মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির উপায় নবজাতকের মায়েরা খুঁজে থাকেন। একটা শিশুর জন্য তার মায়ের বুকের দুধ হল শ্রেষ্ঠ খাবার। শিশুর জন্য মায়ের দুধের চেয়ে ভাল খাবার কিছু হতে পারে না। এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক আছে, যা শিশুর শরীরে ইনফেকশন রোধে সাহায্য করে থাকে । যে-সব শিশু মায়ের দুধ খাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। অনেক সময় শিশু মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পায় না। প্রাকৃতিক কিছু উপায়ে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া বুকের দুধ বৃদ্ধির সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী উপায় যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এজন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমানে জল পান করুন।প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস জল পান করুন। এটি প্রাকৃতিকভাবে বুকের দুধ বৃদ্ধি করবে।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের ওয়েবসাইটে বলা আছে, “যতদিন আপনার পক্ষে সম্ভব ততদিন আপনি আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন”। এতে কোন ক্ষতি নেই বরং এটা মা ও তাঁর শিশুর সম্পর্ককে আরও সুন্দর গড়ে তোলে ।
অনেক মা বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে চান কারণ তারা মনে করেন যে তারা বাচ্চাদের প্রয়োজনীয়তার জন্য যথেষ্ট দুধ উৎপাদন করছেন না। এই উদ্বেগটি সাধারণ এবং আপনি এটা জেনে নিশ্চিত হন যে এই উদ্বেগ আপনার একার হচ্ছে না। নতুন মা তাদের সন্তানের স্বাস্থ্য ও আরাম সম্পর্কে চিন্তিত হন এবং স্তন পানকারী বাচ্চাদের যথেষ্ট পরিমাণে দুধের প্রয়োজন হয় যেহেতু দুধই তাদের একমাত্র পুষ্টির উৎস।
পরিচর্যার সময়, মায়েদের খাদ্য সম্পর্কিত অনেক যত্ন নেওয়া উচিত কারণ এটি কেবলমাত্র স্তনের দুধের পরিমাণ এবং গুণমানকে প্রভাবিত করে না, মায়ের প্রসব পরবর্তী আরোগ্যলাভকেও প্রভাবিত করে। খাদ্যতালিকা তৈরির সময় একজন নিউট্রিশনিস্টের বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, যাতে তিনি বুকের দুধ বাড়াতে পারে এমন খাদ্যের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলির সামঞ্জস্য রেখে তালিকা প্রস্তুত করতে পারেন।
বুকের দুধের সরবরাহ কম কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায় হল আপনার বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পাচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য করা।
মাতৃদুগ্ধের সঠিক সরবরাহ আছে কিনা তা জানার শ্রেষ্ঠ উপায় আপনার শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা। আপনার শিশুর সঠিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে নিয়মিত তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তবে, শিশুর জন্মের পরে পরেই ওজন হ্রাস পাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। প্রথম পাঁচ বা ছয় দিনের মধ্যেই এই পরিস্থিতি ঠিক হতে থাকবে এবং চৌদ্দ দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চাটি তার জন্মের সময়কার ওজন ফিরে পাবে।
আপনি যদি আপনার শিশুর ওজনের বিষয়ে নিশ্চিত না হন, তবে আপনার যথেষ্ট মাতৃদুগ্ধ তৈরি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখুন।
নিম্নে বর্ণিত লক্ষণগুলির অর্থ মাতৃদুগ্ধ কমে যাওয়া নয়, যদিও আপনার মনে হতে পারে যে সেগুলি কোনো গুরুতর সমস্যার নির্দেশক :
বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপনি যা করতে পারেন তা এখানে দেওয়া হল:
যদিও কোনো গবেষণায় প্রমাণিত হয় নি যে নিম্নোক্ত খাবারগুলি মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবুও এই খাবারগুলি মায়ের মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধি করার জন্য বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহার করা হয়েছে। এই খাবারগুলি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত এবং এগুলি কখনো পরিপূরক খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
১. সবুজ শাক সবজি
পালংশাক, পাতাকপি, মেথিপাতা, সরষে শাক জাতীয় সবুজ শাক–সবজি লৌহ, ক্যালসিয়াম এবং ফোলেটের মত খনিজগুলির বড় উৎস। এগুলিতে প্রচুর ভিটামিন থাকে এবং মাতৃদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বলে মনে করা হয়। দৈনিক ভিত্তিতে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তত এক প্রস্থ সবুজ শাক সবজি থাকা উচিত।
২. মেথির বীজ
সারা পৃথিবীতে মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য বহু প্রজন্ম ধরে মেথি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ওমেগা -3 ফ্যাট সমৃদ্ধ যা আপনার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিটা–ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম এবং লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য হিসাবে আপনি মেথি পাতাও ব্যবহার করতে পারেন। চা বানানোর সময়ও মেথি বীজ ব্যবহার করা যেতে পারে বা সবজির তরকারীতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মেথি দেওয়া হয় রুটি এবং পুরী বা কচুরিতে।
বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি, গ্যাস এবং পেটের ব্যাথা কমাতে মৌরি ব্যবহার করা হয়। ধারণা করা হয় যে এইসকল বীজের গুণাগুণ বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে পৌঁছায়। আপনি রাতে এক গ্লাস জলে এক চা চামচ মৌরি ভিজিয়ে রাখতে পারেন এবং সকালে তা পান করতে পারেন অথবা চা এর মধ্যে দিয়েও পান করতে পারেন।
বুকের দুধ বাড়ানোর জন্য বহু লোক তিলের বীজ বা তিল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন এই বীজ ক্যালসিয়ামের একটি অসাধারণ দুগ্ধ বর্জিত উৎস যা আপনার শিশুর বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি প্রসবের পরে, মায়ের কর্মক্ষমতা ফিরে পেতে এবং স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ক্যালসিয়াম বিশেষ প্রয়োজনীয়। আপনি আপনার দৈনন্দিন রান্নার মধ্যে তিল ব্যবহার করতে পারেন বা এটি দিয়ে মিষ্টি খাবার তৈরি করতে পারেন যেমন লাড্ডু এবং প্রতিদিন একটি করে খেতে পারেন।
রসুন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি, হৃদরোগ প্রতিরোধ, এবং প্রতিষেধক বৈশিষ্ট্য থাকার জন্য সুপরিচিত। রসুন বুকের দুধের স্বাদ এবং গন্ধকে প্রভাবিত করতে পারে তাই এটি সীমিত ও সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হবে।
৬. দুধ
দুধ, বিশেষ করে গরুর দুধ ফোলিক এসিড, ক্যালসিয়াম এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দিয়ে ভর্ত্তি থাকে, এটি কেবল দুধের উৎপাদনেই সহায়তা করে তা নয়, এর সাথে দুধকে আপনার শিশুর জন্য সুষমভাবে পুষ্টিকর করে তোলে। বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে দিনের মধ্যে দুবার এক গ্লাস করে দুধ পান করা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. বীট
অন্যতম সেরা একটি পুষ্টিকর সবজি, বীট একটি রক্ত পরিশোধক, ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর খনিজে সমৃদ্ধ যেগুলির মধ্যে সেইসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, এছাড়াও বীট আপনার বুকের দুধে শিশুর রক্ত পরিশোধন বৈশিষ্ট্য থাকাও নিশ্চিত করে।
৮. এপ্রিকট বা খুবানি
এপ্রিকট বা খুবানি হরমোন জনিত ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে থাকে এবং এটি প্রসবের আগে ও পরে উভয় সময়েই খাওয়া উচিত। এটি বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ও তন্তুবহুল বা আঁশযুক্ত খাদ্য আপনার সকালের ওটমিল খাদ্যতালিকায় এটি যোগ করুন।
আপনি যদি তাজা স্যালমন পান তবে আপনার ডায়েটে এটি যোগ করা উচিত। এটি ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড বা ইএফএ সমৃদ্ধ যা একটি মহাখাদ্য বলে মনে করা হয় এবং বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এটা দুধকে আরো পুষ্টিকর করে তোলে। আপনি বিভিন্ন উপায়ে সালমন মাছ খেতে পারেন – সিদ্ধ করা, গ্রিল করা, বা প্যানে ভেজে।
শতমূলী একটি উচ্চ তন্তুময় বা আঁশযুক্ত ভিটামিন এ এবং কে সমৃদ্ধ খাদ্য। এটি মাতৃদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্যকারী হরমোনকে উদ্দীপিত করে। একটি সুস্বাদু খাবার বা জলখাবার বানাতে এটি অন্য সবজির সাথে মিলিতভাবে একটি প্যানে সিদ্ধ করে বা হালকা সাঁতলে নিন ।
গাজর মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে এবং এটি ভিটামিন এ সমৃদ্ধ যা বুকের দুধের মান উন্নত করে। স্যালাডের আকারে কাঁচা গাজর খান অথবা সকালে এক কাপ রস করে প্রাতরাশের সাথে পান করুন। গাজর বিশ্বের সর্বত্রই পাওয়া যায় এবং এটি বুকের দুধ বৃদ্ধি করার জন্য সেরা খাবারগুলির মধ্যে একটি।
পরিচর্যার সময় বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি একটি কঠিন বিষয় হতে পারে, এটা বোঝা প্রয়োজন যে খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়,প্রত্যেকটি ডাক্তার কমপক্ষে 30 মিনিট ব্যায়াম করার সুপারিশ করেন যা মায়ের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন ভালো করতে সাহায্য করে। এটি দারুণভাবে সুপারিশ করা হয় যে, আপনি ধ্যান করুন এবং শান্ত থাকার ক্রিয়াকলাপগুলি খুঁজে বের করুন, মানসিক চাপ কম বুকের দুধ উৎপাদনের প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি।প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতা দুধ সরবরাহ হ্রাস করার জন্য পরিচিত। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য চাইতে পরামর্শ দেওয়া হয়। মনে রাখবেন, স্তন্যদুধ বৃদ্ধির জন্য খাদ্যের পরিকল্পনা করার সময়, আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আপনার শরীরের অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এটি আপনার জন্য অপরিহার্য যে আপনি সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা বজায় রাখেন যার মধ্যে স্তন্যদুধ বাড়াতে সহায়তা করে এমন উরপাদানগুলিও থাকবে, কিন্তু আপনার পুরো খাদ্যতালিকা যেন কেবলমাত্র বুকের দুধ সরবরাহ বৃদ্ধি করার জন্য ফোকাস করে তৈরি না হয়। সবার প্রথমে নিশ্চিত করুন যে আপনি যেন নিয়মিতভাবে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলেন এবং নিশ্চিত করুন যে আপনি একজন পুষ্টি বিশেষজ্ঞের সাহায্য চাইবেন যিনি আপনার প্রয়োজনীয় খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করে দেবেন যা আপনার সমস্ত প্রয়োজন পূরণ করতে সহায়তা করবে ।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment