থাইরয়েডের লক্ষণ কীভাবে বুঝবেন? কীভাবে হবে চিকিৎসা?

Published by

থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থান আমাদের গলায়। অ্যাডামস অ্যাপেল নামে যে অংশ আছে তার ঠিক নীচে।থাইরয়েডগ্রন্থিকে দেখতে অনেকটা প্রজাপতির মতো। এটি একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি। অর্থাৎ এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হর্মোন সরাসরি রক্তে মেশে।

থাইরয়েডের কাজ:

সরলভাবে বললে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে যে হর্মোন বেরয় তার নাম থাইরক্সিন। এই হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। এর ফলে যখনই থাইরয়েড হর্মোনের ঘাটতি হয় তখন আমাদের মেটাবলিজম কমে যায়। খাদ্য থেকে যে পরিমাণ এনার্জি উৎপাদন হওয়ার কথা তা হয় না। কারণ এনর্জি উৎপাদনের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়।এর ফলে রোগী অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ করেন।

সুতরাং থাইরয়েড হর্মোনের যদি কোনও অসামঞ্জস্য দেখা দেয় তাহলে তা আমাদের মেটবলিজমকে প্রভাবিত করবে ও শরীরে এনার্জির যে ভারসাম্য তা নেতিবাচক অর্থে প্রভাবিত হবে।এছাড়া আমাদের শরীরে যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ইত্যাদি খাদ্য উপাদান রয়েছে তার মেটাবলিজম বা শরীরের সমস্ত অংশে যথাযথ বিলিবন্টন হওয়ার ক্ষেত্রে থাইরয়েড হর্মোনের একটা ভূমিকা থাকে।

বাচ্চাদের ব্রেন ডেভেলপমেন্ট হওয়ার জন্য বা কিশোর বয়সে বা বয়ঃসন্ধির সময় উচ্চতা বাড়াতে থাইরয়েড হরমোনের ভূমিকা থাকে।

এমনকী থাইরয়েডের হর্মোনের ভারসাম্যের সমস্যা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হলে ভবিষ্যতে সন্তানধারণেও তা তৈরি করতে পারে জটিলতা। এমনকী মেনস্ট্রুয়েশনেও তৈরি করতে পারে জটিলতা।

থাইরায়েডের সমস্যার উপসর্গ

থাইরয়েডের দুই ধরনের জটিলতা দেখা যায়—

1. হাইপোথাইরয়েড: এক্ষেত্রে শরীরে থাইরয়েড হর্মোন কম তৈরি হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণ হিসেবে থাকে

 ক্লান্তি  অবসন্ন বোধ করা  উৎসাহের অভাবে  কোনও কাজে আগ্রহ থাকে না  ঘুম ঘুম ভাব বিরাজ করে শরীরে  বেশি ঘাটতি থাকলে অল্পেই শীত বাব  মুখ চোখে ফোলা ফোলা ভাব আসতে পারে  মেনস্ট্রুয়েশন অনিয়মিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে  তবে হ্যাঁ, অবসন্ন লাগছে মানেই কারও থাইরয়েডের ঘাটতি হচ্ছে এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।

2. হাইপার থাইরয়েড: থাইরয়েড হর্মোন শরীরে বেশি ক্ষরণ হতে শুরু করলে চিকিৎসা পরিভাষায় তাকে থাইরোটক্সিকোসিসবলে। এক্ষেত্রে যে যে লক্ষম দেখা দেয় সেগুলি হল—

 অতিরিক্ত বুক ধড়ফড়  শরীরে অস্বস্তি  ঘাম হয়  হাত পা কাঁপে  খিদে বেশি হওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যায়  লুজ মোশন হয়  কারও কারও ক্ষেত্রে গলায় যে থাইরয়েড গ্লান্ড থাকে তার আকারও বেশ বড় হয়ে যায়।

সঠিক সময়ে থাইরয়েডের চিকিৎসা হওয়া কেন দরকার?

পুরুষ এবং মহিলা নির্বিশেষে সকলকেই একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, থাইরয়ডে হর্মোনের সঙ্গে সরাসরি আমাদের মেটাবলিজমের বিশেষ যোগ আছে। হাইপোথাইরয়েডে বাচ্চাদের ডেভেলপমেন্টে সমস্যা হতে পারে।

হাইপার থাইরয়েডে থাইরক্সিন হর্মোন খুব বেশি বেরতে থাকলে হার্টের গতি অনিয়মিত হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় এই সমস্যাকে বলে থাইরয়েড স্টর্ম। অর্থাৎ ইরয়েড হর্মোন বাড়লে হার্টের উপরেও তার প্রভাব লক্ষ করা যায়।

মা হওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা

যদি কেউ পরিকল্পনা করে প্রেগন্যান্সি আনার চেষ্টা করেন, তাহলে থাইরয়েড হর্মোন স্বাভাবিক মাত্রায় থাকা উচিত। বিশেষ করে থাইরয়েড হর্মোন কম বা বেশি থাকলে তা সন্তানধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি আসা যেমন শক্ত হয়ে পড়ে তেমনই মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া কেউ যদি কনসিভ করেন ও তার পরে দেখা যায় তাঁর হাইপোথাইরয়েড রয়েছে তাহলে বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও পড়তে পারে প্রভাব। সুতরাং প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে থাইরয়েড হর্মোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

থাইরয়েডে টেস্ট

রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট করা হয়। টিএসএইচ, টি ফোর এবং টি থ্রি-এর মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, থাইরয়েডের মাত্রার হেরফের হলেও ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা আলাদা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই কোনও ব্যক্তির থাইরয়েডের মাত্রা কত এবং তা ওই ব্যক্তির শরীরে কোনও সমস্যা তৈরি করছে কি না তা আগে বোঝা দরকার।

কীভাবে হয় চিকিৎসা

মূল চিকিৎসা করতে হয় ওষুধ দিয়ে। হাইপোথাইরয়েড হলে বাইরে থেকে শরীরে থাইরয়েডের জোগান দিতে হবে। একটি ওষুধ খেয়েই সেই কাজ করা সম্ভব হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সারাজীবন ওষুধটি খেতে হয়। অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডের ক্ষেত্রে থাইরক্সিন হর্মোনের অতিরিক্ত ক্ষরণ কমানোর জন্য দেওয়া হয় ওষুধ।

সাধারণত ২ বছর ধরে ওষুধের ট্রায়াল দিয়ে দেখা হয়। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে তাতে অনেকের রোগ নিরাময় হয়েও যায়। তবে তারপরেও জটিলতা হলে রোগীকে রেডিওআয়োডিন থেরাপি দেওয়া যেতে পারে। হাইপারথাইরয়েডিজমের শেষ চিকিৎসা হল সার্জারি। তাতে গোটা গ্ল্যান্ডটিই বাদ পড়ে।

থাইরয়েডের অসুখে ডায়েট

খাওাদাওয়ার সেভাবে কোনও বিধিনিষেধ নেই। তাই সব কিছুই খেতে পারেন রোগী।

থাইরয়েডের সঙ্গে ব্লাড সুগারের সম্পর্ক

থাইরয়েডের অসুখ একটি অটোইমিউন ডিজিজ। অটোইমিউন ডিজিজ-এ কিছু অ্যান্টিবডিও তৈরি হয় যা রোগীর শরীরের স্বাভাবিক অঙ্গগুলিকে শত্রু বলে ভাবে। এক্ষেত্রে থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে অন্য সুগার থাকার তাত্ত্বিক সম্ভাবনা রয়েছে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

5 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

5 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

5 months ago