কিভাবে নবজাত একটি শিশুকে স্নান করাবেন?

Published by

মায়েরা কিভাবে নবজাত একটি শিশুকে স্নান করাবেন এই স্বাভাবিক প্রশ্নটা মাথায় আসে। আসলে একটি শিশু তার  মায়ের কাছে প্রত্যেকটা দিনই একটা  চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে ।ছোট্ট শিশুকে সবকিছুই তো অতি যত্নে করিয়ে দিতে হয়। আবার সেই পুতুলের মতো প্রতিপক্ষটি সাইজে ওইটুকু হলে কী হবে, বিনা প্রতিবাদে কোনও কিছু মেনে নেওয়া সে পছন্দও করে না। তাকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো ছাড়াও প্রত্যেকটা মায়ের জন্য আরও একটা মস্ত কঠিন কাজ  স্নান করানো।

অবশ্য কিছু কিছু ভাগ্যবতী মা রয়েছেন , যাদের বাচ্চারা অন্তত স্নান করা নিয়ে মায়েদের এক্টু কমই জ্বালাতন করে। এবং, তারা স্নানের সময়টাই সবথেকে বেশি ভালোবাসে। মায়ের সারা মুখে হাতে পায়ে সাবানের বুদবুদ ছুঁড়ে, স্নানের জায়গা থেকে চারদিকে জল ছিটিয়ে মায়ের কাজ বাড়িয়ে প্রচুর আনন্দ পায় সে। আবার কিছু শিশু আছে যাদের স্নান করাতে গেলেই হয়তো চিৎকার জুড়ায় বা ঘুমিয়ে পরে। স্নানের সময় কীভাবে কতটা সহজ উপায় একটি সদ্যোজাত শিশুকে স্নান করানো যেতে পারে ? স্নানের সময়টা মা ও বাচ্চার কাছে কীভাবে হয়ে উঠবে সবথেকে আনন্দের আর আরামের? সে সব কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলচোনা করা যাক ।

সদ্যোজাত শিশুকে স্নান করানো সত্যিই বেশ কঠিন কাজ। আর যদি সেই কাজটা করতে হয় নতুন মাকে, তাহলে ব্যাপারটা সত্যিই বেশ খটমট হয়ে যায়। এই কঠিন কাজটা সহজ করতেই কিছু টিপস, যা মেনে চললে আপনার ছোট্ট শিশুটিকে  স্নান করানো মোটেও খুব একটা কঠিন হবে না।

শিশুকে স্নান করানোর গুরুত্ব কতখানি

শিশুকে স্নান করানো শুরু করার আগে, এটির গুরুত্ব বুঝতে হয় । একটি শিশুর অত্যন্ত দুর্বল রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া থাকে । এর মানে হল, শিশুর ত্বক খুব সংবেদনশীল এবং এর মধ্যে আপনার শিশুর উপর ধীরে ধীরে জমা হওয়া অধিকাংশ জীবাণুগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অ্যান্টিবডি নেই । স্নান করা ত্বকের উপরে অস্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া শুধু সরিয়ে দেয় তাই নয়, ত্বকের ছিদ্র বা রোমকূপের উপর জমা আস্তরণকে তুলে ফেলে, যাতে শিশুর ভিতরে অশুদ্ধিগুলি ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় । শিশুর ত্বকে ঘা, খোস, র‍্যাস বা ফুসকুড়ি থাকলে, তা পরীক্ষা করার জন্য এটি বাবা-মায়ের কাছে একটি সুযোগ ।

মনে রাখতে হবে  একটি শিশুর ত্বক খুব নরম হয়; প্রাপ্তবয়স্ক ত্বকের পণ্য থেকে শিশুর ক্ষতি হতে পারে । ত্বককে নরম এবং পুষ্টিকর রাখতে বিশেষভাবে তৈরি শিশুর পণ্যগুলি দিয়ে একটি শিশুকে স্নান করানোই উচিত ।

একটি শিশুকে কতটা স্নান করানো উচিত?

বেশিরভাগ বাবা-মা শিশুকে হাসপাতালের বাইরে বের করার দিন থেকেই প্রতিদিন শিশুকে স্নান করানোর অভ্যাস তৈরি করে । এটি অপ্রয়োজনীয় । প্রতিরক্ষামূলক পরিবেশে রাখা একটি নবজাতক শিশু খুব অল্প বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসে । সে এখনো কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করেনি বা নিয়মিত অপরিষ্কার পৃষ্ঠতলে উন্মুক্ত করা হয় না । তাই একটি নবজাতক শিশুকে সপ্তাহে শুধুমাত্র তিনবার স্নান করানোর সুপারিশ করা হয় ।

একবার শিশু কঠিন খাবার খেতে শুরু করলে এবং হামাগুড়ি দিতে শুরু করলে, আপনি ধীরে ধীরে এক মাস ধরে সপ্তাহে আরও কয়েকবার বেশি স্নান করাতে পারেন । একটি শিশু, যে হামাগুড়ি দেয় এবং কঠিন খাবার খায়, জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার জন্য তাকে প্রতিদিন স্নান করানো উচিত । আপনি নিয়মিত স্নান সেশন তৈরি করবেন কিনা তা নিশ্চিত করুন, কারণ এটি শিশুদের ত্বককে স্নানের পুনরাবৃত্তির সাথে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে ।

কিভাবে নবজাত একটি শিশুকে স্নান করাবেন

  • সদ্যজাত শিশুর ত্বক খুবই নরম হয়, তাই বাচ্চাকে কখনোই সপ্তারে ২-৩ দিনের বেশি স্নান করাবেন না। সদ্যজাত শিশুর প্রতিদিন স্নান করার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। নাড়ি ঝরে পড়ে না যাওয়া পর্যন্ত স্পঞ্জ বাথ দিলেই হবে।
  • বাচ্চাকে কোনও সমান উষ্ণ জায়গায় শুইয়ে নিন। তারপর ভেজা কাপড় দিয়ে হালকা করে সারা গা মুছে নিন। যখন যে অংশটা মোছাবেন, সেটাই শুধু খুলে নিন। নাহলে ঠান্ডা গেলে যেতে পারে।
  • হালকা গরম জলে পাতলা কাপড় বা স্পঞ্জ ভিজিয়ে সারা গা মোছাবেন।
  • বাচ্চাকে কখনোই ৫-১০ মিনিটের বেশি স্নান করাবেন না। প্রথমে মুখ, তারপর শরীরের অন্য অংশে জল দিন।
  • সদ্যোজাত শিশুর শরীরে সাবান নয়, হালকা বিশেষ ভাবে শিশুদের জন্য তৈরি বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন।
  • স্নান করানোর আগে অবশ্যই জলের তাপমাত্রা নিজে হাত দিয়ে দেখে নিন। বেশি গরম বা ঠান্ডা জলে কখনোই শিশুকে স্নান করানো উচিত নয়।

শিশুর স্নানের জন্য সঠিক স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন যে, আপনার শিশুর রোগপ্রতিরোধ প্রক্রিয়া খুবই দুর্বল। আপনি যদি ঠান্ডা এলাকায় বাস করেন,শোওয়ার ঘরে বা অন্য কোনও ঘরে যা বেশ গরম, সেখানে একটি টাবে আপনার শিশুকে স্নান করান। যদি গরম অঞ্চলে থাকেন, তবে ঘরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার কথা মনে রাখবেন।

একটি নবজাত শিশুকে কি করে স্পঞ্জ স্নান করাবেন

প্রথম কয়েক সপ্তাহে, আপনার শিশুকে একটি স্পঞ্জ স্নান দেওয়া সহজ হতে পারে । শিশুকে একটি উষ্ণ এবং আর্দ্র স্পঞ্জ বা তুলোর উল ব্যবহার করে আপনার শিশুকে মোছার মাধ্যমে করা হয় । এই প্রক্রিয়া চলাকালীন আপনার কিছু জিনিস মনে রাখা দরকার ।

  • ঘর যেন উষ্ণ থাকে এবং টাব যেন উষ্ণ জল দিয়ে ভর্তি থাকে তা নিশ্চিত করুন ।
  • শিশুর নিচে একটি শুকনো তোয়ালে রাখুন যাতে আপনি স্নানের পরে অবিলম্বে শিশুকে শুকিয়ে নিতে পারেন ।
  • ধীরে ধীরে শিশুর চোখ মোছার মাধ্যমে শুরু করুন ।
  • কানের ভেতরে বেশি গভীরে পরিষ্কার করবেন না, কারণে এতে শিশুর কানের পর্দার ক্ষতি হতে পারে । পরিবর্তে, যত্নের সঙ্গে কান এবং কান পিছনে পরিষ্কার করুন ।
  • সন্তানের ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা একটি নবজাতকের জন্য প্রস্তুত করা ওয়াইপস এবং ক্লিনার্স ব্যবহার করুন ।
  • একবার ধোয়া শেষ করে ফেললে, শিশুকে সাবধানে হাল্কা কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিন, শরীরের ভাঁজগুলিতে মনোযোগ দিতে হবে । ত্বকে একটি হালকা ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন বা শিশুর উষ্ণ রাখতে মুড়িয়ে রাখুন ।
বাথটাবে আপনার শিশুকে কিভাবে স্নান করাবেন
  • সহজে পাওয়ার জন্য হাতের কাছেই সব স্নানের জিনিপত্র রাখুন, যাতে নিশ্চিতভাবে এক হাত সবসময় শিশুর উপর রাখতে পারেন ।
  • গরম জল দিয়ে টাবটি ভরে দিন । ৩০ সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে যদি ৩২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা রাখা হয়, তাহলে শিশুর বড় বড় পোড়া দাগ বা ফোসকা হতে পারে ।
  • শিশুকে টাবের কাছে আনুন, তার সম্পূর্ণ পোশাক ছাড়িয়ে দিন । আস্তে আস্তে হাত দিয়ে তাকে ধরে টাবের মধ্যে প্রথমে তার পায়ের পাতা রাখুন ।
  • ধীরে ধীরে তার উপর সাবান বোলান, প্রথমে এটি হালকাভাবে ব্যবহার করুন । ধুয়ে ফেলার জন্য একটি কাপ বা হ্যান্ড-শাওয়ার ব্যবহার করুন ।
  • আস্তে আস্তে তাকে মুছে শুকিয়ে নিন, একটি তোয়ালে দিয়ে তাকে মুড়িয়ে নিন । তোয়ালেতে একটি গোটানো অংশের মতো একটি হুড থাকে তা নিশ্চিত করুন, এটি তার কান এবং মাথা উষ্ণ রাখবে ।
একটি শিশুর নিরাপদ স্নানের জন্য কি কি সতর্কতা মেনে চলা যেতে পারে
  • সবার প্রথমে জলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে তার পরই শিশুকে স্নান করানো শুরু করুন। ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপযুক্ত জলের মধ্যে শিশুকে রাখলে তার শরীরে মারাত্মক পোড়ার প্রভাব পরতে পারে ।
  • শিশুর চোখ পরিষ্কার করার জন্য  কোনো সুতির নরম কাপড় বা  তুলোর প্যাড ব্যবহার করুন । জলে ডুবিয়ে  নরম করে এবং আস্তে আস্তে বাহিরের দিক মুছুন । তার মুখ, নাক, ঘাড় এবং কান পরিষ্কার করার জন্য নরম স্পঞ্জ ব্যবহার করুন ।
  • শিশুদের জন্য তৈরি একটি মৃদু ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন এবং স্পঞ্জ দিয়ে শরীরের বাকি অংশ আস্তে আস্তে পরিষ্কার করুন।
  • সামনে থেকে পিছন দিকে ডায়পারের এলাকা ধুয়ে নিন । আপনার ছেলে শিশুর লিঙ্গের ত্বক টানবেন না ।
  • সব শিশুই জলের মধ্যে থাকতে ভালবাসে । সে যেন গরম থাকে, তার জন্য তার শরীরের উপর গরম জল অনবরত ঢালতে থাকুন ।
  • তার মাথা এবং ঘাড় ভালোভাবে ধরে শিশুকে আস্তে আস্তে টাব থেকে সরিয়ে আনুন এবং দ্রুত একটি তোয়ালে দিয়ে তাকে মোড়ান ।
  • শিশুর ত্বককে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে একটি নরম তোয়ালে ব্যবহার করুন । সব ভাঁজগুলি পরিষ্কার করতে এবং সবসময় শুকিয়ে নিতে ভুলবেন না ।
  • আর্দ্রতা ধরে রাখতে একটি শিশুর ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন । শিশুর ত্বক কমনীয় এবং তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় ।
শিশুর স্নানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
  • কখনই শিশুকে জলের মধ্যে একা ছেড়ে রাখবেন না, এমনকি এক সেকেন্ডের জন্যও না । যদি জরুরী কিছু করতে হয়, শিশুকে জল থেকে সরিয়ে দিন এবং তাকে সাথে নিয়ে যান ।
  • শিশুটি যখন টাবে থাকে, তখন জল যেন পড়তে না থাকে । তাপমাত্রার পরিবর্তন হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিত হতে পারে ।
  • শিশুর বেশিরভাগ সময় গরম স্নানের পরে ঘুমিয়ে পড়বে । আপনি তার স্নানের সময় নির্ধারণ করার সময় এই কথা মনে রাখবেন ।
  • আপনি যা দেখতে পান, তাই পরিষ্কার করুন, কানের ভিতরের অংশ বা নাকের ভিতরে পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না ।
  • যেখানে শিশুকে স্নান করাবেন, সেখানে একটি পিছল রোধী মাদুর রাখুন । এটি যে কোন দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করবে ।
  • আপনার শিশুর জলকে একা ছেড়ে যাবেন না ।
Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago