এসেনশিয়াল ট্রেমর কেন হয় ও এই রোগের লক্ষণ

Published by

ট্রেমর কি?

ট্রেমর হল এক ধরনের কাপুনির সমস্যা । শরীরের কোনও অংশে নিয়মিত কাঁপুনি হলে তা কিন্তু রীতিমত চিন্তার বিষয়। ট্রেমর বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে আমাদের আজকের আলোচনা এসেনশিয়াল ট্রেমর নিয়ে। এই ধরনের ট্রেমর বা কাঁপুনি পশ্চুরাল ট্রেমর কিংবা ভঙ্গিমাগত কাঁপুনির অধীনস্থ সমস্যা। এক্ষেত্রে রোগী যখন বিশ্রামরত অবস্থায় থাকেন তখন হাত কাঁপে না। অথচ রোগী যখন হাতে ধরে কোনও কাজ করতে যান তখনই সমস্যা শুরু হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রোগী চায়ের কাপ হাতে ধরার সময় কাঁপুনি শুরু হয়। আবার সই করার সময় দেখা যায় হাত কাঁপতে শুরু করেছে। হাতের লেখা খারাপ হতে থাকে। সই মেলে না। এই রোগের কবলে পড়ে ব্যাঙ্কের চেক বইয়ে সই না মেলায় বড়সড় সমস্যায় পড়েছেন এমন বহু লোকই আছেন। পশ্চুরাল ট্রেমর নানা কারণে হতে পারে। দুশ্চিন্তা, হাইপারথাইরয়েডের সমস্যার জন্যও পশ্চুরাল ট্রেমর দেখা যেতে পারে। আবার স্নায়ুর সমস্যার কারণেও হতে পারে পশ্চুরাল ট্রেমর। পশ্চুরাল ট্রেমরেরই অন্যতম একটি শাখা হল এসেনশিয়াল ট্রেমর। এই রোগে কাজ করার সময় যেমন হাত কাঁপে, তেমনই গলার স্বর, মাথা কাঁপার মতো সমস্যাও দেখা যেতে পারে। দুই হাতেও এসেনশিয়াল ট্রেমর হতে পারে। এসেনশিয়াল ট্রেমর নিশ্চিতভাবে স্নায়ুগত সমস্যা।

এসেনশিয়াল ট্রেমর রোগের লক্ষণ

বেশিরভাগ রোগীর মধ্যে হাত অথবা আঙুলের কাঁপুনি দিয়েই রোগটি শুরু হয়। মনে রাখবেন এসেনশিয়াল ট্রেমর হলে যে শুধু হাতই কাঁপবে এমন নয়। অনেকের মাথা, চিবুক, বুকে এমনকী গলার স্বরেও কম্পন দেখা যেতে পারে। এগুলিও রোগের উপসর্গ।

বিস্তারিত

এসেনশিয়াল ট্রেমরকে আগে বিনাইন এসেনশিয়াল ট্রেমর বলা হতো। কারণ আগে মনে করা হতো, এই অসুখে রোজকার জীবনযাপনে কোনও সমস্যা তৈরি হয় না। পরবর্তীকালে আরও গবেষণায় দেখা যায়, চা, জল পান থেকে শুরু করে খাবার খাওয়ার মতো ছোটখাট কাজেও তীব্র সমস্যা তৈরি করছে এসেনশিয়াল ট্রেমর। বিশেষ করে যাঁরা অফিসে, ব্যাঙ্কে কাজ করেন তাঁদের সমস্যাটা আরও বেশি হয়। চেক-এ সই না মেলার কারণে প্রবল সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। এমনকী লেখালেখির মতো কাজে যাঁরা জড়িত তাঁদেরও প্রবল অসুবিধায় পড়তে হয়। বস্তুতঃ তাঁদের সমস্যাটা আরও বেশি।

এই কারণগুলির জন্যই পরবর্তীকালে বিনাইন শব্দটি তুলে নেওয়া হয়।এসেনশিয়াল ট্রেমরের ক্ষেত্রে অন্যান্য আরও কিছু সমস্যা দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রোগীর ছোট ছোট তথ্য স্মরণে রাখতে সমস্যা হয়। সিদ্ধান্ত নিতেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলি থাকলে সেক্ষেত্রে রোগটিকে একত্রে এসেনশিয়াল ট্রেমর প্লাস সিনড্রোম বলে।

কাদের ঝুঁকি বেশি?

 দেখা গিয়েছে ষাটোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে ১০ শতাংশের এসেনশিয়াল ট্রেমরের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। নারী এবং পুরুষ উভয়েই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নারী এবং পুরুষের মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় পুরুষদের এই রোগে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা গিয়েছে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। অর্থাৎ পঞ্চাশোর্ধ্ব বা ষাটোর্ধ্ব মানুষের যদি ১০ শতাংশের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে আশির্ধ্ব মানুষের এই রোগের পড়ার অনুপাত অনেক বেশি হয়। তবে কম বয়সিরাও এই সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।

এসেনশিয়াল ট্রেমর রোগের কারণ

পারিবারিক ইতিহাস একটা বড় কারণ হতে পারে। দেখা গিয়েছে এসেনশিয়াল ট্রেমরে ভোগা রোগীর মধ্যে ৩ ভাগের ২ ভাগের পরিবারে এই রোগ হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। এই সমস্ত বিষয় পর্যালোচনা করে বলা যায় অসুখটি হওয়ার পিছনে জিন বা বংশগতির হাত থাকতে পারে। তবে নির্দিষ্ট কোন জিনের কারণে এমন হয় তা জানা যায়নি। এসেনশিয়াল ট্রেমর রোগে আক্রান্ত মানুষের সন্তানেরও এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা একজন সুস্থ মানুষের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।

আধুনিক গবেষণায় জিনের পাশাপাশি আরও কয়েকটি কারণ উঠে এসেছে তা হল বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরের নিউরোন বা স্নায়ুকোষের সংখ্যাও কমতে থাকে। সেখান থেকেও এই অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দেখা গিয়েছে মস্তিষ্কের সেরিবেলাম অংশে কোনও সমস্যার কারণেই এসেনশিয়াল ট্রেমর হয়। এই কারণেই রোগীর হাঁটার সময় দেহের ভারসাম্যের অভাব ঘটতে পারে। এমনকী তথ্য মনে রাখতেও সমস্যা হয়। বিশেষ ধরনের পেট স্ক্যান করে দেখা গিয়েছে ট্রেমরের রোগীদের সেরিবেলদের অ্যাক্টিভিটি অনেক বেশি হয়।

রোগ নিয়ন্ত্রণ

রোগটি প্রতিরোধের সেরকম কোনও উপায় নেই। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। রোগীকে চিকিৎসক বেশ কিছু ওষুধ খেতে দিতে পারেন যেমন পোপ্রানোলোল, প্রিমিডন, টপিরামেট, গাবাপেনটিন ইত্যাদি। অতএব লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ওষুধের মাধ্যমে খুব সুন্দরভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago