শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের এক ধরনের ব্যাধি হল পারকিনসন্স ডিজিজ (Parkinson Disease)। এই রোগের ক্ষেত্রে রোগলক্ষন খুব ধীরে ধীরে শুরু হয়, কখনও কখনও কেবলমাত্র হাতে হাল্কা কাঁপুনি ছাড়া আর কোনো লক্ষন দেখাই যায় না। কাঁপুনি ছাড়াও নড়াচড়ায় আড়ষ্টভাব, শক্তভাব ও নড়াচড়া আস্তে আস্তে কমে যাওয়া এই রোগের ক্ষেত্রে প্রধানত দেখা যায়। রোগের একদম প্রথম দিকে মুখের অভিব্যক্তিতে কোনো তেমন পার্থক্য দেখা যায় না। হাঁটার সময় হাতের দুলুনি বন্ধ হয়ে যায়, কথা জড়িয়ে যায়। এই রোগের লক্ষনগুলি সময়ের সাথে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। যদিও এই রোগ কখনোই সারে না, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে এর রোগলক্ষনগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কখনও কখনও ব্রেনের বিশেষ বিশেষ অংশের অস্ত্রোপচার করেও রোগলক্ষনের উপশম ও উন্নতির প্রচেষ্টা করা হয়।
পারকিনসন্স ডিজিজের রোগলক্ষনগুলি এক একজন মানুষের ক্ষেত্রে এক একরকম হয়ে থাকে। প্রথম দিকের লক্ষনগুলি প্রায়ই বোঝা যায় না। শরীরের একটা দিক আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সেই দিকটার অবস্থাই বেশি খারাপ থাকে। শরীরের অন্য দিকটাও আক্রান্ত হয়। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষনগুলি হল—
পরবর্তীতে আরও যে যে লক্ষনগুলি দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলি হল—
সমস্যা আরও গুরুতর হলে যে যে লক্ষনগুলি দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলি হল—
পারকিনসন্স ডিজিজের প্রথম দিকের রোগ লক্ষনগুলি সহজে ধরা পড়ে না।
এই রোগের সঠিক কারণ এখনও অজানা। বংশগতি ও প্রকৃতির নানা উপাদান এর জন্য দায়ী হতে পারে। কোনো বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শের ফলও এটা হতে পারে। কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন যে কোনো ভাইরাসের আক্রমণও এর কারণ হতে পারে। Lewy bodies নামক একপ্রকার অস্বাভাবিক প্রোটিন পারকিন্স ডিজিজের রোগীদের মস্তিষ্কে পাওয়া গেছে।
এই রোগের ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে রোগলক্ষনগুলি বাড়তে থাকে। অনেক ডাক্তাররা Hoehn & Yahr স্কেল ব্যবহার করেন এই রোগের পর্যায় পরিমাপের জন্য। এই স্কেলের মাধ্যমে রোগলক্ষনগুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়, ফলে রোগটি কতদূর এগিয়েছে সেটা চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন।
প্রথম পর্যায়
এই পর্যায়ের রোগলক্ষন এতটাই কম থাকে যেতা সাধারণত বোঝাই যায় না ফলে তা দৈনন্দিন জীবনে কোনো প্রভাবও ফেলে না। যে সামান্য রোগলক্ষনগুলি দেখা যায়, তা শরীরের এক দিকেই সীমাবদ্ধ থাকে।
দ্বিতীয় পর্যায়
প্রথম পর্যায় থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে কখনো কয়েক মাস এবং বছরও লেগে যায়। এই স্টেজের রোগলক্ষনগুলি হল—
মাংস পেশির শক্ত ভাবের জন্য সাধারণ কাজগুলো করতেও অনেক বেশি সময় লাগতে শুরু করে। যদিও এই পর্যায়ে ভারসাম্য হারিয়ে পরে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায় না। শরীরের দুই দিকেই রোগলক্ষন প্রকাশ পেতে শুরু করে এবং মুখের অভিব্যক্তির পরিবর্তন নজরে আসে।
তৃতীয় পর্যায়
এই স্টেজে রোগলক্ষনগুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে নজরে আসে। যদিও নতুন রোগলক্ষন তৈরি হয় না। সিম্পটমসগুলি এই সময় দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা তৈরি করতে শুরু করে।
শরীরের নড়াচড়া চোখে পড়ার মতো কমে যায়। ভারসাম্য বজায় রাখাও কঠিন হয়ে যায়, ফলে রোগী প্রায়ই পড়ে যায়। যদিও পারকিনসন্স ডিজিজের তৃতীয় পর্যায়েও রোগী কারোর তেমন সাহায্য ছাড়াই নিজের কাজ নিজে করে নিতে পারে।
চতুর্থ পর্যায়
এই পর্যায়ের পরিবর্তন ভীষণ ভাবেই লক্ষ্য করা যায়। ওয়াকার বা অন্য যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাঁটাচলা করা ও দাঁড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মাংস পেশির নড়াচড়া উল্লেখযোগ্য ভাবে ধীর গতির হয়ে পড়ে এবং একা একা থাকা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।
পঞ্চম পর্যায়
এই স্টেজে রোগলক্ষন সবথেকে বিপজ্জনক ভাবে প্রকাশ পায়। প্রতিমুহূর্তের চলা ফেরার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হয়। দাঁড়াতে পারাও কঠিন হয়ে পড়ে। হুইলচেয়ারের সাহায্য এইসময় একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই সময় রোগী হ্যালুসিনেট করতে শুরু করেন এবং confusion, delusion এর মতো সমস্যা দেখা যায়।
পারকিনসন্স ডিজিজ নির্ণয়ের নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা নেই। CAT Scan, MRI করা হয় শরীরের অন্যান্য সমস্যা নির্ধারণ করার জন্য। Dopamine Transporter scan ও করা হয়। এই পরীক্ষাগুলোর কোনোটাতেই পারকিনসন্স ডিজিজ ধরা পড়ে না, তবে শরীরের অন্যান্য সমস্যা ধরা পড়ে, যার ফলে ডাক্তারদের পারকিনসন্স ডিজিজ নির্নয় করতে সুবিধা হয়।
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম, সুষম খাদ্য এবং এক্সারসাইজ করতে দেওয়া হয় রোগীকে। স্পিচ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিক্যাল থেরাপি করা হয় যাতে রোগী কথা বলা ও মুভমেন্টকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। ওষুধের মাধ্যমে রোগের ফলে হওয়া মানসিক ও শারীরিক সমস্যাগুলি কে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
Levodopa এর মাধ্যমে ৭৫% ক্ষেত্রেই ভালো ফল মেলে। এটি পারকিনসন্স ডিজিজের সবথেকে কমন ট্রিটমেন্ট Dopamine agonists ব্রেনে ডোপামিনের কাজ কে নকল করে Anticholinergics ব্যবহার করা হয় প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম কে আটকানোর জন্য
সার্জারি
প্রধানত দুই ধরনের সার্জারি করা হয় —
Deep Brain Stimulation
এই সার্জারির সময় ব্রেনের বিভিন্ন অংশে ইলেকট্রোড ইমপ্লান্ট করা হয়। এর মাধ্যমে রোগলক্ষন কে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়
Pump–delivered therapy
এর মাধ্যমে Levodopa & Carbidopa এর মিশ্রন প্রেরণ করা হয়। এর জন্য অপারেশন করে ক্ষুদ্রান্তের কাছে একটি পাম্প স্থাপন করা হয়।
কিছু দরকারী কথা
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment