Search
Close this search box.

মেনোপজ কী? মেনোপজের পূর্ব লক্ষণ কিভাবে বুঝবেন?

মেনোপজ কী?

মেনোপজ হল একজন মহিলার মেনস্ট্রুয়েশন সাইকেল বা ঋতুচক্র বন্ধ হওয়া। শুদ্ধ বাংলায় এই অবস্থাকে বলে রজঃনিবৃত্তি।

মেনোপজের বয়স: মেনোপজের কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই। অর্থাৎ কারও ৪৫ বছরে মেনোপজ হয়, কারও আবার ৫০ বছরে পৌঁছেও মেনোপজ হতে পারে। একজন মহিলার বয়স ৪০ পেরনোর পর যে কোনও সময় মেনোপজ হতে পারে। এমনকী ৫৫ বছর বয়স পর্যন্তও অপেক্ষা করা যেতে পারে।

প্রি ম্যাচিওর মেনোপজ: কোনও মহিলার ৩৫ বছর বয়সের আগেই ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে গেলে বুঝতে হবে তাঁর ক্ষেত্রে প্রি ম্যাচিওর মেনোপজ হয়েছে। আবার ৩৯-৪০ বছর বয়সে অনেক মহিলার মেনোপজ হয়ে যায়। সেইসময় তাঁদের খুবই চিন্তা থাকে যে তাঁর তো মেনোপজ হওয়ার বয়স হয়নি। তবে চিকিৎসা পরিভাষায় ৩৫ বছর বয়সের উর্ধ্বে মেনোপজ হলে তার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকত্ব নেই।

দেশে বিদেশে মেনোপজ

ইন্টারনেটে তথ্য দেখেও অনেকে মেনোপজের বয়স নিয়ে বিভ্রান্ত হন। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, দেশে ভেদে মহিলাদের মেনোপজের বয়স বদলে যায়।

মেনোপজের ধরন

তিনরকম ভাবে মেনোপজ আসতে পারে—

১) ধীরে ধীরে পিরিয়ডস-এর সময় রক্তপাতের মাত্রা কমতে থাকে ও একসময় এভাবে পিরিয়ডস বন্ধ হয়ে যায়। ষয়টি ঘটতে কারও ৩মাস, কারও ৬ মাস, কারও আবার ১ বছর বা তারও বেশি সময় লাগে।

২) কারও আবার এমনও হয় যে গতমাস অবধি ঠিকঠাক পিরিয়ডস হয়েছে, এরপর পরপর ৩-৪ মাস আর হচ্ছে না!

৩) সার্জিক্যাল মেনোপজ বা কোনও কারণে অপারেশন করে ইউটেরাস বাদ দিতে হলেও আসতে পারে মেনোপজ। অর্থাৎ হিস্টেরেকটমি করলে মেনোপজও হয়ে যায়। ইউটেরাইন ক্যান্সার, কোনও বড় টিউমার বা অন্য অঙ্গের টিউমার ইউটেরাসে প্রবেশ করলে করাতে হতে পারে হিস্টেরেকটমি।

মেনোপজ হলে কি চিকিৎসা লাগে?

স্বাভাবিক পথে মেনোপজ হলে তা অসুখ নয় কখনওই। তবে অপারেশনের কারণে মেনোপজ হলে কিছু সমস্যা দেখা যেতে পারে। তখন ওষুধ কিছু লাগতে পারে। তবে তার আগে দেখতে হবে রোগীর কী কী উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে। চিকিৎসা বলতে রয়েছে ওই উপসর্গের চিকিৎসা।

বেশি পিরিয়ডস এবং মেনোপজ

  • আগে তিনদিন পিরিয়ডস হতো, এখন ৫দিন হয়, • আগেও তিনদিন হতো, এখনও তিনদিন হয় তবে ফ্লো অনেক বেশি, • অল্প অল্প করে অনেকদিন পিরিয়ডস হচ্ছে • ১ মাস হওয়ার আগেই দিন পনেরোর মধ্যে ফের পিরিয়ডস হচ্ছে— এই সবগুলি বিষয়কেই বেশি পিরিয়ডস বলে গণ্য করা হয়। পিরিয়ডস বেশি হওয়া সবসময়েই কোনও না কোনও রোগের লক্ষণ। চিকিৎসা পরিভাষায় বিষয়গুলিকে বলে পেরিমেনোপজাল ব্লিডিং প্যাটার্ন। সমস্যা হল অনেক ক্ষেত্রেই রোগিণী মনে করেন, খুব দ্রুত তাঁর মেনোপজ শুরু হতে চলেছে। আর সেই কারণেই বেশি বেশি পিরিয়ডস হচ্ছে। এর ফলে অনেকেরই হিমোগ্লোবিন ৫-৬-এ নেমে যায়। ভয়ঙ্কর ধরনের অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হন তাঁরা। অতএব মনে রাখবেন বেশি পিরিয়ডস মানেই তার পিছনে কোনও সমস্যা লুকিয়ে আছে। স্বাভাবিক ভাবে মেনোপজ হয় ধীরে ধীরে পিরিয়ডস কমতে কমতেই।

মেনোপজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • মেনোপজ হলে ইস্ট্রোজেন হর্মোনের প্রতিরক্ষা শরীর থেকে চলে যায়। ফলে হার্টের রোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই আগে থেকেই যাঁদের ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেশারের ইতিহাস রয়েছে তাঁদের সময়মতো খেতে হবে ওষুধ। এছাড়া দরকার জীবনশৈলীর পরিবর্তন। তা কেমন? খেতে হবে সুষম খাদ্য। তার সঙ্গে করতে হবে এক্সারসাইজ। হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং-এর মতো কার্ডিও এক্সারসাইজ শরীর ভালো রাখতে খুব সাহায্য করে।
  • হাড়ের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে হাঁটুর বাত, অস্টিওপোরোসিস হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায়। তাই বাবু হয়ে বসে কাজ, সিঁড়ি ভাঙার মতো কাজ কম করতে হবে।

ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট

মেনোপজ হওয়ার পরে হাড়ের ক্ষয় হওয়ার কথা আগেই বলা হয়েছে। তাই খাদ্যতালিকায় অবশ্যই দুধ, বা ছানা অথবা দই অবশ্যই রাখতে হবে। এই ধরনের খাদ্য খেলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হবে না ও ছোটখাট আঘাতে হাড় ভাঙবে না। ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। পাশাপাশি গায়ে রোদ লাগানোও জরুরি।

মেনোপজের শুরু

১২ মাস মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ থাকলে তবেই বুঝতে হবে মেনোপজ হয়েছে। সুতরাং বয়স ৩৫-এর বেশি হলে ও পিরিয়ডস ধীরে ধীরে কমতে থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। তিনিই আপনাকে মেনোপজের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিতে পারবেন ও কখন সাবধান হতে হবে তাও বলতে পারবেন।

কখন সতর্ক?

আগেই বলা হয়েছে ১২ মাস একটানা মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ না থাকলে মেনোপজ বলা হবে না। আবার ১ বছর থেকে দেড় বছর একটানা মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ থাকার পর ফের ব্লিডিং শুরু হলে তা পিরিয়ডস নয় কখনওই। এই বিষয়টি একটি শারীরিক সমস্যা এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ ইউটেরাইন ক্যান্সার সহ আরও কিছু ক্যান্সারের ইঙ্গিত করতে পারে এই ধরনের রক্তপাত।

মেনোপজের পর গর্ভধারণ

এমনিতে মেনোপেজের পরে সন্তানধারণ সম্ভব নয়। তবে অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকটিভ থেরাপির মাধ্যমে মেনোপজের পরেও সন্তান ধারণ করছেন কেউ কেউ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে ওভাম ডোনেশন ও হর্মোন থেরাপির মাধ্যমে একজন মহিলা মেনোপজের পরেও সন্তানধারণ করতে পারেন। তবে সন্তানধারণের আগে অনেকগুলি পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন হয়। মূলত আইভিএফ সেন্টারে এই ধরনের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার ফল অনুকূল হলে তবেই করা যায় সন্তানধারণের চেষ্টা।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক