চোখে ছানি পড়ার কারণ কি এবং চিকিৎসা

Published by

বয়সকালে অনেকেই চোখে ছানি পড়ার সমস্যায় ভোগেন।আমরা সকলেই জানি, চোখে ছানি পড়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি ঘোলা হয়ে যায়। চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর বয়সের পর থেকে এই সমস্যা মূলত দেখা যায়। আসুন আজ আমরা আলোচনা করি কি এই ছানি পড়া? চোখে ছানি পড়ার কারণ কি এবং চিকিৎসাই বা কি?

চোখে ছানি পড়ার সমস্যাটা আসলে কি?

সহজ কথায় যদি বলা যায়  চোখটা একটা ক্যামেরার মত। ক্যামেরার মতোই এতে একটা স্বচ্ছ লেন্স থাকে। আলো এসে লেন্সে পড়ে। সেখান থেকে রেটিনা হযে মস্তিস্কে যায়। তখন আমরা কোনও জিনিস দেখতে পাই। এই লেন্সটা অনেক সময অস্বচ্ছ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিটাকেই ছানি বলে।

চোখে ছানি পড়ার কারণ

ছানির মূলত বয়সজনিত কারণেই হয। এটা ছাড়া ছানির নির্দিষ্ট কোনও কারণ এখনও অজানা। তবে ছানির অন্যতম বড় রিস্ক ফ্যাক্টর হল ডায়বেটিস। অনেকসময় অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থাকলে নির্দিষ্ট বয়সের আগেই ছানি ধরা পড়ে। এছাড়া আঘাত জনিত কারণে লেন্সের অবস্থান পাল্টে গিয়েও ছানির সমস্যা আসতে পারে। একে আমরা বলি ট্রমাটিক ক্যাটারাক্ট। বাচ্ছাদের ক্ষেত্রেও আমরা দেখি জন্মগত ছানি থাকে। এছাড়াও কিছু কিছু হরমোনাল রোগের ফলে কয়েকটি ক্ষেত্রে ছানির সমস্যা আসে।

ছানির শনাক্তকরণ

বয়সকালে চোখের স্বচ্ছ লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ফলে আলো ঠিকঠাক প্রবেশ করতে পারে না। ফলে যে কোনও জিনিসই ঝাপসা দেখায়। অর্থাত, চোখে ঝাপসা দেখাই ছানির প্রধান লক্ষণ। অনেকে এসে বলেন, আলোর চারধারে রামধানুর মতো দেখছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছানির ফলে চোখে জল জমে যায়। তার ফলেই এটা হয়। আবার অনেকে বলেন, সব জিনিস দুটে দুটো দেখছি। এটাও জল জমার ফলে হয়। অনেকসময় দেখা যায় দীর্ঘদিন ধরে চশমা ব্যবহার করছেন, এরকম কেউ হঠাত করেই বলেন, চশমা ছাড়াই কাছের জিনিসটা পরিস্কার দেখছেন। চিকিতসার ভাষায় একে বলা হয় সেকেন্ড সাইট। এটাও কিন্তু ছানির একটা লক্ষণ। কারণ লেন্সটা অস্বচ্ছ হয়ে যাওয়ায়, আলোর রিফ্লেক্টিভ এন্ডটা পাল্টে গিয়ে অনেকসময় পাওয়ারটা নিউট্রাল হয়ে যায়। তবে এটা কিন্তু স্থায়ী হয়না।

চোখে ছানি পড়ার চিকিৎসা কি?

প্রথমেই বলা প্রয়োজন ওষুধ দিয়ে ছানির চিকিৎসা হয় না। ছানির একমাত্র চিকিতসা হল অপারেশন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা চশমার সাহায্যে দৃষ্টিশক্তিটা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু অপারেশনই একমাত্র স্থায়ী সমাধান।

বছরের পর বছর ধরে ছানির অপারেশানে প্রচুর পরিবর্তন ঘটেছে। বহুকাল আগে একটা সময় ছিল, যখন অনেকটা কেটে ছানি অপারেশান করা হত। তখন অপারেশানের পর অন্তত দু-তিন সপ্তাহ রোগীকে শুয়ে থাকেত হত। তখন শুধু লেন্সটা বের করে নিয়েই সেলাই করে দেওযা হত। তারপর রোগীকে সারাজীবন একটা মোটা কাঁচের চশমা ব্যবহার করতে হত। এরপর এল লেন্স বের করে সেই জায়গায় কৃত্রিম লেন্স বসিয়ে দেওযার প্রক্রিয়া। এক্ষত্রেও প্রথম দিকে অনেকটা কেটে অপারেশন হত। তারপর আস্তে আস্তে কম কেটেই অপারেশন শুরু হল। এরপর এল স্টিচলেস সার্জারি। এক্ষেত্রে সেলাইয়ের আর দরকার পড়ত না। এখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সার্জারি করা হয়।

তবে ছানির চিকিতসায এখন যেটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে তাকে আমরা বলি ফেকো সার্জারি বা ফেকো ইমালসিফিকেশান। এই পদ্ধতিতে কাটাকাটির দরকারই হয় না। কর্ণিয়ার মধ্যে একটা, আর চোখের দুপাশে দুটো ফুটো করে, সেখান থেকে মেশিন ঢুকিয়ে, লেন্সের ওপরের অংশটাকে বাদ দেওয়া হয়। তারপর ওই বাদ দেওয়া অংশটাকে মেশিনের সাহায্যেই টুকরো টুকরো করে কেটে বের করে আনা হয়। এরপর মেশিনের সাহায্যেই আবার একটা লেন্স বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে সুবিধা হল এই যে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি থাকার দরকার নেই। অপারেশান করেই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। খুব তাড়াতাড়ি কাজেও যোগ দিতে পারেন।

ফেকো সার্জারিও আস্তে আস্তে আরও উন্নত হচ্ছে। আরও আধুনিক সব লেন্স আসছে। সব মিলিযে ছানি অপারেশন এখন অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।

অনেকেই অপারেশান শুনলেই ভয় পান। কেউ যদি অপারেশান না করে ফেলে রাখেন সেক্ষেত্রে কি সমস্যা হতে পারে।

অনেকেরই অপারেশন নিযে একটা ভীতি আছে। অপারেশন করাতে চান না। ছানির ক্ষেত্রে কিন্তু অপারেশন না করে ফেলে রাখলে পরবর্তীকালে বড় সমস্যা হতে পারে। সহজ কথায় বলতে গেলে, ছানিটা ফেটে যায়। আসলে হাইপার ম্যাচিওর হয়ে গিয়ে ক্যাপসুলের ভেতরে লিক করতে পারে। ফলে চোখের প্রেসার বেড়ে যায়, হঠাত করেই চোখে প্রচন্ড জ্বালা ষন্ত্রনা শুরু হয়। এটা কিন্তু একটা অ্যাকিউট এমার্জেন্সি। এর ফলে চোখের দৃষ্টি চিরতরে হারাতে হতে পারে। আরও একটা বিষয় হতে পারে। দীর্ঘদিন চিকিতসা না করে ফেলে রাখলে লেন্সের মধ্যে জল জমে লেন্সটা ফুলে যায়। সেখান থেকেও চেখের পাওয়ার বেড়ে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।

ছানির সমস্যা নিয়ে পাঠকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ

চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর বয়সের পর চোখে দেখার সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।ডায়াবেটিস থাকলে আরও সতর্ক হন এবং ডাক্তারবাবু যদি অপারেশনের পরামর্শ দেন, তাহলে দ্রুত অপারেশন করিযে নিন। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ছানির অপারেশন এখন খুবই সহজে হচ্ছে। সুতরাং অযথা ভয় পেয়ে বা বিষয়টাকে অবহেলা করে বিপদ ডেকে আনবেন না।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago