বাচ্চাকে কথা বলানোর উপায়

Published by

একটি বাচ্চা জন্মানোর পরে হাত-পা নড়ায়, এক বছর পরে হাঁটতেও শেখে শিশুর এভাবে হাত-পা নাড়াচাড়া করার মতো বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্স নামক অংশ থেকে। অন্যদিকে কানে শোনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অংশটির নাম অডিটরি কর্টেক্স। কথা বলার জন্য দায়ী অংশটির নাম স্পিচ কর্টেক্স। অর্থাৎ মস্তিষ্কের একই অংশ থেকে হাত ও পায়ের নাড়াচাড়া করার সঙ্গে কানে শোনা ও কথা বলাও নিয়ন্ত্রিত হয়।

অডিটরি কর্টেক্সের কাজ শুরু হলেই বাচ্চার স্পিচ কর্টেক্সও কাজ শুরু করে। এই কারণেই কানে কথা এলে শিশু কথা বলারও চেষ্টা করে। মোটামুটি ১৮ মাস বয়সের বাচ্চা ১৫ থেকে ২০টি শব্দ মুখ ফুটে বলতে শিখে যায়। ২ বছর বয়সে ওই বাচ্চাই ২৫০ থেকে ২৭০টি শব্দ বলে। মোটামুটি দুবছরের বাচ্চা ‘ভাত খাব’, ‘জানলা খোলো’, ‘বাবা এস’, ‘মা চলো’ বলতে পারে। আড়াই বছরে গিয়ে এই শব্দভাণ্ডারের সংখ্যা হয় প্রায় ৪৫০টি। আড়াই বছর বয়সের বাচ্চা কিছু কিছু সরল বাক্য বলতে শুরু করে। যেমন ‘আমি জল খাব’, ‘আমি ভাত খাব’ ইত্যাদি। সুতরাং একটি দুই বছর বয়সের বাচ্চার মুখে বুলি ফুটে যাওয়া দরকার। তা না হলেই বুঝতে হবে সমস্যা আছে।

বাচ্চার কথা না বলার পিছনে নানা কারণগুলি হল

শ্রবণক্ষমতা: বাচ্চা কানে সঠিকভাবে শুনতে পায় কি না দেখুন। যে বাচ্চা কথা শুনতে পায় না, সে কথা শিখবে কী করে ? কথা বলতেও সে পারবে না। বাচ্চার হিয়ারিং লস-এর পিছনে কোনও নির্দিষ্ট কারণ নেই। তবে বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের রুবেলা থাকলে, রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকলে, বাচ্চার মায়ের সুগার, হাইব্লাডপ্রেশার, থাইরয়েডের সমস্যা এবং অন্যান্য আরও কিছু সমস্যা থাকলে এবং জন্মের পর বাচ্চাকে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকতে হলে বাচ্চার জন্মের পর হিয়ারিং টেস্ট অবশ্যই করাতে হবে।

মুশকিল হল, আমাদের দেশে হিয়ারিং লস ধরা পড়তে পড়তে বাচ্চার বয়স প্রায় আড়াই থেকে তিন বছর বছর হয়ে যায়। সমস্যা হল কোনও বাচ্চার তিন বছর বয়সের মধ্যে চিকিৎসা শুরু না হলে বাচ্চা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না।

গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টাল ডিজিজ (জিডিডি): বাচ্চার বিকাশজনিত এই সমস্যায় হাঁটা, চলা, বসা, ঘাড় শক্ত হওয়া সবই দেরিতে হয়। সাধারণভাবে একটি বাচ্চার ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া উচিত ছমাসের মধ্যে। খুব বেশি হলে নয় মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই ছমাসের পরেও বাচ্চার ঘাড় শক্ত না হলে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়া উচিত। অন্তত একবছর কেটে যাওয়ার পরেও ঘাড় সঠিকভাবে শক্ত না হলে বাচ্চার কথা বলতেও কিন্তু দেরি হবে। আবার একটি বাচ্চার এক বছরের মধ্যে হাঁটতে শিখে যাওয়া উচিত। কোনও কোনও বাচ্চা দেরিতে হাঁটতে শিখলে তার কথা বলতেও দেরি হবে। এছাড়া বুদ্ধাঙ্ক বা আই কিউ কম হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এক্ষেত্রে শিশুটি দুবছরের মধ্যে হাঁটতে না শিখলে পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপিস্ট বা স্পিচ থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে হবে।

পরীক্ষা

বাচ্চাকে পেডিয়াট্রিক ফিজিওথেরাপিস্ট বা স্পিচ থেরাপিস্ট-এর কাছে নিয়ে গেলে তিনি বেশ কিছু পরীক্ষা করান। এই পরীক্ষাকে বলে ‘আরলি অ্যাসেসমেন্ট’ বা পূর্ব পর্যবেক্ষণ। মাইলস্টোন-এর সমস্যা অনুযায়ী অনুযায়ী বাচ্চাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পাঠানো হয়। অথবা রিফ্লেক্স পরীক্ষার জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে পাঠানো হয়। ধরা যাক একটি বাচ্চার বয়স ২ বছর। প্রশ্ন হল, ক্রোনোলজিক্যাল বয়স অনুযায়ী কি বাচ্চা সঠিক আচরণ করছে ? না করলে কেন করছে না? পরীক্ষা করে বাচ্চার মানসিক বয়সও বের করা যায়। ২ বছর বয়সের বাচ্চার মানসিক বয়স একবছরও হতে পারে। অর্থাৎ বাচ্চাটি একবছর পিছিয়ে আছে। পরীক্ষার মাধ্যমে সেই তথ্য জানা যায়।

মনে রাখবেন

ক্রিটিকাল এজ থিওরি অনুযায়ী তিনবছরের মধ্যে বাচ্চার থেরাপি শুরু হলে অনেকাংশেই বাচ্চার মানসিক বয়স ও স্বাভাবিক বয়সের মধ্যে ফারাক কমিয়ে নিয়ে আসা যায়। এই কারণেই বাচ্চার কোনওরকম সমস্যা দেখা দিলে তাকে দুই বছরের মধ্যে চেকআপে নিয়ে আসার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসা করার জন্য অন্ততপক্ষে একবছর হাতে থাকে। এই প্রসঙ্গেই জানিয়ে রাখি, পিছিয়ে থাকা বাচ্চার থেরাপির জন্য একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিম থাকে। এই টিমে থাকেন একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, একজন স্পিচ থেরাপিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্ট, তার সঙ্গে থাকেন স্পেশাল এডুকেটর। এই টিম-এর কাজ হল, প্রতি মাসে বাচ্চার দ্বিগুণ বিকাশ ঘটানো। মনে রাখবেন বেশ কিছু অসুখে বাচ্চা দেরিতে কথা শেখে। অসুখ গুলি হল—অটিজম, অ্যাটেনশন ডেফিসিটহাইপার অ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার, এক্সপ্রেসিভ ল্যাঙ্গুয়েজ ডিজঅর্ডার বা ইনঅ্যাডিকোয়েট স্টিমুলেশন ইত্যাদি। অসুখগুলির সঠিক সময়ে নির্ণয় হওয়া খুব জরুরি।

অতিরিক্ত আদর

বাড়িতে অত্যধিক আদরের কারণে কোনও কোনও বাচ্চার অ্যাটেনশন সিকিং ডিজঅর্ডার দেখা যায়। ফলে কথা বলার পরিশ্রম তারা করে না। ইশারাতে কথা বলে। তবে এমনটি সকলের নাও হতে পারে। তাই একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চা ২ বছরের মধ্যে কথা না বললে তাকে অবশ্যই চিকিৎসক বা স্পিচ থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যেতেই হবে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago