চোখ উঠলে বা কনজাংটিভাইটিস হলে চিকিৎসা কী?

Published by

কনজাংটিভাইটিস কী ?

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি উদ্রেককারী পদার্থ যেমন ফুলের রেণু, ধুলো, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি থেকে কনজাংটিভায় প্রদাহ হলে তাকে কনজাংটিভাইটিস বলে। আইটিস কথার অর্থ হল প্রদাহ। এই রোগকেই আমরা ‘চোখ ওঠা’ বা ‘জয় বাংলা’ ইত্যাদি নামে ডেকে থাকি।

আমাদের চোখ বা অক্ষি গোলকের দু’টি প্রধান অংশ। ১) কালো বা বাদামি রঙের কর্নিয়া বা চলতি কথায় চোখের মণি। ২) সাদা অংশ যার নাম স্ক্লেরা। এই স্ক্লেরাকে ঘিরে রাখে একটি প্রতিরক্ষামূলক স্তর যার নাম কনজাংটিভা। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা যে কোনও ধরনের জীবাণুর হাত থেকে প্রাথমিকভাবে চোখকে রক্ষা করে কনজাংটিভা। টুকটাক চোট আঘাত থেকেও চোখকে রক্ষা করে কনজাংটিভা।

কনজাংটিভাইটিস কাদের হয়?

যে কোনও বয়সে, যে কারও এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অবশ্য দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা উন্নত থাকলে এবং চোখের জল স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে বেরলে ইনফেকশন তাড়াতাড়ি সেরে যায়। মনে রাখতে হবে, চোখের জল জীবাণুকে দেহের বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। কোনও কারণে চোখের জল নিঃসরণের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত হলে ও ইমিউনিটিতে ঘাটতি হলে একজন ব্যক্তির চোখ জীবাণু দ্বারা দ্রুত সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কীভাবে হয় সংক্রমণ?

আগেই বলা হয়েছে, কনজাংটিভাইটিস যে কোনও বয়সে যে কারও হতে পারে। কনজাংটিভাইটিস অত্যন্ত সংক্রামক। অর্থাৎ দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে।

সংক্রমণ ছড়ায় কীভাবে?

একজন ব্যক্তির চোখে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে ওই ব্যক্তি কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হন। এরপর রোগী কোনও কারণে চোখে হাত দিলে এবং হাত না ধুয়ে সেই হাত দিয়েই অন্য একজন সুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে হ্যান্ডশেক বা করমর্দন করলে ওই ব্যক্তির হাতে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া লেগে যায়। ওই ব্যক্তি এরপর হাত না ধুয়ে চোখে হাত দিলে তাঁরও কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একইভাবে কনজাংটিভাইটিসের রোগী চোখে হাত দেওয়ার পর সেই হাত দিয়ে চেয়ার-টেবিল স্পর্শ করলে ওই চেয়ারে-টেবিলে জীবাণু আটকে যায়। কোনও সুস্থ ব্যক্তি ওই চেয়ারে বা টেবিল ব্যবহারের পর হাত না ধুয়ে চোখে হাত দিলেও ঘটে যেতে পারে সংক্রমণ। এমনকী কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য তোয়ালে, কাপড় ব্যবহার করলেও সুস্থ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারেন এই রোগে।

সুপার ইনফেকশন

ভাইরাল কংজাংটিভাইটিস অত্যন্ত ছোঁয়াচে। কোনও পরিবারে একজন ব্যক্তির কনজাংটিভাইটিস হলে ওই পরিবারের সকলেই কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। ওই বাড়ির আশপাশে বাস করা অন্যান্য পরিবারেও কনজাংটিভাইটিস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস অবশ্য এতখানি দ্রুত নাও ছড়াতে পারে। মুশকিল হল বাইরে থেকে সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় যে কোনটি ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস আর কোনটি ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস। নানা সময়েই দেখা যায় ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস দিয়ে রোগ শুরু হয় আর সেই সুযোগে চোখে ব্যাকটেরিয়াও প্রবেশ করে। এইভাবে হয় সুপার ইনফেকশন।

কনজাংটিভাইটিসের উপসর্গ

• চোখ লাল হয়ে যায়।

• চোখ চুলকাতে পাকে।

• চোখ কটকট করতে পারে।

চোখের জল বেশিমাত্রায় বেরানো ।

• রোদে বেরলে কষ্ট হয়।

• ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে চোখ যত না বেশি লাল হয় তার চাইতেও বেশি চোখে পিচুটি কাটে। এমনকী সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর পিচুটির কারণে চোখের পাতা খোলা যায় না।

কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসা

ভাইরাল ইনফেকশনজনিত কনজাংটিভাইটিসের আলাদা করে চিকিৎসার কিছু নেই। কয়েকদিন উপসর্গ থাকে আর নিজের থেকেই চলে যায়। এক্ষেত্রে রোগীকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য তাঁকে চোখে লুব্রিকেটিং আই ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। লুব্রিকেটিং আইড্রপ আসলে কৃত্রিম চোখের জল। এই ধরনের আই ড্রপ চোখ থেকে দ্রুত ভাইরাস বের করে দিতে সাহায্য করে। তবে ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিসের ক্ষেত্রে রোগীকে লুব্রিকেটিং আইড্রপের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক আই ড্রপও দিতে হয়।

জটিলতা

কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ভাইরাস চোখের মণিকেও আক্রান্ত করে। সময়ে চিকিৎসা না হলে সেক্ষেত্রে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তবে কার জটিলতা দেখা দেবে আর কার দেবে না তা আগে থেকে বলা যায় না। তাই কনজাংটিভাইটিস হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। কারণ কার জটিলতা হবে কার হবে না তা আগে থেকে বলা যায় না। ফলে সময়ে চিকিৎসা না করালে কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাতে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে পারে।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

ডায়াবেটিস, কিডনির রোগী, ক্যান্সারের রোগী, শিশুদের এই ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

সংক্রমণ হলে কী কী সাবধানতা নেবেন?

রোদে বেরতে হলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। এই সময় নদী, পুকুর, স্যুইমিং পুলে স্নান করবেন না। নিজের থেকে চিকিৎসা করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago