এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার- লক্ষণ ও চিকিৎসা

Published by

সমগ্র বিশ্বে, মহিলাদের মধ্যে যত রকম ক্যান্সার হয় তাদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার চতুর্থ । যদিও ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে এই রোগের হার অনেক কম। তবে চলমান শতাব্দীতে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার যে ভাবে বেড়ে চলেছে তাতে ভবিষ্যতে এই ক্যান্সার একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই ।

ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এর মতামত অনুযায়ী, প্রতি ১০০ জন মহিলা দের মধ্যে আনুমানিক ৩ জন এর জীবনের যে কোনো দশায় (সাধারণত ৫০-৫৫ বছর বয়সের পর ) এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।

৮০% এরও বেশি মহিলা এই ক্যান্সার নিয়ে ৫ বা তার বেশি কিছু সময় অবধি বেঁচে থাকতে পারেন । তবে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ধারণ এব্ং যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা হলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া অবশ্যই সম্ভব।

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সার কি?

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার হল এক রকমের ক্যান্সার যা জরায়ুর ভিতরের আস্তরণ বরাবর কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে  ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার ছাড়াও জরায়ুতে অন্যান্য ক্যান্সারও তৈরী হতে পারে, যেমন ইউটেরাইন ক্যান্সার, কিন্তু তা এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারএর তুলনায় কমই।

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের লক্ষণ কি?

এই ক্যান্সারের খুবই সাধারণ একটি উপসর্গ হলো যোনি থেকে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে রক্তক্ষরণ, যেটি এই ক্যান্সার রোগীদের ৯০% এর মধ্যে দেখা যায়।এ ছাড়াও-

১. দীর্ঘ মাসিক ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ

২. মাসিকের পরও রক্তপাত                                                                                              

৩. মেনোপজের পরেও জরায়ুর রক্তক্ষরণ

এছাড়াও অন্যান্য সাম্ভব্য উপসর্গগুলি হলো-

১.জল বা রক্ত যুক্ত যোনিস্রাব

২.তলপেটে ব্যাথা

৩.সঙ্গমের সময় যোনিতে যন্ত্রণা ।

তবে এই ধরণের উপসর্গগুলি থাকলেই ক্যান্সার হবে এমন নয়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলি স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত সাধারণ রোগ ও হতে পারে। তাই অবহেলা একেবারেই করা উচিত নয়, এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞই পারেন এর সঠিক মূল্যায়ন  করতে তাই উপরোক্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। 

এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারটি কোন স্টেজে আছে কিভাবে বুঝবেন

যে কোনও ক্যান্সারই উৎপত্তিস্থল থেকে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে । দেহে ছড়ানোর পরিমাণ ও অবস্থান অনুযায়ী একে চারটি ধাপে ভাগ করা যেতে পারে। 

স্টেজ ১. এই রোগটি যখন শুধুমাত্র জরায়ুতে অবস্থান করে 

স্টেজ ২. এই ক্যান্সার যখন জরায়ু এবং জরায়ুর নিম্নদেশের সরু জায়গাটিতে বা সারভিক্সে ছড়িয়ে পড়ে। 

স্টেজ ৩. ক্যান্সার যখন জরায়ুর বাইরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে,কিন্তু মলদ্বার বা মূত্রাশয়ের বাইরে নয় অর্থাৎ ফ্যালোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয়, যোনিদেশ এবং তার পার্শ্ববর্তী লসিকাগ্রন্থিগুলিতে  (Lymph nodes) অবস্থান করে। 

স্টেজ ৪. ক্যান্সার তলপেট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি আস্তে-আস্তে মূত্রাশয়, মলদ্বার বা বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

কি কি কারণেএন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার এর ঝুঁকি বাড়াতে পারে?

অনেক কারণই এই ক্যান্সারের  ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে, যেমন- 

১. টাইপ ২- ডায়াবেটিস

২. মেদবহুলতা

৩. পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (পিসিওএস)

৪. খাদ্যাভ্যাস

৫. বয়স

৬. জিনগত সমস্যা অর্থাৎ পরিবারের কারোর যদি এন্ডোমেট্রিয়াল বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার থেকে থাকে

৭. অন্য কোনো চিকিৎসার কারণে যদি তলপেটে রেডিয়েশন থেরাপি হয়ে থাকে

৮. জীবনের মোট মাসিকচক্রের সংখ্যা – অর্থাৎ আপনার মাসিক চক্রের সংখ্যা যত বেশি হবে আপনার ঝুঁকির পরিমাণ ও বেশি হবে। কারও মাসিকচক্র যদি খুব কম বয়সে শুরু হয় এবং মেনোপজ অনেক দেরিতে হয় তাহলে তার ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেক বেশি।

৯. অতীতে যদি ওভারিয়ান বা ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে থাকে। 

১০.  এমন কেউ যিনি একবার ও গর্ভবতী হননি তাঁর  ঝুঁকি তুলনায় অনেকটা বেশি যিনি অন্তত একবার সন্তানধারণ করেছেন।

কীভাবে এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের চিকিৎসা হতে পারে?

 এর চিকিৎসা রোগের স্টেজ , রোগীর স্বাস্থ্য ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে নিম্নলিখিত ভাবে হতে পারে-

১.  রেডিয়েশন পদ্ধতিতে ক্ষতিকারক ক্যান্সারের কোষগুলিকে মেরে ফেলা হয়।

২. হরমোন থেরাপি করা হতে পারে।এ ক্ষেত্রে শরীরের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হতে পারে।

৩. এই ক্যান্সারে আক্রান্ত বেশিরভাগ মহিলাকেই ডাক্তাররা জরায়ু সার্জারির মাধ্যমে বাদ দিয়ে দেবার পরামর্শ দেন যাকে হিস্টেরেক্টমী (Hysterectomy) বলে। অথবা Salpingo-oophorectomy এর মাধ্যমে  ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয় বাদ দেওয়া হয়। সার্জারির সময় ক্যান্সারের স্টেজ অনুয়ায়ী Lymph Nodes গুলি ও বাদ দেওয়া হতে পারে। 

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago