Search
Close this search box.

বাড়িতে স্ট্রোকের রোগীকে দেখাশোনা কীভাবে করবেন?

স্ট্রোক – এর কারণে রোগীর ব্রেনের কোষ নষ্ট হয়। এর ফলে রোগী শরীরের যে কোনও একদিকের হাত-পা আর আগের মতো নাড়াতে পারেন না। কিছু ক্ষেত্রে দুই দিকের হাত-পা এর সঞ্চালনও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। নিজের থেকে খাবার গিলতেও সমস্যা হয়। রাইলস টিউব দিয়ে খাবার খাওয়াতে হয়। আরও খারাপ অবস্থায় শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য গলায় ট্র্যাকিওস্টমি টিউব পরাতেও হতে পারে।

বাড়িতে স্ট্রোকের রোগীকে দেখাশোনা করার কয়েকটি ব্যবস্থা —

)  বাড়িতে একটি ফাউলার বেড আনিয়ে নিতে পারলে ভালো। এই ধরনের শয্যা ভাড়া পাওয়া যায়। ভাড়া নেওয়াই ভালো কারণ রোগী হয়তো কয়েকমাস পরে নিজের থেকেই হাঁটাচলা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আর ওই শয্যার কোনও প্রয়োজন হবে না।

২) বাড়িতে রোগীর জন্য আলাদা একটা ঘরের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়। কারণ রোগী হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক নয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হয়তো খানিকটা কম। ফলে তাঁর শরীরে একাধিক সংক্রমণ থাকতে পারে। এর উপর অন্য লোকের কাছ থেকে পুনরায় কোনও সংক্রমণ হলে রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। আলাদা ঘরের ব্যবস্থা সম্ভব না হলে, সেক্ষেত্রে তাঁর জন্য ঘরের একটি পরিষ্কার প্রান্ত নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

) স্ট্রোকের রোগীর নিজের থুতু গিলতে সমস্যা হয়। এই থুতু ফুসফুসে প্রবেশ করে নিউমোনিয়া তৈরি করতে পারে। এই ধরনের সমস্যাকে বলে অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া। ফাউলার বেড-এ তাই রোগীকে শুইয়ে মাথার অবস্থায় রাখতে হয় ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি কোণে।

) বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে রোগীকে স্বাভাবিক বিছানায় শোওয়াবেন না। কারণ রোগী নড়াচড়া করতে পারেন না। এক অবস্থানে দীর্ঘসময় ধরে শুয়ে থাকেন। সেখান থেকে বেড সোর হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সম্ভব হলে একটি এয়ার ম্যাট্রেস বা রিপল ম্যাট্রেস ভাড়া নিন। সাধারণ তোষকের উপরেই এই ম্যাট্রেস রেখে দেওয়া যায়। বাতাস ভরা বুদ্বুদের মতো অংশ থাকায় ত্বকের কোনও একটা অংশে প্রেশার পড়ে না। ফলে বেড সোর হওয়ার আশঙ্কা অনেকগুণ কমে যায়। এছাড়া দু’ঘণ্টা অন্তর রোগীকে একবার ডানদিক একবার বামদিকে কাত করে শোওয়াতে হবে যাতে একটানা ত্বকের একইদিকে ক্রমাগত প্রেশার না পড়ে। এই নিয়মে বেড সোর-এর সঙ্গে নিউমোনিয়াও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

) রোগীকে কি ক্যাথেটার পরানো আছে? সেক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে রোগীকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে জেনে নিন ওই ক্যাথেটার শেষ কবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। সাধারণ সিলিকন ক্যাথিটার অনেকদিন রোগীকে পরিয়ে রাখা যায়। তবে ফোলি ক্যাথিটার হলে কমপক্ষে ১৪ দিন অন্তর পরিবর্তন করা দরকার একজন দক্ষ নার্স বা চিকিৎসকের সাহায্যে। না হলে ক্যাথিটার থেকে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

) নিউমোনিয়া এবং অন্যান্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ওরাল হাইজিন বা মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জিভ পরিষ্কার করুন নিয়ম করে। সাদা ছোপ পড়ে গেলে ক্যান্ডিড ওরাল মাউথ পেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।

৭) নার্স বা আয়ার ব্যবস্থা করেছেন? ওই নার্স রাইলস টিউবে রোগীকে খাওয়াতে জানেন কি না, ট্র্যাকিওস্টমি পাইপ সাকশন করতে পারেন কি না তা জানা প্রয়োজন। কারণ রোগীর কফ ট্র্যাকিওস্টোমি পাইপে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর তা সাকশন করেই বের করা যায়। এছাড়া রাইলস টিউবে খাওয়ানোর আগে সিরিঞ্জের সাহায্যে টেনে দেখতে হবে পেটে কতটা মাত্রায় খাদ্য রয়েছে। বেশি খাদ্য থাকলে খাবার তখনই খাওয়ানো যাবে না। স্ট্রোকের রোগীর অন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণ একটু ব্যাহত হতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে খাওয়াতে হবে। নাহলে বাড়তি খাদ্য শ্বাসনালীতে চলে গিয়ে সেখান থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

) স্ট্রোকের রোগীর বিশেষ ধরনের ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। স্ট্রোকের রোগীর রিহ্যাবলিটেশনে সাহায্য করেন নিউরো ফিজিওথেরাপিস্ট। অন্য কোনও ধারার ফিজিওথেরাপিস্ট এই কাজ করতে পারেন না।

) খাবার গেলা এবং কথা বলার জন্য ভিন্ন ধরনের স্পিচ আন্ড সোয়ালো থেরাপিস্টের প্রয়োজন হয়। কারণ রোগী যদি নিজের থেকে কথা বলতে না পারেন বা খাবার গিলতে না পারেন তাহলে রাইলস টিউব বের করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

১০) ফাংশনাল ফিজিওথেরাপি, কগনেটিভ সাইকোলজিক্যাল ফিজিওথেরাপি ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ স্ট্রোক শুধু শরীর নয়, মনেও প্রভাব ফেলে। রোগী স্ট্রোক এবং তজ্জনিত শারীরিক পরিস্থিতির কারণে হতাশ হয়ে পড়তে পারেন। তাঁর মেজাজের পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন মনোবিদ তাঁকে সাহায্য করতে পারেন জীবনের স্রোতে ফিরতে।

শেষ কথা

অতি অবশ্যই ফলো আপ করাতে হবে। রোগীর শরীরে কী কী পরিবর্তন হচ্ছে, আরও কী কী করলে রোগী দ্রুত সুস্থ হবেন, আগামী দিনে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যাবে তা ফলোআপ ছাড়া জানা অসম্ভব।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক