সাধারন ভাষায় ফাইব্রয়েড হল জরায়ুর টিউমার, যা প্রধানত মহিলাদের ইউটেরাস বা জরায়ুতে তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে জরায়ুর বাইরের ও ভিতর প্রাচীর বরাবর ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো আকারে কখনো ছোট বা বড় হয়ে থাকে এবং এর থেকে তলপেটে ব্যাথা বা স্বাভাবিকের থেকে বেশি ঋতুস্রাবের সম্ভাবনা থাকে। অনেকসময় ইউটেরাসে ফাইব্রয়েড থাকলেও তার কোনো যথাযথ লক্ষণ দেখা যায়না অর্থাৎ শরীরে কোনোপ্রকার ব্যাথা বা অস্বস্তি হতে দেখা যায়না। তবে অনেকসময় এর উপসর্গগুলি এতটাই অস্বাভাবিক হয়ে থাকে যা সঠিক চিকিৎসা না করলে পরবর্তীকালে তা থেকে গর্ভধারণে অসুবিধা, ওজনবৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যাগুলি হতে পারে। যদিও ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার কেন হয় বা এর উৎস কি তা নিয়ে এখনো কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
১) ইন্ট্রামিউরাল ফাইব্রয়েড: এই ধরনের টিউমার মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমানে দেখা হয়। এটি জরায়ুর ভিতরের প্রাচীরে দেখা যায় এবং এর আকার বেশ বড় হয়। অনেক সময় এর আকার এতটাই বৃদ্ধি পায় যে পেটের একাংশে ফোলা ভাব স্পষ্টতই লক্ষ্য করা যায়।
২) সাবসেরাস ফাইব্রয়েড : জরায়ুর বহিঃপ্রাচীরে হয়, যাকে “সেরোসা” বলা হয়ে থাকে। এটি আকারে বৃদ্ধি পেলে জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩) সাবমিউকাস ফাইব্রয়েড : জরায়ুর মধ্য কোশপ্রাচীরে হয়ে থাকে, এই ধরনের ফাইব্রয়েড খুব কম সংখ্যক মহিলাদের মধ্যেই দেখা যায়।
ফাইব্রয়েড ইউটেরাস বা ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার কেন হয় তা বলা মুশকিল তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জরায়ুর টিউমার গঠনে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।
এছাড়াও বিশেষ কিছু ফ্যাক্টর থাকলে মহিলাদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী মহিলাদের ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ৩০ বছর বয়সে বা তার পরে ফাইব্রয়েড হতে দেখা যায়, এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলেও এটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফাইব্রয়েড যদি পরিবারের কারোর অর্থাৎ মা, ঠাকুমা বা দিদি –র মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে পুনরায় এই রোগটি হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।
ফাইব্রয়েড এর লক্ষণ মূলত নির্ভর করে টিউমারের সংখ্যা এবং আকারের উপর, যেমন সাবমিউকোসাল ফাইব্রয়েড এর ফলে ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হতে দেখা যায় এবং যার থেকে এবং গর্ভধারনে সমস্যা দেখা যায়।
যদি টিউমারের আকার ছোটো থাকে বা কেউ মেনপজে পৌঁছে গিয়ে থাকেন তাহলে সাধারণত ফাইব্রয়েড এর লক্ষণ অনুভব করা যায় না। ফাইব্রয়েড অনেকক্ষেত্রে মেনপজে এসে বা তার পরে ধীরে ধীরে নিজে থেকেই কমে যায়। কারণ হিসেবে বলা যায়, মেনপজে প্রধান দুটি স্ত্রীজনিত হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন এর মাত্রা কমে আসে ফলে তা ফাইব্রয়েড এর বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারেনা।
সংক্ষেপে লক্ষণগুলি উল্লেখিত করা হলঃ
ফাইব্রয়েড এর লক্ষণ অনেকসময় বোঝা যায় আবার অনেকসময় অনুভুত হয়না। তবে উপোরক্ত লক্ষণগুলি যদি দেখা যায় তবে তৎক্ষণাৎ একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি ডাক্তার কিছু অস্বাভাবিক বুঝে থাকেন তবে ইউ.এস.জি এবং পেলভিক এম.আর.আই করার পরামর্শ দিতে পারেন।
ওষুধ দিয়ে
চিকিৎসা হিসেবে বেশ কিছু হরমোন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয় যা মূলত যথা ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রন করে টিউমারে আকারকে সঙ্কুচিত করে রাখে।
ব্যাথা কমাতে anti-inflammatory pain relievers, যেমন Ibuprofen এর মতন ট্যবলেট দেওয়া হয়।
অনেক সময় জন্ম নিয়ন্ত্রক পিল বা বড়ির ব্যাবহার ও করা হয়।
সার্জারি
জরায়ুর টিউমারের প্রাথমিক স্তরে সার্জারির বিশেষ কোনো প্রয়োজন হয় না, তবে কিছুক্ষেত্রে যদি ফাইব্রয়েডের আকার এবং পরিমান বৃদ্ধি পায় তাহলে সার্জারি সাহায্য নেওয়া হয় , যাকে ডাক্তারি ভাষায় মায়োমেকটমি (myomectomy) বলা হয়ে থাকে।
অ্যাবডোমিনাল মায়োমেকটমির ক্ষেত্রে তলপেট চিরে জরায়ুর থেকে ফাইব্রয়েডগুলিকে বা টিউমারকে কেটে আলাদা করা হয়, যদিও এই একই জিনিস লেপারোসকপির মাধ্যমেও করা হয়ে থাকে অর্থাৎ বড়ো আকারে পেট না চিরেও ছোট ছিদ্রের মাধ্যমেও টিউমারটি কেটে বাদ দিয়ে বাইরে বের করে আনা হয়।
সধারনত ফাইব্রয়েড যদি প্রাথমিক স্তরে থাকে তাহলে চিন্তার কোন কারণ থাকে না, তবে ধীরে-ধীরে এর আকার বাড়তে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিৎ, কারন এই সময়ে মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যারা গর্ভধারণ করতে ইচ্ছুক তাদের আগে থেকে ডাক্তারের সাথে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া একান্ত আবশ্যিক।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment