গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড খাওয়ার উপকারিতা

Published by

ফলিক অ্যাসিড হল ভিটামিন বি এর একটি প্রকার। এর সিন্থেটিক প্রকারকে ফোলেট বলে। আমাদের শরীর ফলিক অ্যাসিড ব্যবহার করে নতুন কোশ এবং ডিএনএ (DNA) তৈরি করে।
গর্ভাবস্থার আগে এবং গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, গর্ভধারণের আগে নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড খেলে জন্মসংক্রান্ত শারীরিক ত্রুটি, যেমন — স্পাইনা বিফিডিয়া, এনসেফালোসেল, অ্যানেনসেফালি ইত্যাদি নানারকম নিউরাল টিউব ডিফেক্ট থেকে ভ্রূণ রক্ষা পায়।

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড খাওয়ার উপকারিতা

প্রতি বছর প্রচুর শিশু নিউরাল টিউব সংক্রান্ত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সাধারণত গর্ভধারণের ২৮ দিন পরে সুষুম্নাকাণ্ড ও মস্তিষ্কের ভেতর নিউরাল টিউবের গঠণ হয়।
নিউরাল টিউব যদি সঠিক ভাবে বন্ধ হতে না পারে, তখনই নিউরাল টিউবে ত্রুটি তৈরি হয়। “অ্যানেনসেফালি” তে মস্তিষ্কের গঠনই ঠিকমতো হয় না। অ্যানেনসেফালি নিয়ে জন্মানো শিশু বাঁচে না।
স্পাইনা বিফিডিয়া বা এনসেফালোসেল নিয়ে জন্মানো শিশুকে প্রচুর অস্ত্রোপচার, প্যারালাইসিস কিংবা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অক্ষমতার সম্মুখীন হতে হয়। ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খেলে তা কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ থেকে শিশুকে রক্ষা করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মত অনুযায়ী জন্মের আগে হৃদপিণ্ড বা রক্তজালিকার স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি হলে কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজ হয়ে থাকে।
সমীক্ষায় এটাও দেখা গেছে যে, প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খেলে তা শিশুকে ঠোঁট ও তালুর ত্রুটিপূর্ণ গঠন (কাটা ঠোঁট ও কাটা তালু) থেকে রক্ষা করে। প্রেগন্যান্সির প্রথম ছয় থেকে দশ সপ্তাহের ভেতর এই সমস্যাটা হয়ে থাকে, যদি তালু ও ঠোঁটের দুটো অংশ সঠিক ভাবে না মেশে। এই অবস্থা ঠিক করার জন্য পরবর্তী কালে একাধিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

গর্ভাবস্থায় ফলিক অ্যাসিড কতটা প্রয়োজন?

The American College of Obstetricians and Gynecologist এর মত অনুযায়ী গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা উচিত। প্রতিটি প্রিন্যাটাল ভিটামিনে এই পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড থাকে।
আপনি গর্ভবতী এটা বোঝার পর যদি আপনি ফলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করেন, তাহলে তার থেকে খুব দ্রুত উপকার নাও হতে পারে। বেশিরভাগ মহিলারাই কনসেপশনের ছয় সপ্তাহ বা তার বেশি সময়ের আগে বুঝতেই পারেন না, যে তাঁরা গর্ভবতী। গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে যখন অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাঁরা গর্ভবতী হয়ে গেছেন, নিউরাল টিউব ডিফেক্ট ওই সময়েই হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের ত্রুটি যাতে না হয়, সেজন্য মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকা প্রয়োজন। যেসব মহিলারা প্রেগন্যান্সির পরিকল্পনা করছেন এবং যাঁরা সন্তানধারণের বয়সে পৌঁছে গেছেন, তাঁদের প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড খাওয়া উচিত।
যদি কোনো মহিলা এমন শিশুর জন্ম দিয়েছেন, যার নিউরাল টিউব ডিফেক্ট আছে, সেক্ষেত্রে তিনি আবার গর্ভ ধারণের পরিকল্পনা করলে, গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভবতী হওয়ার প্রথম কয়েকমাস অন্যদের তুলনায় বেশি পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে। কতটা পরিমাণ ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে সেটা একমাত্র আপনার চিকিৎসকই বলতে পারবেন।
এছাড়াও আর যে যে কারনে ফলিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয় সেগুলো হল —

  • কিডনির রোগ থাকলে এবং ডায়ালিসিস চলতে থাকলে
  • Sickle cell রোগ থাকলে
  • যকৃতের (লিভার) এর রোগ থাকলে
  • দিনে একবারের বেশি অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় খেলে
  • এপিলেপ্সি, টাইপ টু ডায়াবেটিস, লুপাস, সোরিয়াসিস, রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, অ্যাস্থমা এবং ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ এর চিকিৎসা ও ওষুধ চললে।

ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার

সবুজ শাক সব্জি, বীট, ব্রকলিতে প্রাকৃতিক ভাবে ফোলেট পাওয়া যায়। কিছু কিছু খাদ্যে ফলিক অ্যাসিড ফর্টিফায়েড রূপেও থাকে। এর কোনো নিশ্চয়তা নেই, যে, খাদ্যের মাধ্যমে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড পাবো, তাই সাপ্লিমেন্টর প্রয়োজনীয়তা আছে। ফলিক অ্যাসিড যাতে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে সেজন্য চিকিৎসক প্রেগন্যান্সির আগে ও সেই সময়ে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট বা প্রিন্যাটাল ভিটামিন যাতে ফলিক অ্যাসিড আছে, তা খেতে দেবেন। খাদ্য ও সাপ্লিমেন্ট মিলিয়ে প্রতিদিন ১০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ফলিক অ্যাসিড খাওয়া যাবে না।
কোনোভাবেই ১০০% নিশ্চিত করা সম্ভব নয় যে, শিশুর কোনোরকম জন্মসংক্রান্ত ত্রুটি হবে না, তবে প্রেগন্যান্সির আগে ও প্রেগন্যান্সির সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড খেলে নিউরাল টিউব ডিফেক্ট, কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্ট, ক্লেফট লিপ, ক্লেফট প্যালেট ইত্যাদি কে এড়ানো সম্ভব হয়।
যদি আপনি খুব শীঘ্রই প্রেগন্যান্সির পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আপনার খাদ্যের সাথে প্রিন্যাটাল ভিটামিন খাওয়া শুরু করুন এবং অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে তার আগে পরামর্শ করে নিন, কতটা পরিমাণ খেতে হবে , কারণ অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট আপনার ভ্রূনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

Anshula Banerjee

Hello, I am Anshula Banerjee, completed my post-graduation degree in English, along with Bachelor of Education. I live at Nadia. I am a voracious reader in various fields of knowledge that may help the readers to satisfy their urge specially in the area of health and wellness.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago