Categories: হৃদরোগ

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সার্জারির ভূমিকা

Published by

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তা সকলেই জানেন। উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা। তাই উচ্চ রক্তচাপকে বশে আনতে না পারলে বিপদ। জানলে অবাক হবেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাই ব্লাডপ্রেশারকে কাবু করার জন্য অপারেশনেরও সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। প্রশ্ন হল কোন অপারেশনে এমনটি করা সম্ভব। তবে তার আগে হাইপারটেনশন কী সেই সম্পর্কে বিশদে জানা যাক।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যার নাম এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন। জানলে অবাক হবেন মাত্র ৫ ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের পিছনে থাকতে পারে নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা। এই ধরনের সমস্যাকে বলে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। দেখা গিয়েছে রেনাল আর্টারি, স্টেনোসিস, হাইপার অ্যালডোস্টেরোনিজম, কুশিঙ্গ’স সিনড্রোম, কোয়ার্কটেশন অব অ্যাওটার মতো বেশকিছু অসুখের কারণেও বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ।

সার্জারি ও উচ্চ রক্তচাপ

সার্জারি মূলত করা হয়ে থাকে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল হাইপারটেনশনেরও অপারেশন করে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

i. রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস: কিডনির কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য দরকার পড়ে কিডনির অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের। কিডনিতে রক্ত সরবরাহের কাজটি করে কিডনির ধমনী। কোনও কারণে ওই ধমনী সরু হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় মাত্রায় রক্ত কিডনিতে পৌঁছাতে পারে না। ফলে কিডনির কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তার ফলে কিডনির যেমন ক্ষতি হয়, তেমনই সমগ্র শরীরে ব্লাডপ্রেশারও বাড়ে। এই সমস্যার সমাধানে রোগীর কিডনির ধমনীতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কুঁচকিতে ছোট ফুটো করা হয়ে থাকে। এরপর ওই ছিদ্র মারফত একটি সরু নল বা ক্যাথিটার প্রবেশ করিয়ে কিডনির ধমনীতে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর পর নলের মুখের কাছের বেলুনটিকে ফুলিয়ে দেওয়া হয়। ধমনী প্রসারিত হয়। প্রয়োজনে স্টেন্টও বসানো যেতে পারে। সাধারণত প্রসিডিওরের পরের দিন রোগী বাড়ি ফিরতে পারেন।

ii. হাইপার অ্যালডোস্টেরোনিজম: শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে বেরয় অ্যালডোস্টেরন হরমোন। এই গ্ল্যান্ডে টিউমার থাকলে অ্যালডোস্টেরন বেশি নির্গত হতে থাকে। এই সমস্যাকেই বলে হাইপার অ্যালডোস্টেরোনিজম। এই হরমোন শরীরে সোডিয়াম ধরে রাখার কাজটি করে। ফলে হরমোন বেশি বেরলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রাও বেশি হবে। দেহে শরীরে সোডিয়ামের আধিক্য হলে রক্তচাপও বাড়বে। সেক্ষেত্রে টিউমারটিকে ল্যাপারোস্কোপি সার্জারির সাহায্যে বাদ দেওয়া হয়।

iii. কুশিঙ্গ’স সিনড্রোম: অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে এক বিশেষ ধরনের টিউমার হলে কর্টিজল হরমোন মাত্রাতিরিক্ত হারে নির্গত হতে পারে। এই অসুখের নাম কুশিঙ্গ’স সিনড্রোম। এই হরমোনের আধিক্যও শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়ায়। ফলে বাড়ে রক্তচাপ। এক্ষেত্রেও ল্যাপারোস্কোপি সার্জারির সাহায্যে টিউমারটি বাদ দিলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।

iv. কোয়ার্কটেশন অব অ্যাওটা: হৃৎপিণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা মহাধমনী শরীরের সব জায়গায় রক্ত সরবরাহ করে। মহাধমনী সরু হয়। ফলে রক্তচলাচলে সমস্যা দেখা দেয় এবং রক্তচাপ বাড়ে। এক্ষেত্রেও ক্যাথিটারের মাধ্যমে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয়। প্রয়োজনে বসানো হয় স্টেন্ট।

v. এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিডনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। মস্তিষ্ক থেকে আসা কিছু স্নায়ু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজে সাহায্য করে কিডনিকে। স্নায়ুগুলি কিডনির রক্তনালীর চারদিকে জালের মতো বিস্তৃত হয়ে কিডনির গভীর পর্যন্ত যায়। স্নায়ুগুলি কিডনিকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এসেনশিয়াল হাইপারটেনশনে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে আবার স্নায়ুগুলি অদ্ভুত আচরণ করে। তাই এমন সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর কিডনির নার্ভগুলির সঙ্গে কিডনির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলে ব্লাডপ্রেশারও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। পায়ের মধ্য দিয়ে ক্যাথিটার প্রবেশ করিয়ে কিডনি পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন প্রক্রিয়ায় বা আলট্রাসাউন্ড দিয়ে নার্ভগুলিকে কেটে বাদ দেওয়া হয়। পদ্ধতিটির নাম রেনাল ডিনার্ভেশন। এক্ষেত্রে প্রসিডিওরের পরদিন রোগী বাড়ি যান। অবশ্য এখনও এই পদ্ধতি পরীক্ষামূলক স্তরেই রয়েছে।

সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের লক্ষণ

অল্প বয়সেই হঠাৎ করে রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে, ৫০ বছর বয়সের পর হঠাৎ করে প্রেশার অনেকটা বৃদ্ধি পেলে, চিকিৎসায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেই ছিল, কিন্তু তারপর হঠাৎই রক্তচাপ বেড়ে গেলে ও কোনওভাবেই নিয়ন্ত্রণে না এলে চিকিৎসক সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের কথা সন্দেহ করেন। এরপর প্রয়োজন মতো অ্যাঞ্জিওগ্রাফি, এমআরআই, আলট্রা সাউন্ড ইত্যাদি পরীক্ষা করানো হয়। এক্ষেত্রে সার্জারির আগে চিকিৎসক বুঝতে চেষ্টা করেন যে, সার্জারি করে কতটা উন্নতি সম্ভব। রোগীর শরীরিক পরিস্থিতিও একটা বড় শর্ত। তাই সবদিক খতিয়ে দেখে তবেই নেওয়া হয় সিদ্ধান্ত।

কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে ব্লাডপ্রেশার ?

সেকেন্ডারি হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে অপারেশনের পর প্রেশার অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে প্রেশার কমানোর ওষুধ আর খেতেই হয় না। ওষুধের ডোজ কমে যায়। এসেনশিয়াল হাইপারটেনশনে রেনাল আর্টারি ডিনার্ভেশনের পর ধীরে ধীরে ব্লাডপ্রেশার কমে। তবে সামান্য মাত্রায় ওষুধ খেতে হতে পারে।

জীবনযাত্রা

শাকসব্জি বেশি খেতে হবে। বেশি নুন দেওয়া খাদ্য ও কাঁচা নুন খাওয়া চলবে না। আর করতে হবে এক্সারসাইজ

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago