Search
Close this search box.

Written by

Health and wellness blogger

শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায়

শ্বেতী রোগ কোনো মারনব্যাধি না হলেও শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় আমাদের সর্বদা জেনে রাখা দরকার। আমরা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ত্বককে সুস্থ রাখতে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে কত কিছুই না করি। কিন্তু তারপরেও এমন কিছু কিছু সমস্যা আমাদের ত্বকে দেখা দেয়, যাতে আদতে আমাদের কারোরই কোনো হাত থাকেনা। তেমনই একটি ত্বকের রোগ বা সমস্যা হলো শ্বেতী। এটি ত্বকের একটি অদ্ভুত রোগ। তবে মোটেই তা ভয়াবহ রোগ নয়। এই রোগটির সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে শ্বেতীতে আক্রান্ত রোগীকে দেখলে অনেকে আঁতকে ওঠেন। শ্বেতী রোগটির মূল সমস্যা হলো মানসিক। কারণ ত্বকের সমস্যার শিকার হওয়ার কারণে আক্রান্ত রোগীরা বেশির ভাগই মানসিক অবসাদে ভোগেন। যদিও এর আরেকটি কারণ অবশ্যই সামাজিক। আজও এক শ্রেণির মানুষ সোজাসুজি হেয় করেন শ্বেতীতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যা একেবারেই অনুচিত ৷

শ্বেতী রোগ কী?

শ্বেতী বা ত্বকের সাদা দাগও এক ধরনের ‘অটো ইমিউন ডিজিজ’। আমাদের শরীরের ‘ইমিউন সিস্টেম’ বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনও অজানা কারণে নিজ শরীরের বিভিন্ন কোষ এবং কলাকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই জাতীয় রোগকেই বলা হয় ‘অটো ইমিউন ডিজিজ।’

শ্বেতী বা ভিটিলিগো নিয়ে সমাজে এখনও নানারকম কুসংস্কার আছে। শ্বেতীর ফলে সৃষ্ট ত্বকের সাদা দাগের সঙ্গে কুষ্ঠর কোনও সম্পর্ক নেই, অথচ স্রেফ এই ধারণা থেকেই আক্রান্ত মানুষটি ও তাঁর পরিবার মানসিক ভাবে ভয়ানক ভেঙে পড়েন। ডাক্তাররা বলেন,  দেখতে খানিক আলাদা রকম লাগা ছাড়া সেই অর্থে শ্বেতীর অন্য কোনও বিপজ্জনক দিকই নেই।

শ্বেতী কেন হয়?

আমাদের ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট কোষ থাকে। এই মেলানোসাইট কোষ মেলানোজেনেসিস পদ্ধতিতে মেলানিন তৈরি করে। আর এই মেলানিনই ত্বকের ফর্সা বা কালো রঙের কারণ। মেলানিনের মাত্রা বেশি হলে গায়ের রং কালো হয়, মাঝামাঝি হলে বাদামি আর কম হলে ফর্সা। মেলানিনের ক্রিয়াকলাপে কোনো বাধা সৃষ্টি হলে বা মেলানিনের মাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হলেই দেখা দেয় শ্বেতী। তবে শ্বেতী কিন্তু  বংশগতভাবে অর্থাৎ জিনঘটিত কারণেও হয়। প্রতি ১০০ জন শ্বেতী রোগীর মধ্যে ৩০ জনের ক্ষেত্রেই শ্বেতী হয় বংশানুক্রমিকভাবে। সে মাতৃকুল বা পিতৃকুল যাইহোক, কারও না কারও থেকে জিনের প্রভাবেই হয়। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে শ্বেতী সমস্যা দেখা দেয় শরীরে মেলানিনের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে ৷ বর্তমানে সারা পৃথিবীর প্রায় ১০ কোটি মানুষ শ্বেতীতে আক্রান্ত। শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনও এই রোগের শিকার হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর থেকে প্রতিবছর ২৫শে জুন তাঁর প্রয়ান দিবসে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড ভিটিলিগো (Vitiligo) ডে’ বা ‘বিশ্ব শ্বেতী দিবস’ হিসেবে।

তবে এছাড়াও আলতা, সিঁদুর বা প্রসাধনের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিকের প্রভাবে অথবা প্লাস্টিকের চটি দীর্ঘ দিন পায়ে পরলে অনেকেরই ত্বকে সাদা দাগ হতে দেখা যায়। চিকিৎসার পরিভাষায় যার নাম কেমিক্যাল লিউকোডার্মা।

কেন ধ্বংস হয় মেলানোসাইট কোষ?

শরীরের নিজ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেরাই মেলানোসাইট কোষকে ধ্বংস করে দেয় শ্বেতী রোগের ক্ষেত্রে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটলে রক্তে এক ধরনের শ্বেত কণিকা বা টি-লিম্ফোসাইট বেড়ে যায়। এরাই মেলানোসাইট কোষকে ধ্বংস করে। ভিটিলিগো, শ্বেতী বা লিউকোডার্মার ক্ষেত্রে একটাই উপসর্গ, তা হলো ধবধবে সাদা দাগ।

শ্বেতী শরীরের কোন অংশে হয়?
শ্বেতী

শ্বেতী সাধারণত মুখমণ্ডল, কনুই, বুকেই প্রথমে হতে শুরু করে। কখনও কখনও শ্বেতী চোখের পাশে, নাকের দুপাশে বা ঠোঁটের কোণে বা উপরের দিক দিয়েও দেখা দিতে শুরু করে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার শ্বেতী খুব একটা ছড়ায় না, মোটামুটি একটা বিশেষ জায়গাতেই থাকে। আবার বেশি সংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রেই মুখে, গলায়, বুকে, হাতে-পায়ে ছড়িয়ে পড়ে যার ফলে শরীরের আসল রঙ আর বোঝা যায় না।  দ্বিতীয় ধরনের শ্বেতীর দাগই মানুষকে আপাত ভাবে পৃথক করে তোলে। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে শ্বেতী ধরা পড়ে বয়স ১০ বছর হওয়ার পর।

শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় বা চিকিৎসা

শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে শ্বেতীকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় সেগমেন্টাল ও নন সেগমেন্টাল। নন সেগমেন্টাল শ্বেতী কখনও দ্রুততার সাথে আবার কখনও ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ত্বকের একাধিক স্থানে বিস্তৃত সেগমেন্টাল শ্বেতীর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে এবং এক বছর আর না বাড়লে পুরনো শ্বেতীর জন্য চিকিৎসা শুরু করা হয়।

ছোটো আকারের বা কম সময় যাবত যদি শ্বেতীর দাগ হয়ে থাকে,সেক্ষেত্রে মলম বা ওষুধে সেরে যেতে পারে। চিকিতসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম লাগানো বা ওষুধ নেওয়ার পাশাপাশি সকালের প্রথম দিকের রোদ লাগাতে হবে শরীরের শ্বেতী-আক্রান্ত স্থানে।

এছাড়া ন্যারো ব্যান্ড আল্ট্রাভায়োলেট (এনবি-ইউভি) ফোটোথেরাপির প্রয়োগে অনেক সময়েই শ্বেতী সেরে যায়। তবে, সারা শরীরে ছড়িয়ে থাকা অনেকদিনের শ্বেতীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা করে খুব ভাল ফল পাওয়া যায় না। ফোটোথেরাপিতে ব্যবহৃত ৩১১-৩১২ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘের বিশেষ অতি বেগুনি রশ্মি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রশ্মিগুচ্ছের নাম ন্যারো-ব্যান্ড অতিবেগুনি রশ্মি। এই আলোর মধ্যে আছে ঔষধি গুণ। নেই ক্ষতিকর দিক। এনবি-ইউভি ফোটোথেরাপির সময় চিকিৎসক  কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড এনবি-ইউভি ল্যাম্প থেকে খুব সাবধানে নির্দিষ্ট নিয়মে সামান্য সময়ের জন্য শ্বেতীর সাদা দাগের উপরে এনবি-ইউভি রশ্মি ফেলেন। অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাবে অতি জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অথচ অতি ধীর গতিতে পুনরায় ত্বকে মেলানিন তৈরী হয়, যার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক বর্ণ ফিরে আসে।

আধুনিক শ্বেতীর চিকিৎসায় যে ধরনের সার্জারি করা হয়, সেগুলি হলো ‘মাইক্রো পিগমেন্টেশন’, ‘স্কিন গ্রাফটিং’ বা ‘ব্লিস্টার গ্রাফটিং। যার মাধ্যমে সাদা ত্বককে আবার স্বাভাবিক করে তোলা যায়।

আরেকটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি হলো ‘মেলানোসাইট ট্রান্সফার’। যেখানে ত্বকের স্বাভাবিক অংশ থেকে মেলানোসাইট নিয়ে সাদা অংশে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, এর ফলে ত্বক ক্রমশ পুরনো রূপ ফিরে পায়।

তবে যত অল্প বয়সে শ্বেতীর চিকিৎসা করা যায় তত ভাল। শরীরের যে কোনও জায়গায় সাদা দাগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক