পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব — প্রাথমিক ধারণা, প্রথম পিরিয়ড, সতর্কতা

Published by

কৈশোর শুরুর আগেই পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অভিভাবকদেরও কিছু দায়িত্ব বর্তায় তাদের কন্যা সন্তানের মধ্যে এই বিষয়ে ধারণা তৈরি করার। নিয়মিত টেলিভিশনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়, সেসময়ই এর প্রয়োজনীয়তা, কার্যকারিতা নিয়েও তাকে জানানো উচিত। যদিও মেয়েদের এই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় ঘটনা সম্পর্কে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে হঠাৎই রাস্তাঘাটে বা কোনো পাবলিক প্লেসে অজান্তে পিরিয়ড শুরু হলে বা এরকম কোনো ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

এসবের সাথে সাথে সন্তানকে এটাও জানানো প্রয়োজন যে পিরিয়ড একবার শুরু হলে এরপর শরীর সন্তানধারণের জন্য সক্ষম হয়। এর পাশাপাশি পিরিয়ড হলে কেন সন্তান আসে ও কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়েও প্রাথমিক ধারণা দেওয়া দরকার। তবে কখনোই এ সম্পর্কে কোনো কুসংস্কারকে মনে ঠাঁই দেওয়া উচিত নয়। আরেকটি বিষয় জানা প্রয়োজন, বিজ্ঞানের ভাষায় মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়টিকে রজঃচক্র এবং পিরিয়ডকে রজঃস্রাব বলা হয়। কিন্তু প্রচলিত কথায় আমরা তাকে ঋতুস্রাব বলে থাকি।

কোন বয়সে পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব প্রথম দেখা দেয়?

পিরিয়ড শুরুর আগে একটা প্রশ্নই সবার মনে আসে, তা হলো পিরিয়ড কবে শুরু হবে কী করে বুঝবো? একথা সত্যি যে, আগে থেকে নির্দিষ্ট কোনো দিন বোঝা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কিন্তু যখন থেকে শরীরে নানারকম বদল আসতে থাকে, তখন থেকে এর জন্য তৈরি হওয়া প্রয়োজন।

সাধারণত মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয় ১২ বছর বয়সে। ডাক্তাররা ঋতুস্রাবের গড় বয়স হিসেবে ধরেন এই ১২ বছর বয়সকেই। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে তার আগেই হতে পারে। এমনকী ৮-৯ বছর বয়সেও অনেকেরই পিরিয়ড শুরু হয়ে যায়। ঋতুস্রাব শুরুর বয়স অনেক সময়েই পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান, জীবনযাত্রা, শারীরিক অবস্থার  উপরেও কিছুটা নির্ভর করে। আসলে শরীর পিরিয়ডের জন্য তৈরি হলে তারপরেই শুরু হয়। তবে এ সম্পর্কে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে পিরিয়ডের দিনের জন্য তৈরি করা উচিত মায়েদের। অনেক ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হয় যে, মায়েরা নিজেরাই বুঝে উঠতে পারেননা কখন আর কীভাবে এই বিষয়ে মেয়েকে জানাবেন। জানালে কিভাবেই বা মেয়ে গ্রহণ করবে সেটি। এর জন্য প্রথম থেকেই বন্ধুত্ব করতে হবে। যাতে খুব সহজেই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে তাকে বুঝিয়ে দিতে পারেন৷ এমনকি আপনার পুত্রসন্তান কৈশোরে পৌঁছলে, তাকেও বোঝান, যাতে তার বোন বা দিদি বা বান্ধবীদের এই অবস্থায় দেখলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে।

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব এর ক্ষেত্রে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন?

প্রথমবার বা পরবর্তী ক্ষেত্রেও পিরিয়ড বাড়িতেই শুরু হবে এমন কোনো কথা নেই। স্কুলে, টিউশনে, রাস্তাঘাটে যে কোনো জায়গাতে যে কোনো সময়েই শুরু হতে পারে। সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। ব্যাগের ভিতর সবসময় অতিরিক্ত অন্তর্বাস সহ স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখতে হবে। পিরিয়ড হওয়া অবস্থায় অনেক সময় জামাকাপড় বা স্কুল ইউনিফর্মে দাগ লাগতে পারে। তাই  এ সময় খুব আঁটোসাঁটো ও হালকা রঙের পোশাক পরা উচিত নয়। ব্যাগে একটি অতিরিক্ত পোশাক রাখতে পারলে ভালো, যাতে দরকার মতো তা বদলে নেওয়া যায়। যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। তবে এই বিষয় নিয়ে রাখঢাক করা বা ভুল তথ্য কাউকে জানানো কখনোই উচিত নয়।

ডাক্তারের পরামর্শ কখন নিতে হবে?

১৬ বছর বয়সের পরেও পিরিয়ড শুরু না হলে বা ১৪ বছর বয়সেও শরীরে কোনো নারীসুলভ লক্ষণ ফুটে না উঠলে,  ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। এরকম হওয়ার  সম্ভাব্য কারণ হয় সাধারণত হরমোনের তারতম্য, অপুষ্টি জনিত কারণে ওজন কম হওয়া, অত্যধিক শরীরচর্চা বা খেলাধূলা ইত্যাদি। প্রথমবার পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর নিয়মিত হতে একটু সময় লাগতে পারে। তবে একবার ঠিক হয়ে গেলে সাধারণত ২৮-৩০ দিন অন্তর ঋতুচক্র দেখা দেয় এবং ৩-৭ দিন স্থায়ী হয়। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন পিরিয়ডের প্রথম দিকে সর্বাধিক ৬ মাসের মধ্যেও যদি ঋতুস্রাব নিয়মিত না হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই গাইনোকলিজস্টের পরামর্শ নিতে হবে৷

পিরিয়ড সম্পর্কিত সতর্কতা

পিরিয়ড নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার কারণ হলো সচেতনতার অভাব এবং অন্ধ কুসংস্কার৷ সমীক্ষায় জানা যায়, ঋতুস্রাব নিয়ে লজ্জার কারণে আমাদের দেশের গ্রামীণ অঞ্চল গুলিতে বসবাস করা ২৩ শতাংশ মেয়ে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর পরেই স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। সেইসব মেয়েদের ২৮ শতাংশই ঋতুস্রাব চলাকালীন যথাযথ সুরক্ষার অভাবে স্কুলে যেতে অসুবিধা বোধ করে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। এ রাজ্যের গ্রামীণ এলাকা গুলিতে ৫০ শতাংশেরও কম মেয়ে যথাযথ সুরক্ষার সুযোগ পায়। তাই সবার আগে প্রয়োজন এই বিষয়ে সচেতন থাকা। বিভিন্ন স্কুল গুলিতে আজকাল পিরিয়ড নিয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্প হচ্ছে। কোনো কোনো স্কুলে স্যানি্টারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনও বসানো হয়েছে। একমাত্র সচেতনতাই কৈশোরে পিরিয়ড সম্বন্ধীয় জটিলতা গুলি দূর করতে পারবে৷

Srikona Sarkar

As a Student of Science, I found the subject of both mental and physical wellness quite intriguing in my school days, Which was further sharpened with the completion of Graduation in Molecular Biology in my College. As The whole world, right now is battling with the greatest pandemic of human civilization, I cannot help myself from helping out people by providing the exact solution for their mental and physical profoundness so that, they can always discover a new tunnel of hope and light, even when their movement is restricted within the boundary of the walls.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago