অস্টিওপোরোসিস কীভাবে প্রতিরোধ করবেন ?

Published by

অস্টিওপোরোসিস কি ?

অস্টিওপোরোসিস হল হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ । বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের দুর্বলতা আর হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত । বয়সের সঙ্গে ক্ষয়জনিত পরিবর্তনই হল এই সমস্যার মূল কারণ । সমীক্ষা বলছে, বিশ্বে বয়সজনিত কারণে হাড়ে যে রোগগুলি দেখা দেয় , তার মধ্যে অস্টিওপোরোসিস অন্যতম ।

অস্টিওপোরোসিস রোগে কারা বেশি আক্রান্ত হয় ?

পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এই অস্থিরোগে বেশি আক্রান্ত হন । মেনোপজ হওয়ার পরে মহিলারা সব থেকে বেশি অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হন । ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ হ্রাস পাওয়ার ফলে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে । সমগ্র বিশ্বে পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলাদের ৩ জনের মধ্যে ১ জন আক্রান্ত হন এই রোগে। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হন প্রতি পাঁচ জনে এক জন। আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।

অস্টিওপোরোসিস রোগের লক্ষণ

• একেবারে সুনির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ না থাকলেও রোগীর শরীরে দুর্বলতা বোধ হয়। একটু বেশি হাঁটাচলা করলেই দুর্বল অনুভব করেন রোগী।

• হাঁটু, কোমর, গোড়ালি, পায়ের তলায় ব্যথা হয়। পিঠেও হয় প্রবল ব্যথা।

• হাড়ের ভার বহন করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সামান্য চোটেই হাড় ভেঙে যায়।

• সামনে ঝুঁকে পড়া বা কুঁজো হয়ে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

• চলাফেরার গতি কমে যায়।

জটিলতা

অস্টিওপোরোসিসে সব থেকে বেশি সমস্যা দেখা দেয় গোড়ালি, মেরুদণ্ড, কব্জি, নিতম্ব ও কাঁধে। তবে শরীরের অন্যান্য অংশের হাড়েও জটিলতা তৈরি হতে পারে।

অস্টিওপোরোসিস এবং ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি-এর অন্যতম কাজ হল গৃহীত খাদ্য থেকে মানব শরীরে ক্যালশিয়াম জোগানে সাহায্য করা। ফলে ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে, এই প্রক্রিয়ারও ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে হাড়ের ক্ষয় দেখা দিতে পারে।

ঝুঁকি বৃদ্ধি

• সাধারণত বয়সকালে এই রোগ হতে পারে। তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে অস্টিওপোরোসিস বেশি হতে দেখা যায়। 

• শরীরের অন্য কোনও হাড় ভেঙে যাওয়া বা অন্য কোনও কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকলেও হতে পারে সমস্যা। 

• অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান, নিয়মিত শরীরচর্চার অভাব, অপুষ্টি, দেহে খনিজ লবণ বিশেষ করে ক্যালশিয়াম এর ঘাটতিও হতে পারে অস্টিওপোরোসিস-এর কারণ।

কিছু অসুখ অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেমন—
• রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
• মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা হ্রাস।
• পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কম।
• যাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে।
• যাঁদের শরীরে প্যারাথাইরয়েড হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিক বেশি।

• যেসব রোগে অনেকদিন শুয়ে থাকতে হয়— যেমন ব্রেন স্ট্রোক, এইচআইভি ইত্যাদি ।

• ব্রেস্ট ক্যান্সার ।

• ক্রোনস ও সিলিয়াক রোগ ।

• কিডনির সমস্যা ।

• কিছু কিছু ওষুধ ।

• হাড়ে বার বার আঘাত।

কিছু ওষুধও অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেমন—
• দীর্ঘসময় ধরে কর্টিকোস্টেরয়েড ট্যাবলেট খেলে।

• খিঁচুনি প্রতিরোধক ওষুধ খেলে।

• কিছু ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ সেবন ইত্যাদি।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা

অস্টিওপোরোসিস  হয়েছে কি না তা জানার জন্য ‘বোন মিনারেল ডেনসিটি’ পরীক্ষা রয়েছে। তবে সব থেকে নিশ্চিতভাবে রোগটি হয়েছে কি না তা বোঝার জন্য ডিইএক্সএ (ডুয়াল এনার্জি এক্স-রে অ্যাবজর্পশিওমেট্রি) পরীক্ষা করা যেতে পারে।

এছাড়া রক্তের ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি, হাড়ের এক্স-রে করে অস্টিওপোরোসিস রোগ হয়েছে কি না জানা যায়। 

অস্টিওপোরোসিস এবং পারিবারিক ইতিহাস

বংশে কারও অস্টিওপোরোসিস থাকলে, রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খানিকটা বাড়ে।  

কী ‌‌‌ধরনের খাবার খাওয়া দরকার?

অস্টিওপোরোসিসের প্রতিরোধের জন্য ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেমন দুধ, দই, চিজ। সামুদ্রিক মাছ খেতে পারলেও ভালো। খেতে হবে ডাল, সয়াবিনের মতো পুষ্টিকর খাবারও। 

রোগ প্রতিরোধ করার উপায়:

• পুষ্টিকর ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন-ডি যুক্ত খাদ্যগ্রহণ।

• নিয়মিত শরীরচর্চা। 

• শরীরের ওজন ঠিক রাখা। 

• ধূমপান ও মদ্যপান  বন্ধ করা।

রোগের চিকিৎসা?

সাধারণত ক্যালশিয়াম ও ভিটামিন-ডি ওষুধ খেতে হতে পারে। সাধারণত ভিটামিন-ডি এবং ক্যালশিয়াম ওষুধের তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু ব্যথা উপশমের ওষুধ খুব প্রয়োজন না পড়লে খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এই ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরচর্চা করতে হবে নিয়মিত। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম রয়েছে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। সেগুলি অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট-এর তত্ত্বাবধানে করতে হবে। 

অস্টিওপোরোসিস কি সারানো সম্ভব?

 ঠিকমতো ওষুধ, খাবার ও জীবনশৈলীর পরিবর্তনের মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব ও ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা শুরু করা হলে, ভবিষ্যতে হাড়ের ক্ষয় রোধ করা যায়। চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগকে প্রতিরোধ করা সর্বাগ্রে জরুরি।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago