হেমোফিলিয়া নামের মত রোগটিও হল একটি বিরল ঘটনা, যা সারাবিশ্বে দশ হাজার লোকের মধ্যে একজনের হয়ে থাকে। হেমোফিলিয়া কি? হিমোফিলিয়া রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসাও বা কিভাবে হয় বিস্তারিত জেনে নিন।
বিষয়টি হল, কোনোরকম আঘাত লাগলে বা কেটে গেলে রক্তক্ষরণ হয়েই থাকে, কিন্তু যখন এই রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না এবং দীর্ঘসময় ধরে হতেই থাকে, সেই রোগকে বলা হয় হেমোফিলিয়া। রক্তে ১৩ প্রকারের রক্তজমাটকারী প্রোটিন থাকে, যা প্লেটলেটের (ছোটো রক্তকোষ যা বোনমেরো তে তৈরি হয়) সাথে যুক্ত হয়ে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, এখন এই রক্তজমাটকারী প্রোটিন বা clotting factors -এর পরিমান কম থাকলে রক্ত স্বাভাবিকভাবেই জমাট বাঁধতে দেরি হয়, তখন এই রোগ পরিলক্ষিত হয়। এই ব্যাধির রোগীরা ইন্টারনাল ব্লিডিং এর মুখোমুখি হতে পারে, যার কারণে অস্থিসন্ধিগুলোতে যেমন হাঁটু,কনুই এ চূড়ান্ত ব্যাথা হয় যা থেকে প্রাণহানি হতে পারে।
হেমোফিলিয়া সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে, যথা A, B এবং C।
হেমোফিলিয়া A হল সবছেয়ে কমন। এই রোগটি রক্তে ফ্যাক্টর VIII এর অভাব থাকলে হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, ১০ জন হেমোফিলিয়া রোগীর মধ্যে ৮ জন এই প্রকারের শিকার। হেমোফিলিয়া B কে বলা হয় খ্রিস্টমাস ডিজিস, যা ফ্যাক্টর IX এর অভাবে হয়ে থাকে। হেমোফিলিয়া C যাদের হয়ে থাকে তাদের উপসর্গ প্রায় দেখা যায়না বললেই চলে এবং এটি এই রোগের মধ্যে সবচেয়ে বিরল ঘটনা। এটা হয়ে থাকে ফ্যাক্টর XI এর অভাবে। এইপ্রকার হেমোফিলিয়ার রোগীদের সাধারণত রক্তপাত হয়না সামান্য ঘটনায়, তবে কোন সার্জারি হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে।
হেমোফিলিয়া সাধারণত জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে, এবং খুব কম কেস এমন দেখা যায় যেখানে হেমোফিলিয়া সদ্যজাত শিশুর মধ্যে পরিলক্ষিত হয়, একে অ্যাকুয়ারড হেমোফিলিয়া বা acquired hemophilia বলা হয়। এটি হয়ে থাকে যাদের ইম্যুনিটি সিস্টেম, VIII বা IX ফ্যাক্টরকে আক্রমন করে।
মানুষের শরীরে কোয়াগ্যুলেশন ক্যাসকেড নামে একটি পদ্ধতি হয়ে থাকে, যা রক্তপাতের সময় রক্তকে আসতে আসতে জমাট বাঁধতে এবং ক্ষরন বন্ধ হতে সাহায্য করে। শরীরের এই বিভিন্ন ক্লটিং ফ্যাক্টরগুলির অভাব ঘটলে রক্তপাত বন্ধ হয়না। তবে এর কারণ জেনেটিক হয়ে থাকে, অর্থাৎ পরিবারে আগে কারোর থাকলে তা পরবর্তী জেনারেশনেও চলে আসে। সাধারণত এই বডি ফ্যাক্টরগুলি অর্থাৎ VIII, IX, XI থাকে X ক্রোমোজোমের মধ্যে।
সাধারণত প্রত্যেকেই তাদের বাবা-মায়ের থেকে দুটি করে ক্রোমোজোম পেয়ে থাকে। পুরুষরা পেয়ে থাকে মায়ের থেকে X ক্রোমোজোম এবং বাবার থেকে Y ক্রোমোজোম, আর স্ত্রী-রা বাবা এবং মা উভয়ের থেকেই পায় X ক্রোমোজোম। যেহেতু এই রোগ মূলত X ক্রোমোজোম থেকেই তৈরি হয়, তাই বাবাদের থেকে ছেলের মধ্যে এই রোগ আসতে পারেনা। সুতরাং,ছেলেদের ক্ষেত্রে তা মায়ের থেকেই আসা সম্ভব। যেসব মহিলাদের একটি X ক্রোমোজো্ম পরিবর্তিত হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। যারা ‘কেরিয়ার ওমেন’ হয়ে থাকেন অর্থাৎ যার জিন পরিবর্তিত হয় এবং পর্যাপ্ত জিন ফ্যাক্টর থাকার কারণে নিজের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়না ,কিন্তু সে তার পরবর্তী জেনারেশনকে এই রোগ অতিবাহিত করতে পারেন।
লক্ষণগুলি ক্লটিং ফ্যাক্টর গুলির প্রকারের উপর নির্ভর করে। যাদের এই ফ্যাক্টরের অভাব সামান্য থাকে তাদের ট্রমার সময় রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকতে পারে। আবার, যাদের ক্লটিং ফ্যাক্টরগুলির অভাব বেশি পরিমান থাকে, সেক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তপাত হয়। হেমোফিলিয়ার লক্ষণগুলি হলঃ
মেডিক্যাল এমারজেন্সির দরকার হয় যখন নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায়
হেমোফিলিয়া A এবং B বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জিন থেকেই পরিবাহিত হয়, এবং এটি মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। হেমোফিলিয়া C আবার পুরুষ এবং স্ত্রী উভয়ের মধ্যেই দেখা যায়। অস্থিসন্ধি অতিরিক্ত রক্তপাতের ফলে জখম হতে পারে। অনেকসময় ইন্টারনাল ব্লিডিং থেকে নিউরোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি কেউ রক্ত দান করেন এবং তার মধ্যে এই রোগ আছে তাহলে যাকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে তার শরীরে হেপাটাইটিস এর মতো ইনফেকশন হতে পারে ।
প্রাথমিকভাবে ডাক্তাররা রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করেন কোন প্রকারের হেমোফিলিয়া রোগীর শরীরে আছে কিনা। যদি রক্তের প্লাসমায় ক্লটিং ফ্যাক্টরের পরিমান ৫-৪০ শতাংশ হয়ে থাকে, তাহলে এটি হল মাইল্ড হেমোফিলিয়া । মডারেট হেমোফিলিয়া হল যাদের প্লাসমায় ক্লটিং ফ্যাক্টরের পরিমান ১-৫ শতাংশ। হেমোফিলিয়া বেশি আকারে হলে তাদের সেভেয়ার হেমোফিলিয়া বলে এবং সেক্ষেত্রে ফ্যাক্টরগুলির পরিমান ১ শতাংশেরও কম হয়ে থাকে।
যেহেতু এই রোগটি জেনেটিক তাই সম্পূর্ণ আকারে নির্মূল হয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, উপযুক্ত মেডিকেশনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। হেমোফিলিয়া A যাদের হয়ে থাকে, তাদের ডেসমোপ্রেসিন নামক হরমোন শরীরে ইঞ্জেক্ট করতে হয়, এটা করা হয়ে থাকে ক্লটিং ফ্যাক্টর গুলিকে উত্তেজিত করে তোলার জন্য। হেমোফিলিয়া B এর চিকিৎসা হয়ে থাকে রোগীর দেহে রক্ত সরবরাহের মাধ্যমে , অনেকসময় কৃত্রিম ভাবেও ক্লটিং ফ্যাক্টরগুলিকে রক্তে চালিত করা হয় , যাকে বলা হয় রিকোমব্যায়ান্ট ক্লটিং ফ্যাক্টর। হেমোফিলিয়া C প্লাসমা ইনফিউসনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
যেহেতু হেমোফিলিয়া মা এর থেকে তার সন্তানের মধ্যে পরিবাহিত হয়, তাই সিশুর মধ্যে এই ব্যধি আছে কিনা বোঝার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যদি ইনভিট্রো ফারটিলাইজেশন ( IVF) পদ্ধতিতে শিশুর জন্ম হয়ে থাকে তাহলে পরীক্ষা করে হেমোফিলিয়া যুক্ত ডিম্বাণুগুলো আলাদা করে দেওয়া হয়।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment