চামড়ার ক্যান্সার (Skin cancer) শেতাঙ্গ দের মধ্যে হবার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও কৃষাঙ্গ বা ভারতীয়দের মধ্যেও স্কিন ক্যান্সারে আক্রান্তর সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্কিন ক্যান্সার, ত্বকে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাবের ফলে হয়। তবে, সূর্যের আলো যেখানে পড়ে না ত্বকের এমন কিছু অঞ্চলেও স্কিন ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি চামড়ার ক্যান্সারের জন্য মূলত দায়ী, সেটি প্রমাণিত।
যে বিষয়গুলি স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে –
একজন ব্যক্তির ত্বকের ক্যান্সারের ধরণ জানার উপায় হল ক্যান্সারটি ত্বকের কোন অংশ বা কোষ থেকে শুরু হচ্ছে তা জানা। বেসাল কোষ নামে পরিচিত কোষগুলি থেকে ক্যান্সার শুরু হলে বলা হয় ব্যক্তিটি বেসাল সেল কারসিনোমায় আক্রান্ত। ত্বকের যে কোষগুলি আমাদের গায়ের রঙ প্রদান করে তাকে বলে মেলানিন, জখন মেলানিন থেকে ক্যান্সারের সৃষ্টি হয় তখন তাকে বলা হয় মেলানোকারসিনোমা ।
এখন সবথেকে বেশি যেসব ক্যান্সার দেখা যায় এবং সেগুলি কীভাবে প্রকাশ লাভ করে তা দেখবো।
বেসাল সেল কারসিনোমা :- সমস্ত ধরণের স্কিন ক্যান্সারের মধ্যে অন্যতম একটি হল বেসাল সেল কারসিনোমা। এই ধরণের ক্যান্সার সাধারণত সাদা চামড়ার মানুষদের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে হয়। এক্ষেত্রে সাদা বা গোলাপি রঙের ঘা মোমের মতো ফোলা অংশ মাথার তালু, ঘাড়, বুক, হাত পা, তলপেট সহ সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এর শীঘ্র সনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বেসাল সেল কারসিনোমা শরীরের খুব গভীরে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা দেখায়। খুব বেশি দিন ধরে ফেলে রেখে দিলে এটি শরীরের বিভিন্ন নার্ভ এবং হাড়ে পর্যন্ত প্রবেশ করে সেগুলির ক্ষতি করে দিতে পারে।
স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা :- এটি চামড়ার যে কোন অংশেই হতে পারে। এটি প্রথমে শুরু হয় ঘা এর মাধ্যমে, যেগুলি চট করে শুকোতে চায় না।এগুলিকে অ্যাকটিনিক কেরাটোজেস (Actinic Keratoses) বলে, যা প্রথমে ক্যান্সারের পর্যায়ে থাকে না।বেশি দিন ধরে ফেলে রেখে দিলে এখান থেকে লাল বা খয়েরি রঙের ফোলা ফোলা অংশ সৃষ্টি যা কানের প্রান্তে, হাতে, মুখে, ঘাড়ে, বুকে, পিঠের থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে সারা দেহেই ছড়িয়ে পড়ে। পরে এটি চামড়ার গভীর অবধি পৌঁছিয়ে যায়। শীঘ্র সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা এই ক্যান্সারকে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া থেকে ও আরও গভীরে ক্ষত পৌঁছানো থেকে রক্ষা করতে পারে।
মেলানোকারসিনোমা:- এটি চামড়ার ক্যান্সার গুলির মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক। এটি খুব তাড়াতাড়ি শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। শরীরে ইতিমধ্যে থাকা কোন তিল বা আঁচিল থেকে বা ত্বকে কালো কালো ছোপের মাধ্যমে শুরু হতে পারে। এর শীঘ্র সনাক্তকরণ ও দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত আবশ্যক।
সর্বোপরি এটাই মনে রাখা দরকার,আপনি যদি আপনার ত্বকে কোনও রকম নতুন অন্যরকম দাগ, বা চুলকানি বা তা থেকে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি লক্ষ্য করেন তবে অবশ্যই কোন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান। যাতে কোনরকম ত্বক সংক্রান্ত রোগ শরীরে বিস্তৃতি লাভ না করতে পারে।
ত্বকের যদি কোনও সন্দেহজনক জায়গা পাওয়া যায় তবে চিকিৎসক প্রথমে ঘা অঞ্চলটির বা ফোলা অংশটির আকার, আকৃতি, রঙ এবং সেই সাথে কোনও রক্তপাত বা চামড়া উঠছে কিনা তা লক্ষ্য করে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করবেন।ত্বকের ক্যান্সার নির্ণয় সাধারণত ভিজ্যুয়াল পরীক্ষা দিয়ে শুরু হয়।ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা বাছাই করার সময় আপনার ডাক্তার এই বিষয়গুলি বিবেচনা করতে পারেন:
ডার্মাটোস্কপি:- চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ রোগীর ত্বকের সন্দেহজনক অংশটিকে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ মাইক্রোস্কোপ বা ম্যাগনিফাইং লেন্স ব্যবহার করতে পারেন, এই প্রক্রিয়াটিকে ডার্মাটোস্কোপি বলে।
বায়োপ্সি:– ত্বকের আক্রান্ত অংশের নমুনা সংগ্রহ করে তা বায়োপ্সি করা হতে পারে সেটি ক্যান্সারপ্রবণ কিনা। আর ক্যান্সার হলেও তার ধরণ কী।
ইমেজিং টেস্ট– নিকটস্থ লিম্ফ নোডগুলি আরও বড় হয়েছে কিনা, ক্যান্সার শরীরের হাড়ে বা অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে কি না তা পরীক্ষার জন্য কিছু ইমেজিং টেস্টও করা হয়। যেমন-
এই ইমেজিং পদ্ধতিগুলি নন-ইনভেসিভ এবং বেদনাহীন।
স্কিন ক্যান্সারের ফলে সৃষ্ট ঘায়ের আকার, প্রকার, গভীরতা, বিস্তার এবং অবস্থানের উপর নির্ভর রোগীর চিকিৎসা করা হয়। স্কিন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সহজেই ত্বকের ক্ষতিকারক ক্ষতগুলি কে অপসারণ করে এর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়, এই ক্ষতিকর ঘা বা ক্ষতগুলির চিকিৎসা বিভিন্ন ভাবে করা হয়ে থাকে, যেমন-
ফ্রিজি বা ক্রায়োসার্জারি (Freezing/Cryosurgery):- ত্বকের ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলিকে তরল নাইট্রোজেন এর মাধ্যমে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জমিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়। এর ফলে ত্বকে কোনও রকম ক্ষত ছাড়াই ক্যান্সারের কোষগুলিকে অপসারিত করা হয়। Acinic Keratosis এর চিকিৎসার ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সর্বাধিক দেখা যায়।
এক্সকিশনাল সার্জারি (Excisional Surgery) :- ত্বকের ক্যান্সারটি যদি বড় রকম ফোলা অংশ বা ক্ষতর সৃষ্টি করে সেক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে সেটিকে অপসারণ করা হয়।
মোহ্স সার্জারি ( Mohs Surgery) :- Mohs surgery একটি বিশেষ সার্জিকেল টেকনিক, যার মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত ত্বকের পাতলা স্তরগুলিকে একটির পর একটি অপসারণ করা হয় এবং পাশাপাশি ক্যান্সারের উপস্থিতি পরীক্ষা করে দেখা হয়। এটি ততক্ষণ পর্যন্ত চলে যতক্ষণ না ক্যান্সারমুক্ত সুস্থ ও স্বাভাবিক কোষযুক্ত স্তর পাওয়া যায়। এটি প্রায়শই দেহের এমন অঞ্চলে ব্যবহৃত হয় যেখানে যতটা সম্ভব ত্বক সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, যেমন নাকে।
এই পদ্ধতির মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ত্বকের পরিবর্তে ক্যান্সারজনিত কোষগুলিকে অপসারণ করা হয়।
কিউরিটেজ বা ইলেকট্রোডেসিকেশান বা ক্রায়োথেরাপি (Curettage and electrodesiccation or cryotherapy) :- Curette নামক বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলির চেঁচে তোলা হয় এবং পরে অবশিষ্ট ক্যান্সার কোষগুলিকে ধংস করতে electrocautery needle (একটি বৈদ্যুতিক সুঁচে) এর মাধ্যমে বাকি ক্যান্সার কোষগুলিকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
কেমোথেরাপি (Chemotherapy) :- ত্বকের একদম ওপরের স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ক্যান্সারের জন্য, ক্রিম বা অ্যান্টি-ক্যান্সার এজেন্টযুক্ত লোশনগুলি সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা গেলেও ত্বকের গভীরে এবং অন্যত্র ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে কেমোথেরাপির ব্যবহার করা হয়।
রেডিয়েশান থেরাপি (Radiation Therapy):- রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য এক্স-রে এর মতো উচ্চ-শক্তিযুক্ত শক্তি বিম ব্যবহার করা হয়। অস্ত্রোপচারের সাহায্যে ক্যান্সার পুরোপুরি অপসারণ করা সম্ভব না হলে রেডিয়েশন থেরাপি এর বিকল্প হতে পারে।
ফটোডায়নামিক থেরাপি (Photodynamic Therapy) :- এই চিকিৎসায় লেজার লাইট এবং ওষুধের সংমিশ্রণ দ্বারা ত্বকের ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
নিম্নলিখিত উপায়গুলি মেনে চললে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
1 এসপিএফ 30+ যুক্ত সানস্ক্রিনের দৈনিক ব্যবহার। মনে রাখবেন রোদে বেরোনোর সময় নয়, বেরোনোর অন্তত আধঘন্টা আগে সানস্ক্রিন মাখা উচিত।
2 রোদে সবসময় গা ঢাকা পোশাক, ইউভি-ব্লকিং সানগ্লাস এবং প্রশস্ত ঘেরাওযুক্ত টুপি বা ছাতা ব্যবহার
3 যখন প্রচণ্ড রোদ থাকে তখন বাইরে বেরোনো থেকে বিরত থাকুন।
4 গাড়ী এবং বাড়ির কাঁচের জানালায় সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি প্রতিরোধকারী আস্তরণ (Sun Control Glass Film) ব্যাবহার করা।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment