স্পন্ডাইলোসিস: ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা

Published by

স্পন্ডাইলোসিসের উপসর্গ বিভিন্ন সময় পরিচিত মানুষ, আত্মীয়স্বজনের মধ্যেই দেখা যায় ঘাড়ে ব্যথা। অনেকেই বলেন ঘাড়ে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। ডাইনে-বামে ঘাড় ঘোরাতে পারছি না ইত্যাদি। ঘাড় ওপর–নীচে করতেও সমস্যা হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ঘাড়ের যে কোনও মুভমেন্টেই সমস্যা দেখা যায় এবং রোগী ঝুঁকে কাজ করতে গেলে ব্যথার চোটে চোখে অন্ধকার দেখেন! এগুলিই হল সাধারণভাবে স্পন্ডাইলোসিসের লক্ষণ।

স্পন্ডাইলোসিস কতরকম হতে পারে?

স্পন্ডাইলোসিস দুই রকম— 1. একধরনের স্পন্ডাইলোসিস হল ডিজেনারেটিভ অসুখ। 2. আর একধরনের সমস্যা হল অটো ইমিউন সমস্যা।

ডিজেনারেটিভ স্পন্ডাইলোসিস: আমাদের ঘাড় থেকে শুরু করে হিপ পর্যন্ত অংশে রয়েছে শিরদাঁড়া। শিরদাঁড়া আবার গঠিত হয়েছে একাধিক ছোট ছোট বাক্সের মতো হাড়ের ওপর হাড় চেপে। এই দু’টি বাক্সের মধ্যে আবার থাকে নরম জেলির মতো অংশ পূর্ণ ডিস্ক। এই ধরনের ডিস্কগুলিকে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক বলা হয়। এই ডিস্ক থাকার কারণেই আমরা কোমর বেঁকাতে পারি। ডিস্কের জন্যই কাজ করার সময় আমাদের কোমরের ঘর্ষণ রোধ করা সম্ভব হয়। একই কথা প্রযোজ্য ঘাড়ের ক্ষেত্রেও।

শিরদাঁড়ার ঘাড়ের অংশ বা সার্ভাইক্যাল অংশে সাতটি এইরকম ভার্টিব্রা থাকে। সবচাইতে ওপরের ভার্টিব্রাটি যুক্ত থাকে মাথার অক্সিপিটাল বোন-এর সঙ্গে। এই অংশকে বলা হয় অ্যাটলাস।

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ে যে অস্থিসন্ধিগুলি আছে সেখানে ক্ষয় হতে থাকে। আবার ভারী কাজ করার জন্যও ঘাড়ের দু’টি অস্থিসন্ধির মাঝখানে ডিস্ক সরে যেতে পারে যাকে বলে ডিস্ক প্রোলাপ্স। ভারী কাজ বলতে মাথায় করে মোট বওয়ার মতো কাজের কথা বলা হচ্ছে। অতএব ক্ষয় হোক বা ডিস্ক প্রোলাপ্স— একটি ভার্টিব্রা অন্য ভার্টিব্রার উপর চেপে বসে। সঙ্গে চাপ দেয় সন্নিহিত নার্ভের উপর। শুরু হয় নানা ধরনের উপসর্গ।

স্পন্ডাইলোসিসের উপসর্গ

কারও কারও হাতে ব্যথা হয়, হাতে একটা অবশ ভাব আসতে পারে, হাতের পেশিগুলিতে দুর্বলতা আসতে পারে। একইসঙ্গে ঘাড়ে স্থানীয়ভাবে শক্তভাব আসতে পারে। একইরকমভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে যাঁদের শরীরে ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি দেখা যায় (এমনটি হয় রোদে কম বেরনর জন্য) তাঁদেরও এমন হতে পারে। এই বিষয়টির সঙ্গে বয়সের কোনও যোগ নেই বলে কম বয়সেও এই ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন একজন ব্যক্তি। অটোইমিউন সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস—

শরীরের কোনও বাহ্যিক কারণের জন্য এই ধরনের স্পন্ডাইলোসিস হয় না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সমস্যার কারণেই এই ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। এই রোগের নাম অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিস।

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিস-এর ক্ষেত্রে জিনগত কারণও খানিকটা দায়ী থাকে। দেখা যায় পরিবারের কোনও পুরুষের অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিস থাকলে তা পরবর্তী প্রজন্মের সন্তানকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ বাবার বাড়ির দিকে বাবা-কাকা, মায়ের বাড়ির দিকে মামার অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিস থাকলে ওই পরিবারের পরবর্তী সুস্থ প্রজন্ম আক্রান্ত হতে পারে অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পান্ডাইলোসিসে।

এক্ষেত্রে রক্তে এইচএলএবি২৭ অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি প্রমাণ করা যেতে পারে। এটি একটি জিন টেস্ট। টেস্ট পজিটিভ আসলে বোঝা যায় ঘাড়ে ব্যথার সমস্যা হচ্ছে অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিসের কারণে।

প্রশ্ন হল এই অসুখে হয়টা কী? দু’টি ভার্টিব্রার মাঝে যে লিগামেন্ট থাকে তাকে আপন স্থানে আটকে রাখে তাদের পাশে থাকা বিভিন্ন লিগামেন্ট।

অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিসে লিগামেন্টগুলি ক্রমশ অনমনীয় হয়ে পড়ে ও হাড়ের মতো শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে ঘাড়ে এমনই অনমনীয় ভাব তৈরি হয় যে ঘাড় আর ঘোরে না। ঘাড় ঘোরাতে হলে সমগ্র শরীরকেই ঘোরাতে হয়।

বিশেষ উপসর্গ

  • ব্যথা বাড়ে সকালের দিকে।
  • প্রথমদিকে কোমরের যে স্যাক্রোআইলিয়াক জয়েন্ট থাকে (স্যাক্রাম এবং ইলিয়াম হাড়ের অস্থিসন্ধি) সেখান থেকে সমস্যার সূত্রপাত ঘটে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে অসুখ শুরুই হয় কোমরে ব্যথা দিয়ে। এরপর ধীরে ধীরে রোগ ওপরের দিকে উঠতে থাকে।

তবে সবসময় যে একইরকমভাবে রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এমন নয়। ঘাড়েও অনমনীয় ভাব তৈরি হতে পারে।

সেক্ষেত্রে রোগী ক্রমশ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সারা শরীরের মুভমেন্টেই বিশে ধরনের জটিলতা তৈরি হয়।

বিশেষ করে মাথা থেকে কোমর অবধি যে হাড়ের কাঠামো তার সচলত-সক্রিয়তা অনেকাংশেই যায় কমে। এছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে থাকতে পারে জ্বর, প্রচণ্ড কোমরে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, চোখে ইউভিআইটিস নামে সংক্রমণও হয় কারও কারও (চোখ লাল হয়ে যায়)। অনেকসময় পেটে থাকে সমস্যা যাকে বলে ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ ইত্যাদি।

অর্থাৎ এইসকল আনুষাঙ্গিক সমস্যাও দেখা যেতে পারে।

তবে এই রোগের চিকিৎসা খুব ভালো। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করালে অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একটানা চিকিৎসা করালে রোগী সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মতোই জীবনযাপন করতে পারেন।

তবে মনে রাখতে হবে বয়স বা ক্ষয়জনিত স্পন্ডাইলোসিসে কিন্তু সমস্যা পুরোপুরি যায় না। কিছু হলেও সমস্যা শরীরে লেগেই থাকে।

সুতরাং দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা করানোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না।

বয়স

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস ক্ষয়জনিত অসুখ। তাই দেখা যায় সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর শুরু হয়। অন্যদিকে অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিস জেনেটিক ডিজিজ, তাই অসুখের বহিঃপ্রকাশ অনেক আগেই হতে পারে। এমনকী ১৫-২০ বছর বয়সে অসুখ শুরু হয়ে যায়।

স্পন্ডাইলোসিসের চিকিৎসা

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস-এর চিকিৎসা হল বিশ্রাম এবং ওষুধ সেবন। বিশ্রাম নেওয়ার সঙ্গে রোগীকে সার্ভাইক্যাল কলার পরতেও হতে পারে। এরপর করাতে হয় ফিজিওথেরাপি। তৃতীয় ধাপে থাকে অপারেশন। অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলোসিসের ক্ষেত্রে

সাধারণ ওষুধ খেলেই সমস্যা মেটে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago