উদ্বেগ ( anxiety ) একটি সাধারণ আবেগ। এটি আপনার মস্তিষ্কের কোন মানসিক চাপ বা আসন্ন বিপদ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানানোর উপায় মাত্র। আসলে আমাদের মধ্যে অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগের শিকার হই নিজেদের অজান্তেই। কিছু ক্ষেত্রে এই অনুভূতি বেশ অনেকক্ষণ ধরে থাকে কিন্তু এই অনুভূতি যদি কখনো কারোর এমন ভাবে বেড়ে যায় যে তার দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত প্রভাব ফেলতে থাকে, তাকে তখন অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার / Anxiety Disorder বলে। তখন এর চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। আবার খুব বেশিদিন ধরে এই সমস্যার চিকিৎসা না করালে OCD (Obsessive-compulsive Disorder) -র মতন মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের প্রধান লক্ষণ বা উপসর্গ গুলি কি কি ?
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/01/Sleepwalking-2.jpg)
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের প্রধান লক্ষণই হলো তার অত্যধিক ভয় বা হতাশা। এর অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে আছে –
1. ঘুমের সমস্যা
- বুক ধড়ফড় করা
- স্থির থাকতে না পারা
4. কোন কিছুতে অতিরিক্ত ভয় পাওয়া, ঘাম দেওয়া, হাত পা কাঁপা
5. মাথাঘোরা
6. বমিভাব
- পেশি টানটান হয়ে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া
9. মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া
- মনঃসংযোগ করতে না পারা
- এক জিনিস নিয়ে বারবার ভেবে যাওয়া ও তা বন্ধ করতে না পারা
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের কারণ
অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের কারণ গুলি এখনও সুস্পষ্ট জানা না গেলেও কিছু ফ্যাক্টরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। যেমন-
- কারো কারো জিনেই এই ধরণের ডিসঅর্ডার অবস্থান করে।
- ভয় ও আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট কিছু সার্কিট থাকে। এই সার্কিট গুলিতে গোলযোগের কারণেও অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার আসতে পারে।
- পরিপার্শ্বিক চাপ যেমন কর্মস্থলে বা পরিবারের বা দাম্পত্য জীবনের নানা সমস্যা থেকে অ্যাংজাইটি আসতে পারে।
- অন্যান্য কোনও রোগের উপসর্গ যেমন হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড বা দীর্ঘদিন ধরে চলা কোন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অ্যাংজাইটি দেখা দিতে পারে।
- নির্দিষ্ট কোন বস্তু বা ঘটনার প্রতি আতঙ্ক বা ফোবিয়া
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/03/Fear.jpeg)
মনে রাখতে হবে, এই সমস্ত উপসর্গগুলি নিজে থেকে যায় না, বরং সময়ের সাথে-সাথে আরো খারাপ পর্যায়ে চলে যায়, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মুশকিল হয়ে পড়ে। কাজের ক্ষতি হয়, সম্পর্কগুলি বিঘ্নিত হতে থাকে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি শরীরের উপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তাই সমস্যাগুলি জটিল আকার ধারণ করার পূর্বেই একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করাটা একান্ত প্রয়োজন।
অ্যাংজাইটির চিকিৎসা
সাইকোথেরাপিস্ট যে যে উপায় গুলি অবলম্বন করতে পারেন –
“Talk Therapy” এর মাধ্যমে রোগীর সাথে কথা বলা হয় ও তার নিজের অনুভূতি গুলির কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়।
কোন ব্যক্তির নিজের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য পরিবারের সহযোগিতা দরকার হয়। যদি পরিবারের কারণে যখন মানসিক চাপ বেড়ে যায় তখনও সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হল এই ফ্যামিলি থেরাপি।
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/03/woman-talking-to-doctor.jpeg)
সাইকোথেরাপি একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া যার দ্বারা সমস্ত মানসিক অস্বাভাবিকত্বের পিছনের কারণ খুঁজে বের করা যায়। বিভিন্ন রকমের সাইকোথেরাপি যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়েরিয়াল থেরাপি (CBT), ডায়লেক্টিক্যাল বিহেভিয়েরিয়াল থেরাপি (DBT) ইত্যাদি বেশ কার্যকর।
এছাড়াও অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের টাইপের ওপর নির্ভর করে কিছু ওষুধ দেওয়া হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ –
অ্যানজাইঅলাইটিক ওষুধ : সাধারণ অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এইধরনের ওষুধ ভীষণ প্রচলিত। ক্রমাগত উদ্বেগের ফলে সাধারণ বোধ-বুদ্ধি যখন লোপ পেতে থাকে তখন এই ওষুধগুলি বেশ কার্যকর। মাথা ধরা, বমিভাবের মতন সামান্য কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া এই ওষুধগুলি বেশ নিরাপদ।
অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস : মানুষের উদ্বেগ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তখন Anxiety ছাড়াও অন্যান্য আরও কিছু মানসিক উপসর্গের সৃষ্টি হয় তখন তা দুর করতে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট -এর ব্যাবহার করা হয়।
বিটা-ব্লকারস ( Beta Blockers ) : রক্ত চলাচল বৃদ্ধি, রক্তচাপ কমানো এবং হার্টের পেশির ওপর চাপ কমাতে বিটা ব্লকারস প্রয়োগ করা হয়, যাতে বুক ধড়ফড়, হাত পায়ের কাঁপুনি কমে।
বেনজোডায়াজিপাইনস : চুড়ান্ত দুশ্চিন্তা কমানোর উদ্দেশ্যে অল্প মাত্রায় বেনজোডায়াজিপাইনস দেওয়া হয়, এই ওষুধ অল্প সময়ের জন্যও দেওয়া হয় কারণ দীর্ঘদিন ব্যবহারে আক্রান্ত রোগী ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়ে।
নিয়মিত চিকিৎসার সাথে বিকল্প হিসেবে যোগা, ব্যায়াম এবং নিউরোস্টিমুলেশানেরও ( স্নায়ু উত্তেজক) পরামর্শ দেওয়া হয়।
কী কী উপায়ে অ্যাংজাইটিকে দূরে রাখতে পারেন?
অহেতুক দুশ্চিন্তা লাঘব করতে কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করে নিজের জীবনশৈলীতে পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে; যেমন –
ফল মূল, শাকসবজির মতো সুষম খাদ্যবস্তু আহারে রাখুন। সঠিক মাত্রায় প্রোটিন ও ফ্যাট গ্রহণ করুন। খাদ্যতালিকা থেকে কফি বাদ দিন। কফি মেজাজ বদলে দেয় ও দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে দেয়। অত্যাধিক মিষ্টিজাত খাবার থেকে দূরে থাকলেই ভালো।
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/03/friends-1.jpg)
একা একা থাকলে দুশ্চিন্তা আরো বেশি গ্রাস করে। তাঁদের আরও বেশি প্যানিক অ্যাটাক হয়। তাই কোন কারণে ভয় পেলে, চিন্তা হতাশা হলে, পরিবার বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটান।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোন।
নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগব্যায়াম অভ্যাসে রাখুন।
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/03/Woman-doing-Yoga.jpeg)
একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন, চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা না করে কোন রকম ওষুধ খাবেন না। ওষুধের দোকান ( over the counter) থেকে কেনা ওষুধ বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ আপনার পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে অ্যাংজাইটির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর তত্ববধানে চিকিৎসা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ এবং সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাঝপথে বন্ধ করা কখনই উচিত নয়।