গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর 13টি খাবার – নমিষা কর নাহা

Published by

গর্ভাবস্থা, যদিও একজন মহিলার জীবনের সবচেয়ে সুখী পর্যায়গুলির মধ্যে একটি, এই গর্ভাবস্থায় মা নিজের এবং তার শিশুর যত্নের জন্য কতকিছুই না করে থাকেন তবে এই সময় যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল খাওয়া-দাওয়া। গর্ভবতী মহিলাদের এই পর্যায়ে খাওয়া-দাওয়ার যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই একজন হবু মা কোন খাবার গুলি খাবেন তা জানা একান্ত দরকার।

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গুলির তালিকা নীচে দেওয়া হল

১. দুধঃ এক গ্লাস দুধ দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদার পঁচিশ থেকে তিরিশ শতাংশ পূরণ করতে পারে; গর্ভবতী নারীদের প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়া উচিত। যা গর্ভস্থ শিশুদের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য অপরিহার্য।

২. ডিমঃ একটি বড় ডিমে ৮০ ক্যালরি এবং ১১২ মিলিগ্রাম কোলাইন থাকে এবং তার সাথে প্রচুর প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। যা শিশুদের বৃদ্ধির এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। একটি ডিমে  গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় কোলাইনের এক চতুর্থাংশ থাকে যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য  অপরিহার্য।

৩.জলঃ সাধারণত গর্ভবতী মহিলারা প্রতিদিন প্রায় ৮০ আউন্স (২.৩লিটার) জল পান করা উচিত।তবে এই পরিমাপ সকলের ক্ষেত্রে সমান নাও হতে পারে।মনে রাখবেন যে এই জল আপনি ফলমূল, শাকসবজি, কফি এবং চা জাতীয় খাবার এবং পানীয় থেকেও পান।গর্ভাবস্থায় আপনার রক্তের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে জল পান করা গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত হাইড্রেশন, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ রোধেও সহায়তা করে।

৪.কলাঃ কলা গর্ভবতী মহিলার জন্য সেরা খাদ্য। একটি কলায় তার ওজনের প্রায় ৯০%  ক্যালোরি থাকে এবং এটি ফোলিক এসিড, ভিটামিন বি 6, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস। উপরন্তু, কলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহে সমৃদ্ধ এবং একটি চমৎকার শক্তি বৃদ্ধিকারী হয়।একজন গর্ভবতী মহিলা দিনে তিন থেকে চারটি কলা খেতে পারেন এবং গর্ভাবস্থায় হওয়া বারবার খিদের সমস্যার মেটাতে পারেন।

৫.চর্বিহীন মাংসঃ গর্ভাবস্থায় আয়রনের ঘাটতি ক্লান্তি এবং অবসাদের কারণ হতে পারে, গর্ভবতী মহিলাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কারণ বর্ধিত রক্তের পরিমাণের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে তাদের দ্বিগুণ পরিমাণ লোহার প্রয়োজন। চর্বিহীন মাংস আয়রন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস; মুরগি (চামড়া ছাড়া) । গরুর মাংস এবং শুয়োরের মাংসও ভিটামিন বি, কোলাইন ও আয়রন প্রদান করে।

৬.মটরশুটিঃ মটরশুটি প্রোটিন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বেশ উপকারী। মটরশুটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধকারী বলে পরিচিত, যা গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণ সমস্যার মধ্যে একটি।

 ৭.শুকনো ফলঃ শুকনো ফলে (যেমন- বাদাম ,কিসমিস, খেজুর,ইত্যাদি) সাধারণত ক্যালোরি, ফাইবার , বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ থাকে। শুকনো ফলের এক টুকরোতে তাজা ফলের সমান পরিমাণ পুষ্টি থাকে।ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ভিটামিনে  সমৃদ্ধ  এই খাবারগুলি প্রাকৃতিক রেচক এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুব সাহায্য করে। তবে শুকনো ফলের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনিও রয়েছে তাই বেশি পরিমানে খাওয়া উচিত নয়।

৮.পনিরঃ দুধের মতনই পনিরও ক্যালসিয়ামের একটি  উৎস এবং এতে দুধের প্রোটিনও রয়েছে ।

৯.গোটা শস্যের রুটিঃ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রতিদিন পঁয়ত্রিশ গ্রাম বা তার বেশি ফাইবার খাওয়ার সুপারিশ করা হয়।গোটা শস্যের রুটিতে  সাধারন রুটির তুলনায় বেশী ফাইবার, দস্তা এবং আয়রন আছে। যা গর্ভবতী মহিলার জন্য অপরিহার্য পুষ্টি।

১০..মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলুতে থাকে ফাইবার, ফোলিক এসিড, ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন। মিষ্টি আলুতে উপস্থিত যৌগ বিটা-ক্যারোটিন গর্ভস্থ  শিশুর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।বিটা-ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ কোষ এবং টিস্যুগুলির বৃদ্ধি, মেরামত এবং পৃথকীকরণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এটি জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া চলাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত কোষ এবং টিস্যু পুনরুদ্ধারেও সহায়তা করে।

১১.সবুজ শাক সব্জি :  এই সময় প্রচুর পরিমানে সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত।সবুজ শাকসবজিতে  ভিটামিন ও ফাইবারের উৎস যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।

১২.বাদামের মাখনঃ অনেকেই জানেন না যে কাজুবাদাম, নারকেল এবং ব্রেজিল বাদাম  থেকে খুব স্বাস্থ্যকর মাখন তৈরি করা যাবে। এই মাখনে ক্ষতিকর ফ্যটের পরিমাণ খুবই কম থাকে। গর্ভবতী নারীদের জন্য ফ্যাট বা চর্বি গ্রহণ করা জরুরি কারণ এগুলি তাদের পূর্ণতা বোধ করাতে সহায়তা করে। এমনকি, গর্ভস্থ  শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্যও চর্বি গ্রহণের প্রয়োজন।

১৩. মাছের লিভারের তেলঃ ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডগুলির একটি সমৃদ্ধ উৎস, মাছের লিভার থেকে প্রাপ্ত তেল, বেশিরভাগটি কড (কড লিভার তেল) থেকে পাওয়া যায়, এগুলি যে স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি প্রদান করে তা বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এই তেলগুলি গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যা ক্যাপসুলের আকারে নেওয়া যেতে পারে। ডোজ সম্পর্কিত বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া অবশ্যই দরকার, মাছের লিভারের তেলের অতিরিক্ত পরিমাণে কিছু রক্তের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের নিজেদের এবং তাদের শিশুদের উভয়ের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে উভয়ের জন্যই খেতে হবে।

Namisha Naha

Hi, I am Namisha Naha-Health and wellness blogger from Kolkata, India. Currently writing fo “Health Inside”

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago