অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিস(Acute appendicitis) – সময় মত অপারেশন না হলে রোগীর জীবনহানিও ঘটতে পারে – কথাকলি পোদ্দার

Published by

অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিস বিষয়টি জানার আগে অ্যাপেনডিক্স কি, এটা জানা প্রয়োজন। অ্যাপেনডিক্স তৃণভোজী প্রাণীদের ঘাস হজম করতে সাহায্য করে। মানব শরীরে এই অঙ্গটির তেমন কোন কার্যকলাপ নেই। তবে সমস্যা তৈরিতে এর জুড়ি মেলা ভার। অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিস এমনই একটি গুরুতর এবং ততোধিক আকস্মিক সমস্যা । এর উপসর্গগুলি এক বা দুই দিনের মধ্যে প্রকাশ পায় এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা না করালে বা ফেলে রেখে দিলে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করে এমনকি ফেটে অবধি যেতে পারে। এটি এমন একটি সমস্যা যেটি যে কোন বয়সের পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে হতে পারে।

অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিস কি কারণে হতে পারে?

মানবদেহে অ্যাপেনডিক্স (appendicitis) পৌষ্টিকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সংযোগস্থলে অবস্থান করে এবং এটি 2 থেকে 20 সেমি. পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের হতে পারে। অ্যাপেনডিক্সের সামনের দিকে একটি দরজার মতো অংশ থাকে যাকে ইলিওসিক্যাল ভালভ ( Ileocecal valve ) বলে। এই অংশ দিয়ে অনেক সময় শরীরের বর্জ্য পদার্থ, মাছের কাঁটা, বা অন্যান্য জিনিস অ্যাপেনডিক্সের ভিতর ঢুকে পড়ে। এর ফলে প্রদাহ বা ইনফেকশন তৈরি করে এবং ফুলে ওঠে । 

অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিসে কি ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে পারে?

অ্যাপেনডিক্সের (appendicitis) ক্ষেত্রে প্রথম দিকে তলপেটের ডানদিকে নীচের দিকে, মাঝখানে বা চারপাশে ব্যথা, এছাড়াও খিদে কমে যাওয়া, বমিভাব, পেট ফুলে ওঠা, পেট ব্যথার সাথে বমি হয়ে যাওয়া, হালকা জ্বর ইত্যাদির মতো সাধারণ উপসর্গ গুলি দেখা যায়। সময়ের সাথে সাথে লক্ষণ গুলি আরো জটিল হতে পারে। এগুলির মধ্যে তলপেটে যন্ত্রণা খুবই সাধারণ সমস্যা।

অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিসের ডায়াগনসিস বা রোগ নির্ণয়  কিভাবে করা হয়?

চিকিৎসকরা রোগীর লক্ষণ সমূহ পর্যবেক্ষণ করেই অনেকাংশে রোগ নির্ণয় করে ফেলেন । রোগের লক্ষণ ও শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় সম্ভব না হলে আল্টাসনোগ্রাফি বা পেলভিক কনট্রাস্ট এনহ্যান্স সিটি স্ক্যান এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। আল্টাসনোগ্রাফির তুলনায় সিটি স্ক্যান বেশি নির্ভুল। তবে শিশু বা গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে আল্টাসনোগ্রাফি করা হয় কারণ সিটি স্ক্যানের ক্ষেত্রে তেজষ্ক্রিয়তা জনিত ঝুঁকি বেশি থাকে। নিউমোনিয়া এবং  অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিসের লক্ষনগুলিতে বেশ কিছু সাদৃশ্য থাকার কারণে অনেক সময় চিকিৎসকরা একটি বুকের এক্স-রে করতে বলেন।

অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিস চিকিৎসা কিভাবে করা হয় ?

অ্যাপেনডিসাইটিসের চিকিৎসা জরুরী ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে। কারণ এটা একটা এমন জরুরী অবস্থা যা রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা অবধি সময় নাও দিতে পারে। যদি অ্যাপেনডিক্স উপাঙ্গটি ফেটে যাবার আগেই অপারেশন করে ফেলা হয় তাহলে তার জীবনের ঝুঁকি অনেকটা কম। কিন্তু একবার যদি অ্যাপেনডিক্স পেটের মধ্যে ফেটে যায় এবং তার ফলে অ্যাপেনডিক্সের ভিতরের পুঁজ পেটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে তা জীবনহানির মতো জটিল পরিস্থিতিও তৈরী করতে পারে। এই অবস্থাকে পারফোরেটিভ পেরিটোনাইটিস (Perforation peritonitis ) বলে। যদি ডায়াগনসিসের সময় অ্যাপেনডিক্সের কোন রকমে অসংগতি ধরা পড়ে তাহলে অ্যাপেনডিক্সেটি ফেটে পড়ার আগেই সত্বর সার্জারির মাধ্যমে অ্যাপেনডিক্স কেটে বাদ দেওয়া হয়। 

এই সার্জারি বা অপারেশন নানা রকম ভাবে করা যেতে পারে যেমন,  ওপেন অ্যাপেনডিসেকটমি অথবা অত্যাধুনিক মাইক্রো সার্জারি বা ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে করা হতে পারে। তবে অ্যাপেনডিক্স ফেটে গেলে মাইক্রো সার্জারি বা ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না । অ্যাপেনডিক্স ফেটে যাওয়া অবস্থায় বা পারফোরেটিভ পেরিটোনাইটিস অবস্থা ধরা পড়লে কনভেনশনাল ওপেন ল্যাপারোটমির দ্বারা পেটের সমস্ত জায়গা থেকে পুঁজ গুলিকে ধুয়ে বের করে অ্যাপেনডিক্সকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। 

অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিস ডায়াগনোসিসে কিছু  জটিলতা  ও সাবধানতা

একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন, তলপেটে বা পেটের ডানদিকে নীচের দিকে ব্যথা হলে ফেলে না রেখে দ্রুত একজন উপযুক্ত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তারপর পরবর্তী ধাপে এগোনো দরকার। অনেকে সময় দেখা যায় অ্যাপেনডিক্স ছাড়াও আরো অনেকগুলো রোগ রয়েছে যেগুলোতে নাভির চারপাশে বা পেটের ডানদিকে ব্যথা করে থাকে; যেমন ওভারিয়ান টিউমার, ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন, পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ বা অ্যাপেনডিক্সের অস্বাভাবিক অবস্থান (রেট্রোসিক্যাল অ্যাপেনডিক্স / retrocecal appendicitis) অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিসের সাথে অনেক সময় গুলিয়ে যেতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শে আল্টাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে রোগ নির্ণীত হওয়াটা সবার আগে জরুরী। সেটা না করলে অনেক সময় দেখা যেতে পারে যে রোগটিকে আমরা অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিস বলে ভুল করছি সেটি হয়ত অন্য কোন রোগ। অ্যাপেনডিক্সের টিউমারও অনেক সময় অ্যাকিউট অ্যাপেনডিসাইটিসের মতন লক্ষণ প্রকাশ করতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যাপেনডিক্সের সিকাম বা কোলনের একটি বিরাট অংশ রাইট কেমিকোলেক্টমীর ( right colectomy ) মাধ্যমে বাদ দেওয়া দরকার হয়ে পড়ে। সেজন্য তলপেটে ব্যথা হওয়া মাত্রই ডাক্তার দেখানো, সঠিক ডায়াগনসিস ও প্রয়োজনে সত্বর অপারেশন করানো একান্ত দরকার। সময় মতো অপারেশন না হলে রোগীর জীবনহানিও ঘটতে পারে।

Kathakali Poddar

Hi! I am Kathakali! I am a Graduate of Science, where I majored in Botany. Currently, I am living in Kolkata. I can offer my readers a platform to source answers, knowledge, opinion, support, and/or guidance. I will add my research, opinion, and such to the larger wealth of health information.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago