পিরিয়ডস-এর সময় কী কী নিয়ম পালন করবেন?

Published by

ভ্যাজাইনাল গুড হাইজিন বলতে নিজের শরীরের অত্যন্ত ব্যক্তিগত অঙ্গ এবং যৌনাঙ্গ সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখাকে বোঝায়। এই বিষয়টি যে কোনও বয়সের মহিলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ যাঁর বয়স ৩০ তিনিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, আবার যাঁর বয়স ৪০-এর বেশি তিনিও মেনে চলবেন একই স্বাস্থ্যবিধি।

প্রথম নিয়ম

প্রতিবার টয়লেট করার পর পরিষ্কার জল দিয়ে টয়লেট করার জায়গাটি ধুয়ে নিন। কোনও বয়সেই বিষয়টি উপেক্ষা করা যাবে না।

দ্বিতীয় নিয়ম

পিরিয়ডস-এর সময় একই স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটাবেন না। সম্ভব হলে ঘন ঘন স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন করুন। কে কত দ্রুত পরিবর্তন করবেন তা নির্ভর করে কার কতখানি হেভি ব্লিডিং হচ্ছে তার উপর। অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা অন্তর প্যাড পরিবর্তন করতেই হবে। মুশকিল হল অনেক মহিলাই অফিসে যান। তাঁদের পক্ষে এভাবে ঘন ঘন হয়তো প্যাড পরিবর্তন করা একটু সমস্যাবহুল হয়ে যেতে পারে। তবু চেষ্টা একটা করতেই হবে।

মেনস্ট্রুয়াল কাপ

মেনস্ট্রুয়াল কাপ ভারতের মহিলাদরে মধ্যে সেভাবে প্রচলিত ছিল না। তবে ধীরে ধীরে ভারতীয় জনগণের মধ্যে মেনস্ট্রুয়াল কাপ পরিচিতি পাচ্ছে। অবশ্য বিদেশের বাজারে মেনস্ট্রুয়াল কাপ অতিপরিচিত ছিল।

এখনও দেশের সর্বত্র মেনস্ট্রুয়াল কাপ পাওয়া যায় এমন নয়। তবে স্যানিটারি প্যাড এখন সব জায়গায় মিলছে। তাই পরিষ্কার স্যানিটারি প্যাড পরা ও বারবার পরিবর্তন করার মধ্যে দিয়ে যে কোনও ধরনের সমস্যা এড়িয়ে থাকা যায়।

প্যাডের বদলে কাপড়?

যেখানে কোনওভাবেই প্যাড মিলছে না সেখানে প্যাডের বদলে কাপড় বেছে নেওয়া ছাড়া সত্যিই কোনও উপায় নেই। তবে সেক্ষেত্রে পুরনো কাপড় খুব ভালো করে ধুয়ে তারপর ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে হ্যাঁ, ওই একই কাপড় আবার পরের মাসে ব্যবহার করতে গেলে চলবে না! একবার ব্যবহৃত কাপড় পুরোপুরি ফেলে দিতে হবে।

পিরিয়ডস-এর সময়সীমা

পিরিয়ডস শুরু হওয়া এবং শেষ হওয়ার বয়স আমাদের দেশে যথাক্রমে এগিয়ে এবং পিছিয়ে গিয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের জেনে রাখা দরকার যে ৮ বছরে নীচে কোনও মেয়ের পিরিয়ডস শুরু হলে তা অস্বাভাবিক। আজকাল বহু মায়েরাই গাইনিকোলজিস্টের কাছে গিয়ে বলেন— ‘১০ বছরের মেয়ে, পিরিয়ডস শুরু হয়ে গিয়েছে। কী হবে?’

জেনে রাখুন বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে স্বাভাবিক। মোট কথা পিরিয়ড শুরু হওয়ার স্বাভাবিক বয়স এখন ৮ বছর।

অন্যদিকে মেনোপজ বা পিরিয়ড শেষ হওয়ার স্বাভাবিক বয়স হল ৫৫! অর্থাৎ কোনও মহিলার ৪০-৪৫ পেরিয়েছে মানেই তার মেনোপজ হয়ে যাবে এমন কোনও অর্থ নেই। তবে হ্যাঁ ৫৫ বছর বয়সের পরেও পিরিয়ডস হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার।

হঠাৎ পিরিয়ডস বন্ধ

মেনোপজের বয়স না পেরিয়ে গেলে, প্রতিমাসে ঋতুচক্র হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা বিষয়। সুতরাং কোনও একটি মাসে মেনোপজ না হলে অবশ্যই নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ। এখন পিরিয়ডস বন্ধ হওয়ার যে সকল শর্তগুলি আছে তা হল—

  • প্রেগন্যান্সি আসা বা সন্তানসম্ভবা হওয়া। তাই প্রেগন্যান্সি এসেছে কি না জানতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করুন। প্রেগন্যান্সি এসেছে কি না দেখা প্রয়োজন, না হলে গর্ভস্থ সন্তানের প্রথম দু’মাসে সঠিকভাবে বৃদ্ধি হয়েছে কি না বা ব্রেনের বিকাশ হয়েছে কি না তা বোঝা যাবে না। তাতে উলটে বিপদ তৈরি হবে। এছাড়া যে যে ওষুধ ভ্রূণের পাওয়ার কথা ছিল তা কি সে পাচ্ছে কি না তাও নিশ্চিত করার দরকার।
  • প্রেগন্যান্সি না থাকলে গাইনিকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে করাতে হবে কিছু পরীক্ষা।

খেয়াল রাখুন

পিরিয়ডস-এর শেষ তারিখ কবে ছিল তা মনে না থাকলেও সমস্যা নেই। অন্তত কতদিন ধরে পিরিয়ডস বন্ধ আছে তা অবশ্যই মনে থাকার কথা। তবে পিরিয়ডস-এর তারিখ খেয়াল রাখা প্রয়োজন। তাতে চিকিৎসকের সুবিধা হয়। তাই পিরিয়ডস-এর তারিখ মনে রাখতে সমস্যা হলে মোবাইলের অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন। অ্যাপস ব্যবহার করতে না পারলে ক্যালেন্ডারে তারিখে দাগ দিয়ে রাখুন। ছোট্ট একটা দাগও অন্তত দেওয়া যায়। এই অভ্যেস অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়।

পিরিয়ডস এবং লো ব্লাড প্রেশার

মেনস্ট্রুয়েশন হচ্ছে এবং তার সঙ্গে লো ব্লাড প্রেশারের সমস্যা হচ্ছে মানেই যে শারীরিক পরিস্থিতি খুব গুরুতর এমন ভাবার কোনও প্রয়োজন নেই। আর ব্লিডিং থেকে প্রেশার খুব লো হলে বুঝতে হবে ওই মহিলার প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা অত্যন্ত খারাপ ধরনের লো প্রেশার হয়েছে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কখন প্যাপ স্মিয়ার

ভ্যাজাইনা এবং সারভিক্স থেকে টিস্যু নিয়ে (এক্সফোলিয়েটেড সেল বা আলগা কিছু কোষ-এর নমুনা) মাইক্রোস্কোপের তলায় রেখে পরীক্ষা করা দেখা হয় যে কোষের গঠনে কোনও সমস্যা আছে কি না বা বিশেষ ধরনের সংক্রমণ চোখে পড়ছে কি না। এই পরীক্ষার সুবিধা হল, পরিস্থিতি জটিল হওয়ার অনেক আগেই ইউটেরাসের ক্যান্সার, জরায়ুমুখের ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হয়। অত্যন্ত কম খরচের এই পরীক্ষা করানো উচিত প্রত্যেক প্রজননক্ষম মহিলারই। এছাড়া ৩৫ বছর বয়সের পর প্রতিবছর অবশ্যই প্যাপস্মিয়ার করালে অকালে প্রাণহানি রোধ করা যায়। তাই সচেতন হন। কুসংস্কার দূরে রাখুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago