জরায়ুমুখের ক্যান্সার (Cervical Cancer) – এর লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা – পায়েল ভড়

Published by

জরায়ুমুখের ক্যান্সার (Cervical Cancer) অন্যান্য  ক্যানসারের মত প্রাণঘাতী হলেও এর থেকে নিস্তার পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ কিন্তু শুধু মাত্র অসচেতনতার কারণে ভারতবর্ষ সহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে  প্রতি বছরই অসংখ্য মহিলা জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই রোগে আক্রান্ত অনেক মহিলারাই এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি বুঝতে পারেন না বা লক্ষণ দেখা দিলেও বিশেষ গুরুত্ব দেন না।দেখা গেছে যারা প্রথম থেকেই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসা করান, তাঁদের সুস্থ হাওয়ার সম্ভবনা মোটামুটি  ৯৫%। কিন্তু একটু অবহেলা করলেই এই রোগ থেকে সেরে উঠা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায় এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়ে । প্রাথমিক দিকে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের উপসর্গ দেখা দিলেও মহিলার বিশেষ গুরুত্ব দেন না লজ্জায় অনেক সময় পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করতেও দেরি করে ফেলেন, যে কারণে জরায়ুমুখের ক্যানসারকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ও বলা হয়ে থাকে।

জরায়ুমুখের ক্যান্সার নিয়েঅনেকেরই ভুল ধারনা আছে,  অনেকেই  মনে করেন যে, জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদেরই হয়ে থাকে। যদি এমনটি আপনিও মনে করে থাকেন তবে কিন্তু এটি ভুল ধারণা। যে কোন বয়সেই মহিলাদের জরায়ু ক্যানসার হতে পারে। তবে ২০ বছরের কম বয়সী মেয়েদের  এই  রোগ  হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আক্রান্তরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন। ৬০ বছরের পরও এ রোগ হতে পারে, তবে সংখ্যা তুলনামূলক কম। মেনপজের পর, ৫০ বছর বয়স বা এর চেয়েও বেশি বয়সের মহিলারা তুলনামূলক বেশি এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

জরায়ুমুখের ক্যানসারের (Cervical Cancer Symptoms)প্রাথমিক কিছু লক্ষণ

১। অনিয়মিত মাসিক বা রক্তপাত / মেনপজের পর রক্তপাত
২। যৌনসংগমের পর রক্তপাত
৩। ঘন ঘন মূত্রত্যাগ করা

৪। তলপেটে ব্যাথা বা চাপ বোধ হওয়া

৫। প্রস্রাবের সময় ব্যাথা হওয়া
উপরিউক্ত উপসর্গগুলি দেখা দিলেই দ্রুত একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেওয়াটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।   

জরায়ুমুখের ক্যান্সার (Cervical Cancer) হওয়ার কারণ

 হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) বা এইচপি ভাইরাস জরায়ুমুখের ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ, এটি যৌন সংক্রমণের ফলেই মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়ে । এই হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (HPV) শুধুমাত্র জরায়ুর মুখের ক্যান্সার নয় আরও বেশ কিছু ক্যান্সারের জন্যও দায়ী যেমন-

১। ভাল্ভার ক্যান্সার

২। মুখ ও গলার ক্যান্সার

৩। মলদ্বারের ক্যান্সার

৪। জরায়ুর ক্যান্সার

৫।পুরুষ লিঙ্গের ক্যান্সার

এযাবৎ প্রায় ১০০ ধরনের এইচপি ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই জরায়ু ক্যান্সারের জন্য অতটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে এইচপিভি-১৬, এইচপিভি ১৮, এইচপিভি-৬, এইচপিভি-১১ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত  নারীদের জরায়ু  প্রায়ই এইচপি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রের দরুন মোটামুটি  ১৮-২৪ মাসের মধ্যে জরায়ু প্রায় সব এইচপিভি ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এর জন্য কোনো চিকিৎসার বা চিন্তার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি জরায়ুতে এইচপিভি ভাইরাস দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়,সেক্ষেত্রে জরায়ুর কোষে পরিবর্তনের সূত্রপাত হয় এবং পরবর্তীকালে ক্যান্সারে পরিণত হয় ।

জরায়ুমুখের ক্যানসারে  আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কাদের বেশী  ?

 ১. অল্প বয়সে বিয়ে বা যৌনমিলন হলে

২. খুব অল্প বয়সে গর্ভধারণ এবং মা হলে

৩. অধিক সন্তান,

৪. বহুগামিতা,

৬. জরায়ুতে ভাইরাস আক্রমণ হলে (হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস) ।

৭ . স্থূলতা

৮ . জন্মনিন্ত্রক বড়ির খেলে

৯ . পরিবারের কারও জরায়ুমুখের ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস থাকলে

কি করে বুঝবেন আপনি এই রোগে আক্রান্ত কিনা ?

 এজাতীয় ক্যান্সার সনাক্তকরণের একটি সহজ পরীক্ষা পেপস স্মেয়ার টেস্ট বা প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট।জরায়ুমুখ থেকে রস (কোষ) নিয়ে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই পরীক্ষা অনকটাই অল্প খরচে করা যায় এবং যন্ত্রণাহীন। যদি পরীক্ষার পর সন্দেহজনক কিছু ধরা পড়ে তখন কোলোনোস্কপি এবং বায়প্সির মাধ্যমে ক্যান্সারের প্রকৃতি নিশ্চিত করা হয় । ক্যান্সার কতদূর ছড়িয়েছে তা দেখতে চিকিৎসকরা সিটি স্ক্যান করেও দেখে নেন।

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় কি ?

জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের সব থেকে ভালো উপায় হল টিকাকরন । এই টিকা মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা HPV ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ কাজ করে। নিয়মিত পেপস স্মেয়ার টেস্ট বা প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করার মাধ্যমেও এই রোগের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে দুরে থাকা সম্ভব। এছাড়াও বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে এই রোগ আমারা সহজেই আটকাতে পারি যেমন-

বাল্য বিবাহ রোধ;
অধিক সন্তান প্রসব থেকে বিরত থাকা
ধুমপান বা মদ্যপান থেকে দুরে থাকা
একাধিক যৌন সঙ্গী বর্জন করা  
সুষম খাবার গ্রহণ; দৈনিক তিন-চারবার ফল, শাকসব্জি, তরকারি খাওয়া; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও সামাজিক অনুশাসন মান্য করা এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এই ক্যান্সারের মুল চিকিৎসাই হল সার্জারি, সার্জারির মাধ্যমে জরায়ুর মুখ বা সম্পূর্ণ জরায়ু বা জরায়ু সহ সংলগ্ন বিভিন্ন অংশ এবং লিম্ফ নোড গুলি বাদ দেওয়া হয় , তবে সতাই ক্যান্সারের প্রকৃতি এবং বিস্তারের উপর নির্ভরশীল,, এছাড়াও অনেক সময় কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশান থেরাপির ও সাহায্যও নেওয়া হয়।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago