খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার উপায় ,গড়ে তুলুন সুস্থ জীবন

Published by

কথায় বলে মানুষ অভ্যেসের দাস।তাই সুস্থ জীবন গড়ে তুলতে খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার উপায় আমাদের খুঁজে নিতে হবে।খারাপ অভ্যাসগুলি পরিবর্তন করতে হবে ভালো অভ্যাসে।কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব,আসুন জেনে নি-

খারাপ অভ্যাস

আপনার সম্পূর্ণ জীবনচক্রে আপনি যে সমস্ত অভ্যাসে অভ্যস্ত হন, তার সবকিছুই আপনার পক্ষে ভালো, এমনটা কিন্তু নয়। উদাহরণস্বরূপ, দেরি করে কাজ শেষ করার অভ্যাস, ইনসোমনিয়া সহ নানারকম স্লিপিং ডিসঅর্ডারের জন্ম দিতে পারে ৷ অন্যদিকে, একটি ভাল অভ্যাস আপনাকে সাফল্যের পথে চালনা করে।

আপনার কী ধারণা? কেন বেশিরভাগ বিজয়ীরা বারবার ম্যাচ জিতে যান এবং পরাজিতরা সর্বদা হেরে যান। দুজনের তো লক্ষ্য একই, তবে কেন এমনটা হয়? আসলে সবই অভ্যাসের কারণে। খারাপ অভ্যাস জীবনকে নষ্ট করে দিতে পারে। পরাজিতদের জন্য, যেকোনো কৃতিত্বই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারে শুধুমাত্র খারাপ অভ্যাসের কারণে,  যেখানে বিজয়ীরা নিশ্চিতভাবে কিছু ভাল অভ্যাসে অভ্যস্ত করে তোলেন নিজেকে এবং এটিই জীবনে যেকোনো সাফল্য অর্জনে সহায়ক হয়৷

যদি কেউ ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তবে সবার প্রথমে তার উচিত সেই ধূমপানে লাগাম টানা অর্থাৎ প্রতিরোধ করা৷ আপনারা সকলেই জানেন যে ইচ্ছাশক্তি কোনো অভ্যাস গড়ে তোলার পক্ষে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। ইচ্ছাশক্তির ঘাটতি থাকলে খারাপ অভ্যাসটি ছাড়ার সম্ভাবনা কমে যায়৷

খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার উপায়:

১. প্রতিদিনের রুটিন পরিবর্তন করুন, এবং আপনার জীবনের মূল উদ্দেশ্য হয়ে উঠুক একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় নিজেকে অভ্যস্ত করা।

২. ধূমপান হ্রাস (দৈনিক ভিত্তিতে কমাতে থাকুন)।

৩. জামাকাপড়, জিনিসপত্র কেনার অভ্যাস কমিয়ে দিন।

৪. একান্তই ধূমপান করার ইচ্ছে হলে সেই মুহূর্তে ক্যান্ডি খেতে পারেন কিংবা কিছু চিবোতে পারেন। ধূমপানের প্রতি মনোযোগ সরাতে হবে৷

৫. প্রচন্ড রকম ধূমপান করার ইচ্ছে হলে – কিছু আঁকতে শুরু করুন।

৬. মনের মধ্যে ভীষণ রকম অস্বস্তি হলে আপনার জীবনের পাঁচটি বড় সাফল্য লিখতে শুরু করুন। পরবর্তীতে এই একইরকম অস্বস্তিবোধ হলে সেই লিস্টটা মনে করুন ৷ আপনার কৃতিত্বের তালিকা আপনাকে অনুপ্রেরণা দেবে ৷

ভালো অভ্যাসের একটি বড় দিক হলো ভালো ঘুমের অভ্যেস।

সুস্থ জীবনের অপর নাম পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুম শরীর এবং মনের একটি প্রাকৃতিক অবস্থা যার পুনরাবৃত্তি হয়৷ ঘুমন্ত অবস্থায় পেশীর বিশ্রাম হয় এবং পারিপার্শ্বিক সমস্তরকম উদ্দীপনা সম্পর্কে উপলব্ধি হ্রাস হয়। এটি একটি শারীরবৃত্তীয় আচরণ যা সমস্ত প্রাণী জগতের মধ্যেই বর্তমান। মানব জীবনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় ঘুমন্ত অবস্থাতেই কাটে। ঘুম বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য এবং দীর্ঘকালীন ঘুমের ঘাটতি গুরুতর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং জ্ঞানের ক্ষতি এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে।

আমাদের সকলেরই ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।

যেমন, ঘুমের হাইজিনের মাধ্যমে আপনি একটি স্বাস্থ্যকর জীবন বজায় রাখতে পারেন। কিন্তু কীভাবে?

ঘুমের জন্য স্বাস্থ্যকর সময়সূচীর সাহায্যে একজন মানুষ নিজের মানসিক এবং শারীরিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হন।

প্রয়োজনের তুলনায় কম সময়ের এবং হালকা ঘুম স্বাস্থ্য এবং কাজ — কোনোটির জন্যই ভাল নয়। তারচেয়ে বরং ঘুমের সঠিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে নির্বিঘ্ন পর্যাপ্ত ঘুম উপভোগ করুন।

মনে রাখবেন

১. নিয়মিত ঘুমের রুটিন বজায় রাখতে হবে।

২. ঘুম বিছানায় ৫-১০ মিনিটের বেশি জেগে থাকবেন না।

৩. বিছানায় শুয়ে টিভি দেখবেন না বা কিছু পড়বেন না।

৪. কফি বা ক্যাফিন জাতীয় পানীয় গুলো সাবধানতার সাথে পান করুন।

৫. ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এমন যেকোনো বস্তু এড়িয়ে চলুন।

৬. নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

৭. সঠিক ঘুমের জন্য একটি শান্ত এবং আরামদায়ক শোওয়ার ঘর প্রয়োজন।

৮. যদি রাতে বারবার ঘড়ি দেখার অভ্যেস থাকলে তাহলে ঘড়িটা দূরে রাখুন৷

ঘুম মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদার সাহায্য ছাড়াও আপনি নিজের উপর প্রয়োগ করতে পারেন এই পদ্ধতি গুলি এবং অন্যদেরও প্রভাবিত করতে পারেন। এগুলো আসলে একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ যা জীবন আনে বিরাট পরিবর্তন।

তাহলে খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার সর্বোত্তম উপায় কোনটি?এক কথায় ভালো অভ্যেসে পরিবর্তন ই হল তার উত্তর। ভালো অভ্যাস লক্ষ লক্ষ জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাদের জীবনকে ইতিবাচক দিকে পরিবর্তন করতে পারে এবং এটি আপনার জীবনকেও বদলে দেবে। মাত্র ৬৬ দিনের একই অভ্যাস নিয়মিত প্র‍্যাকটিস করুন। তারপর দেখবেন এটি আপনার জীবনধারা বা আচরণে পরিণত হবে।

মনে রাখবেন, আপনি একটি নতুন অভ্যাস শুরু করার সময় প্রথমেই কোনও ইতিবাচক ফল দেখতে পাবেন না, তবে নিয়মিত চালিয়ে গেলে ধীরে ধীরে আপনার পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করবেন। আসলে বেশিরভাগ মানুষই ভাবেন যেকোনো ফলাফল কীভাবে একদিনে পাওয়া সম্ভব! কিন্তু তারা ভুলে যান গত ৫ বছর ধরে অর্জন করা নিজের সমস্ত বাস্তব আচরণ।

কোনও প্রকার পেশাদারের সহায়তা ছাড়াই সমস্ত ধরণের খারাপ অভ্যাসগুলি থেকে আপনি নিজেই বেরিয়ে আসতে পারবেন এবং ভাল অভ্যাস গুলি তৈরি করতে পারবেন।

কেবলমাত্র ছোটো ছোট কয়েকটি জিনিস নিজের জীবনে প্রয়োগ করুন, এবং আপনার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করুন। তবেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago