Search
Close this search box.

হাইপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা কমানোর জন্য কি কি খাবেন

হাইপ্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ একদিনে হয় না। দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ফলশ্রুতি হল হাইপারটেনশন। রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি হার্টের নানা আর্টারিকে অনমনীয় করে দেয় যা রক্তে এবং অন্যান্য অঙ্গে যথেষ্ট মাত্রায় অক্সিজেন পৌঁছনোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। হাইপারটেনশন মূলত লাইফস্টাইল ডিজিজ। ফলে উচ্চ রক্তচাপ থাকার অর্থ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার আশঙ্কাও বেড়ে যাওয়া। উদাহরণ হিসেবে করোনারি আর্টারি ডিজিজ, স্ট্রোক, হার্ট ফেলিওর, আট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, এবং ডিমেনশিয়ার কথা বলা যায়। তাই সুস্থ শরীরের জন্য আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধ শরীরের সমস্যা নিয়ন্ত্রণের একটি সহজ উপায় কিন্তু এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তাই সবাই এটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য খুব উপযুক্ত বলে মনে করেন না। তাই বেশি বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই বাড়িতে কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চলার চেষ্টা করুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বেছে নিন। হয়তো অনেকটাই সমস্যা কমতে পারে।

হাইপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা কমানোর জন্য কি কি খাবার খেতে হবে?

১) বেশি পটাসিয়াম এবং কম সোডিয়াম খান:- আপনার পটাসিয়াম খাওয়া বাড়ানো এবং লবণ কম খাওয়া আপনার রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। পটাসিয়াম আপনার সিস্টেমে লবণের প্রভাব কমায় এবং আপনার রক্তনালীতে উত্তেজনা কমায়। তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ক্ষতিকারক হতে পারে,তাই আপনার পটাসিয়াম গ্রহণ বাড়ানোর আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। অনেক খাবারে প্রাকৃতিকভাবে পটাসিয়াম বেশি থাকে। এখানে কয়েকটি পটাসিয়াম যুক্ত খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো। যেমন- কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ এবং মাছ,কলা ,এপ্রিকট,অ্যাভোকাডো এবং কমলা, বিভিন্ন সবজি, যেমন মিষ্টি আলু, আলু, টমেটো, সবুজ এবং পালংশাক।

২) প্রসেসড্ ফুড কম খান:- আপনার ডায়েটে অতিরিক্ত লবণের বেশিরভাগই আসে প্রসেসড ফুড এবং রেস্টুরেন্টের খাবার থেকে। জনপ্রিয় খাবার যেগুলিতে অতিরিক্ত লবণ আছে, সেগুলি হলো- প্যাকেজড মাংস, টিনজাত স্যুপ, পিৎজা, চিপস এছাড়া অন্যান্য প্রসেসড স্ন্যাকস। লো ফ্যাট লেবেলযুক্ত খাবারে সাধারণত চর্বি হ্রাসের জন্য অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ এবং চিনি মেশানো হয়। প্রসেসড ফুড কম খেলে আপনি কম লবণ, কম চিনি এবং কম পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন। আর এগুলি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

৩) ধ্যান বা যোগাসন চেষ্টা করুন:- যোগব্যায়াম যেটি সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ, অঙ্গবিন্যাস এবং ধ্যানের মাধ্যমে করা হয়, সেটি সাধারণত মানসিক চাপ এবং রক্তচাপ কমাতেও কার্যকর হয়। ২০১৩ সালের যোগব্যায়াম এবং রক্তচাপের উপর করা একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে যারা কোনোদিন ব্যায়াম করেননি তাদের গড় ডায়াস্টলিক রক্তচাপ ৩.৬২ mm Hg এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ ৪.১৭ mm Hg তে বৃদ্ধি পেয়েছে।

৪) ডার্ক চকলেট খান:- হ্যাঁ, ডার্ক চকলেট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ডার্ক চকলেটে ৬০ থেকে ৭০% কোকো থাকা উচিৎ। ডার্ক চকলেটের উপর গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন এক থেকে দুই স্কয়ারের ডার্ক চকলেট খাওয়া রক্তচাপ কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। ডার্ক চকলেট খাওয়ার আরও কারণ হলো চকলেটে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি থেকে উপকারগুলি পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়। ফ্ল্যাভোনয়েডগুলি আপনার রক্তনালীগুলিকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে।

৫) ভেষজ ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করুন:- ভেষজ ওষুধগুলি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য অনেক দিন ধরেই ব্যবহার করা হয়। কিছু ভেষজ ওষুধ রক্তচাপ কমানোর জন্যও ব্যবহার করা হয়। তবে, ভেষজগুলির ডোজ এবং উপাদানগুলি সনাক্ত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। ভেষজ ওষুধ গ্রহণ করার আগে সর্বদা আপনার ডাক্তার বা ফার্মাসিস্টের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন। নিচে ভেষজগুলির একটি তালিকা দেওয়া হলো যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যেমন-কালো বীন, ক্যাটস ক্ল, সেলারি জুস, চাইনিজ হাথর্ন, আদা, জায়ান্ট ডডার, ভারতীয় প্লান্টাগো, মেরিটাইম পাইন বার্ক, রিভার লিলি, রোজেল, তিলের তেল, টোম্যাটো, গ্রিন টি এবং অলং টি, আমব্রেলা ট্রি বার্ক।

৬) রসুন খান:- তাজা রসুন বা রসুনের নির্যাস উভয়ই রক্তচাপ কমাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য রসুনের পরিপূরকগুলি তাদের সিস্টোলিক রক্তচাপকে প্রায় ৫ mm Hg পর্যন্ত কমিয়েছে এবং তাদের ডায়াস্টোলিক রক্তচাপকে ২.৫ mm Hg পর্যন্ত কমিয়েছে। ২০০৯ সালের একটি ক্লিনিকাল গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত রসুনের গুঁড়োর ট্যাবলেট রক্তচাপের উপর বেশী প্রভাব ফেলতে পারে।

৭) স্বাস্থ্যকর উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খান:- ২০১৪ সালে একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা বেশী প্রোটিন খান তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কম। যারা প্রতিদিন গড়ে ১০০ গ্রাম করে প্রোটিন খেয়েছেন এবং তাদের থেকে যারা কম প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়েছেন তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি ৪০% কম ছিল। যারা তাদের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত ফাইবার যোগ করেন তাদের ঝুঁকি ৬০% পর্যন্ত কমে যায়। তবে, উচ্চ প্রোটিন খাবার সবার জন্য নাও হতে পারে। যাদের কিডনির রোগ আছে তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনার উচিৎ ডাক্তারের সাথে কথা বলা। বেশিরভাগ ধরণের ডায়েটে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা মোটামুটি ভালো। উচ্চ প্রোটিন খাবারের মধ্যে রয়েছে, মাছ, যেমন স্যামন, ডিম, মুরগির মাংস, মটরশুটি এবং লেগুম, যেমন কিডনি বিন এবং মসুর ডাল, বাদাম, পিনাট বাটার, ছোলা, পনির প্রভৃতি।

৮) BP কমাতে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন:- এই সাপ্লিমেন্টগুলি সহজেই উপলব্ধ এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যেমন- ওমেগা-৩ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, মিল্ক প্রোটিন দুধ থেকে প্রাপ্ত এই প্রোটিন কমপ্লেক্স গুলির রক্তচাপ কমানোর পাশাপাশি বেশ কিছু উপকারিতাও আছে। ম্যাগনেসিয়াম, সিট্রুলাইন রক্তচাপ কমিয়ে দেয়।

৯) ক্যাফিন কমানোর কথা বিবেচনা করুন:- ক্যাফিন আপনার রক্তচাপ বাড়ায়, কিন্তু প্রভাবটি সাময়িক। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ১৮ জন অংশগ্রহণকারী যাদের সিস্টোলিক রক্তচাপ ছিল তারা ২ ঘন্টার জন্য ৩২ আউন্স ক্যাফিনযুক্ত পানীয় বা একটি এনার্জি ড্রিংক পান করেছিল। ক্যাফিনযুক্ত পানীয় পান করার ফলে অংশগ্রহণকারীদের রক্তচাপ আরও দ্রুত বেড়ে যায়। এমনকী একটি পুরানো গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে রক্তচাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ক্যাফিনের প্রভাব বেশি হয় যদি আপনার রক্তচাপ ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পায়।

১০) প্রেসক্রিপশনের ওষুধ নিন:- যদি আপনার রক্তচাপ খুব বেশি হয় বা এই জীবনধারা পরিবর্তন করার পরেও না কমে, তাহলে আপনার ডাক্তার প্রেসক্রিপশনের ওষুধের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। তারা অবশ্যই কাজ করে এবং আপনার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল দিতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যদি আপনার অন্যান্য ঝুঁকির কারণ থাকে এবং সম্ভাব্য ওষুধ সম্পর্কে আরও জানতে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং আপনার জন্য কী সবচেয়ে ভাল কাজ করতে পারে তা জেনে নিন।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের সমস্যাকে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। কারণ এটি শরীরকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অনিয়ম হলেই। আজকাল শুধু বয়স্ক মানুষই নন, যে কোনও বয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা যায়। তাই, সময় থাকতে থাকতে সতর্ক হন, অন্যথায় ঘটতে পারে বড়সড় বিপদ।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক