লিগামেন্ট কি? এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়ার লক্ষণ ও সেরে ওঠার উপায়

Published by

ফুটবল, বাস্কেট বল, কাবাডি, হা ডূ ডূ সহ অন্যান্য যেসব খেলায় শারীরিক কসরত বেশি করতে হয় সাধারণত সেই সব খেলার খেলোয়াড়দের এ সি এল (ACL) বা এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। হাঁটুর জোড়া ওপরের দিক থেকে ফিমার, প্যাটেলা এবং নিচের দিক থেকে টিবিয়া এই তিন ধরনের হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। হাঁটুতে চারটে লিগামেন্ট থাকে,  যেগুলি পায়ের ওপরের ও নিচের হাড় কে যুক্ত করে শক্তি প্রদান করে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখে । হাঁটুর চারটে লিগামেন্ট হল-  

১) এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট

২) পোস্টেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট

৩) মিডিয়ার কোল্যাটারাল লিগামেন্ট

৪) ল্যাটারাল কোল্যাটারাল লিগামেন্ট

আজ আমরা জেনে নেব  এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ইনজুরি বা এ সি এল সম্পর্কে মনে রাখার মত কিছু তথ্য

এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়ার লক্ষণ

১) হাঁটুর চারপাশে ও পেছনদিকে ব্যথা এবং ফুলে যাওয়া

২) আঘাত লাগার সময় কিছু ভেঙ্গে যাওয়ার শব্দ বা অনুভুতি

৩) হাঁটু আটকে যায় বা স্থিরতার অভাব দেখা দেয়

৪) আচমকা আঘাত লাগার কারনে গাঁটের ভেতর রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে হাঁটু ফুলে যায়

লিগামেন্ট ছিড়ে যাওয়ার লক্ষণ

এ সি এল ইনজুরি হওয়ার কারন

একটা হাড়ের সঙ্গে অন্য হাড়ের যেখানে সংযোগ ঘটে সেখানকার স্থিতিস্থাপক টিস্যু কে লিগামেন্ট বলে। এ সি এল হল সেই লিগামেন্ট যা ঊরুর হাড় বা ফিমার কে সিনবোন বা টিবিয়ার সাথে যুক্ত করে এবং এর ফলে হাঁটু স্থায়িত্ব পায়। যেসব কারনের জন্য এ সি এল আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে সেগুলি হল ;

১) খেলাধুলো বা ব্যায়াম করার সময় হাঁটুতে চাপ পড়ার কারনে প্রায়শই এ সি এল আঘাত প্রাপ্ত হয়

২) ফুটবল খেলার সময় সরাসরি হাঁটুতে ধাক্কা লাগলে এ সি এল ইনজুরি হতে পারে

৩) লাফিয়ে মাটিতে পড়বার সময় হতে পারে

লিগামেন্টের আঘাতের পরিমান নির্ণয়

ডাক্তার যখন  হাঁটু পরীক্ষা করেন তখন  আঘাত প্রাপ্ত  হাঁটু কে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় ঘুরিয়ে তার ফোলা এবং ব্যথার পরিমান বোঝার চেষ্টা করেন। শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি আঘাত পাওয়ার জন্য অন্য কোনো কারন দায়ী কিনা তার গুরুত্ব বুঝে কিছু টেস্ট করার কথা বলতে পারেন। যেমনঃ

১) এক্স রে (X-Ray) – হাড় ভেঙ্গেছে কিনা বোঝার জন্য এক্স রে করা হয়, কিন্তু লিগামেন্ট এবং ট্যানডনের মত নরম টিস্যু এর দ্বারা দেখা যায় না  

২) ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এম আর আই  (MRI)—- শরীরের নরম এবং কঠিন দু ধরনের টিস্যুই দেখতে পাওয়া যায় এই পরীক্ষার ফলে। শক্তিশালী চুম্বক  এবং বেতার তরঙ্গের দ্বারা হাঁটুর অন্যান্য টিস্যু তে আঘাতের পরিমান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়

৩) আলট্রা সাউণ্ড (USG) – শব্দতরঙ্গ হাঁটুর ট্যানডন , লিগামেন্ট এবং পেশীর নরম টিস্যু কে দেখতে সাহায্য করে

লিগামেন্ট (ACL) ইনজুরি এর চিকিৎসা

হাঁটুর ব্যথা কমিয়ে স্বাভাবিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে অষ্টিওপোরেসিসের প্রতিরোধ করাই থাকে চিকিৎসকের মুল লক্ষ্য। আঘাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে ডাক্তার রিহ্যাবিলিটেশন অথবা সার্জারির পরামর্শ দিতে পারেন , এছাড়া কিছু মেডিসিনও এ সি এল এর আঘাতের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়   

রিহ্যাবিলিটেশন ;

এটি মূলত ফিজিওথেরাপিস্টের তত্বাবধানে ব্যায়াম অনুশীলন।  হাঁটু কে স্থির রাখার জন্য ব্রেস ব্যবহারের পরামর্শ দেন  চিকিৎসক, তাছাড়া হাঁটুর ওপর যাতে শরীরের ওজন না পড়ে তার জন্য ক্রাচ ব্যবহারও করা যেতে পারে । এই প্রক্রিয়ায় হাঁটুর ফোলা এবং ব্যথা কমিয়ে হাঁটু কে নড়াচড়া করানো ও পেশী কে শক্তিশালী করানোর ওপর জোর  দেওয়া হয় । যারা খুব বেশী হাঁটাচলা বা নড়াচড়া করতে পারেন না তাদের জন্য রিহ্যাবিলিটেশন যথেষ্ট কার্যকরী ভাবে এ সি এল এর আঘাতের নিরাময় করতে পারে।

সার্জারিঃ

এ সি এলের অপারেশনের সময় সার্জেন ক্ষতিগ্রস্ত বা ছিঁড়ে যাওয়া লিগামেন্ট  বদলে, ট্যানডন টিস্যু স্থাপন করেন। এই প্রতিস্থাপিত টিস্যু কে গ্রাফট বলে যা হাড়ের সাথে পেশীর সংযোগ রক্ষাকারী লিগামেন্টের মতই কাজ করে । অন্য কোনো মানুষের হাঁটুর কোনো অংশ থেকে সামান্য পরিমান ট্যানডন টিস্যু কেটে নিয়ে এই অপারেশনটি করা হয়। এই গ্রাফট  নতুন লিগামেন্ট টিস্যু কে বেড়ে ওঠার জন্য একটা অবলম্বন হিসেবে কাজ করে ।  

ওষুধঃ

নতুন অথবা ক্রনিক দু ধরনের এ সি এল এর আঘাতের উপশমের জন্যই রয়েছে ওষুধ । এই ওষুধ যন্ত্রণা কমানোর কাজে সাহায্য করে । ন্যাপ্রোক্সেন ও আইব্রুফেন  এর মত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ওষুধ ও অ্যাসিটামিনোফেনের মত ওষুধ  ডাক্তার প্রেসক্রাইব করতে পারেন ।

এ সি এল ইনজুরি কিভাবে প্রতিরোধ করবেন

পায়ের পেশী কে শক্তিশালী ও প্রসারিত করাই এ সি এল এর আঘাত প্রতিরোধ করার সেরা উপায় , এই লিগামেন্ট কে সুরক্ষিত রাখতে কি কি উপায় অবলম্বন করবেন আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক ;

১) খুব বেশি গতিসম্পন্ন খেলা বা শারীরিক সংঘর্ষ হতে পারে এমন কোনো স্পোর্টস এড়িয়ে যান

২) হাই হিল জুতোর ব্যবহার বন্ধ করুন

৩) শারীরিক সংস্পর্শের খেলাধুলো যদি একান্তই  এড়াতে না পারেন সেক্ষেত্রে ক্ল্যাট দেওয়া জুতো পরুন

৪) নিয়মিত শরীরচর্চার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হাঁটু কে মজবুত এবং শক্তিশালী করুন

৫) যদি রিহ্যাবিলিটেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকেন একমাত্র  সে ক্ষেত্রেই হাঁটুর ওপর চাপ পড়তে পারে এরকম কোনো কাজ করার আগে ব্রেস পড়ুন ।

 সারা বছর হাঁটুর ব্যথায় কাতর থাকেন এমন মানুষের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে । আজকের এই ব্যাস্ততার যুগে রুটি , রুজির পেছনে ছুটতে গিয়ে নিয়মিত শরীরচর্চা এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করার কথা মানুষ প্রায় ভুলেই গিয়েছে । অস্থি রোগ সঙ্ক্রান্ত ডাক্তারের চেম্বারে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষারত মানুষের লম্বা লাইন আমাদের একথাই মনে করায় এবার সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে ,  যন্ত্রনাকাতর হাঁটুর কারনে সব আনন্দ বিসর্জন না দিয়ে একটু সতর্কতা আর দু একটা নিয়ম মেনে চললেই হাঁটুর ব্যথা কে চিরতরে বাই বাই জানানো খুব কঠিন নয় ।   

Avipsa Sengupta

I have been a passionate writer since my school days. Writing for magazines and columns was something I always craved for. My love for writing increased as I grew up. I have studied Mass Communication in my Graduation and Post Graduation and developed a love for analysis and exploration too. That is the sole reason I chose content writing as my profession as this is the only way I get a chance to explore different niches. I am working as a content writer for more than 6 years now. Presently, I am working as a Team Leader of the Content team at Skybound Digital LLC. I started contributing to this magazine because, I wanted to gain knowledge about various health and psychology-related issues and also enhance my skills in Bengali content writing.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago