম্পর্ক আছেপর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান ক্যলোরি বার্ন করার পরিমান বাড়িয়ে দেয়এছাড়া খাওয়ার আগে জল খেলে খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমে যায়অন্য শর্করা যুক্ত পানীয়র বদলে জল পান করলে অতিরিক্ত ক্যলোরি, শর্করা, উভয়েরই পরিমাণ নিয়ন্ত্রন থাকে

) কফি (চিনি ছাড়া) পান করা

কফির ভেতর প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিএক্সিডেন্ট থাকে এবং কফি পান ওজন কমাতে সাহায্য করেকফি আমাদের এনার্জির পরিমান বাড়িয়ে তোলে এবং বেশি পরিমানে ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করেক্যাফিনেটেড কফি ১১% পর্যন্ত বিপাক ক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয় এবং টাইপ–২ ডায়াবেটিসের প্রবণতাও কমিয়ে দেয়এছাড়াও কালো কফি ওজন কমানোর জন্য খুবই উপযোগী, কারন এতে বলতে গেলে কোনো ক্যালোরিই নেই এবং এটি পান করলে চট করে খিদে পায় না

) লিকুইড ক্যালোরি গ্রহণ না করা

কোল্ডড্রিংক, রেডিমেড ফ্রুটজুস, চকোলেট মিল্ক, এনার্জি ড্রিংক ইত্যাদিতে চিনির পরিমান অতিরিক্ত থাকে, তার ফলে এইগুলো বেশি পরিমানে গ্রহণ করলে ওবেসিটির রিস্ক ভীষণ ভাবে বেড়ে যায় সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন একটি করে শর্করাযুক্ত পানীয় বাচ্চাদের ভেতর ওবেসিটির রিস্ক ৬০% বাড়িয়ে দেয়

) রিফাইন্ড কার্বস এর পরিমান কমানো

এই প্রকার খাদ্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুন এবং ফাইবার প্রায় কিছুই থাকে না, পরে থাকে কেবল সহজপাচ্য কার্বোহাইড্রেট, যা অতিরিক্ত খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে এবং তা অন্যান্য রোগেরও কারন সাদা ময়দা, সাদা পাউরুটি, সাদা চালের ভাত, ভাজাভুজি, পাস্তা, প্যাস্ট্রি, চিনি এই জাতীয় খাদ্যের ভেতর পড়ে

) গ্রিন টি (চিনি ছাড়া) পান করা

গ্রিন টি তে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এবং এটি ফ্যাট বার্নিং ওজন কমানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেপেটের মেদ, যা কিনা শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর গ্রিন টি তার ১৭% বার্ন করতে সক্ষম হয়

১০) বেশি পরিমানে ফল সবজি খাদ্যতালিকায় রাখা

ফল সবজি হল খুবই স্বাস্থ্যকর ওজন কমানোয় উপযোগী খাদ্য প্রচুর পরিমানে জল, ফাইবার পুষ্টি  থাকে এতে এবং এর এনার্জি ডেনসিটি কম হওয়ায় বেশি পরিমানে খেলেও ক্যালোরির পরিমান বাড়ে না

১১) প্রতিদেনের ক্যালোরির হিসাব রাখা

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিদিনের ক্যালোরি গ্রহনের একটা হিসাব রাখা অত্যন্ত জরুরিখাবারের ছবি তুলে রেখে বা যে যে খাবার খাওয়া হচ্ছে, তার ক্যালোরির হিসাব রেখে একটা ক্যালোরি চার্ট বা ক্যালোরি ডায়েরি রাখা যায়। 

১২) ছোট পাত্রে খাওয়া

সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ছোটো পাত্রে খেলে, খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়, ফলে তা ওজন কমানোয় পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। 

১৩) লো–কার্ব ডায়েট

কার্বোহাইড্রেট কম আছে এরকম খাদ্য ওজন কমানোয় ভীষণ উপযোগীকার্বোহাইড্রেটের পরিমান কমিয়ে তাকে প্রোটিন ফ্যাট দিয়ে পুরন করলে খিদে কম পায় এবং অতিরিক্ত খাদ্য (ক্যালোরি) গ্রহণের প্রবনতাও কমেতাছাড়া কার্বোহাইড্রেট শরীরে কম প্রবেশ করলে তা শরীরকে অন্যান্য রোগের হাত থেকেও রক্ষা করেলো–ফ্যাট ডায়েটের থেকে লো–ক্যালোরি ডায়েট তিন গুন বেশি ওজন কমানোয় সহায়ক। 

১৪) ধীরে খাওয়া

যদি আমরা খুব তাড়াতাড়ি খাই তাহলে আমরা বুঝে ওঠার আগেই অনেক বেশি ক্যালোরি ইনটেক করে ফেলি যারা দ্রুত খায় তাদের ভেতর মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকেধীরে ধীরে চিবিয়ে খেলে যেমন কম ক্যালোরি ইনটেক হয়, তেমনি ওজন কমানোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হরমোনের নিঃসরণও বাড়ে

১৫) খাবারে ডিমের পরিমান বাড়ানো

ডিম প্রকৃতপক্ষে ওজন কমানোর উপযোগী খাদ্যডিম একটি সহজলভ্য, লো ক্যালোরি, হাই প্রোটিন সমস্ত পুষ্টিগুনে ভরা খাদ্যহাই প্রোটিনযুক্ত খাদ্য বারে বারে খিদে পাওয়া কে আটকে রাখেদেখা গেছে ব্রেকফাস্টে ডিম খেলে তা সপ্তাহে ৬৫% বেশি ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

১৬) খাদ্য তালিকায় লঙ্কা

লঙ্কা জালাপেনোয় ক্যাপাসাইসিন নামক একপ্রকার উপাদান থাকে, যা বিপাকক্রিয়া কে তরান্বিত করে এবং বেশি পরিমানে ফ্যাট বার্ন করেক্যাপাসাইসিন খিদেও নিয়ন্ত্রন করে

১৭) খাদ্যতালিকায় প্রোবায়োটিক

প্রোবায়োটিক হল ভালো ব্যাকটেরিয়াএটা যদি খাদ্যতালিকায় রাখা যায় তাহলে পৌষ্টিকতন্ত্রের কাজ, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া খুব ভালো ভাবে হয় এবং অতিরিক্ত ওজন কমাতেও এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে প্রোবায়োটিক সমগ্র খাদ্যনালীতে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, ফলে খাদ্য থেকে শরীরে কম ফ্যাট অ্যাবসর্ব হয় এবং অতিরিক্ত খিদে পাওয়া কম থাকে

         উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলির সাথে সাথে দিনে অন্তত ঘন্টা ঘুম, সঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া করা, দৌড়ানো, হাঁটা এবং আরো কিছু কার্ডিও এক্সারসাইজ করা, রেসিস্টেন্ট ট্রেনিং (ওজন নিয়ে ব্যায়াম) করা ইত্যাদির মাধ্যমে একটি সঠিক স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখা সম্ভব হবে

Anshula Banerjee

Hello, I am Anshula Banerjee, completed my post-graduation degree in English, along with Bachelor of Education. I live at Nadia. I am a voracious reader in various fields of knowledge that may help the readers to satisfy their urge specially in the area of health and wellness.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago