অবশ্যই জল পান করার উপকারিতা রয়েছে।তবে দৈনিক কতখানি জলের প্রয়োজন আপানার? জানেন কি ! মানুষের দেহে প্রায় ৬০% জল থাকে। বলা হয় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রত্যহ ২লিটার জলের প্রয়োজন, তবে এই ২লিটার জল খাওয়ার একটা নিয়ম আছে । হয়ত আপনি মনে-মনে ভাবতে পারেন জল খাওয়ার আবার নিয়ম কি ? আসলে সারাদিন বিভিন্ন কাজকর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে শরীর থেকে সারাদিন অনেকটাই জল বেরিয়ে যায় তাই শরীরে সর্বদা জলের জোগান ঠিক রাখতে বিশেষজ্ঞরা ৮X৮ নামক একটি নিয়ম পালনের কথা বলে থাকেন । অর্থাৎ ৮ আউন্স(২৩৭-এমএল) জল ৮ বার খাওয়ার কথা বলেন। বা খুব সাধারণ ভাবে বলতে গেলে এক গ্লাস করে জল দিন আট বার পান করার কথা বলেন ।
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করার উপকারিতা কতখানি ?
১. শারীরিক কর্মক্ষমতা সর্বাধিক করতে সাহায্য করে
যদি আপনার শরীরে জলের পরিমাণ কম থাকে তবে আপনার শারীরিক কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এটি ব্যায়াম করার সময় বা উচ্চতাপমাত্রা যুক্ত পরিবেশে থাকার সময় বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার দেহে যদি জলের পরিমাণের ২% এর চেয়ে কম থাকে তবে ডিহাইড্রেশন কিন্তু কর্মক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে যারা শরীর চর্চা করেন বা খেলা ধুলা করেন তাদের ঘামের মাধ্যমে শরীরের ১০% কমে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
![জল পান করার উপকারিতা](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/03/Drinking-Water-edited.jpeg)
শরীরের জলের পরিমাণ কম হলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয় এ ছাড়া ক্লান্তি এবং অবসাদও বেড়ে যায় এবং অনেক সময় মানুষ মেজাজ পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে । শরীরে স্বাভাবিক জলের পরিমাণ শ্বাসপ্রশ্বাস চাপও সহজ করে যা শরীরকে আরও উদ্দীপ্ত ও কর্মক্ষম করে তোলে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ মানব শরীরের মাংসপেশীর ৮০ শতাংশই জল । আপনি যদি ব্যায়াম করেন এবং ঘাম ঝরান, সেক্ষেত্রে আপনার হাইড্রেট থাকাটা একান্ত জরুরি।
২. উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তি এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা প্রভাব ফেলতে পারে।
জানেন কি ! আপনার শরীরে জলের পরিমাণের দ্বারা আপনার মস্তিষ্ক প্রভাবিত হয়। আপনার দেহের স্বাভাবিকের ওজনের তুলনায় ১ থেকে ৩% জল কম হলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।গবেষকরা লক্ষ্য করে দেখেছেন, মহিলাদের ব্যায়াম-এর সময় শরীর থেকে ১.৪% তরল হ্রাস পাওয়া মাত্র মস্তিষ্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। মেজাজ হারিয়ে ফেলে এবং মাথা ব্যাথার মত সমস্যা সৃষ্টি হয়। পুরুষরাও ব্যাতিক্রম নয়, তাদের মধ্যেও একই গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, শরীরের ১.৬% জলের পরিমাণ কম হলেই কর্মক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং ক্লান্তির বোধ করতে শুরু করে।
৩. জল মথা ব্যাথা রোধ ও চিকিৎসা করতে সাহায্য করে
আগেই বলা হয়েছে যে শরীরে জলের পরিমাণ কম থাকলে কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের মতন সমস্যা হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে একটি মাথাব্যথা। একটি পরীক্ষায় ৩৯৩ জনের উপর নজরদারই চালিয়ে দেখা গেছে যে ৪০% অংশগ্রহণকারী ডিহাইড্রেশনের ফলে মাথা ব্যথা অনুভব করেছেন।
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/03/Headache.jpeg)
আবার কিছু গবেষণায় এটাও দেখা গেছে যে যারা ঘন ঘন মাথা ব্যথা অনুভব করেন তারা জল খাওয়ার ফলে মাথাব্যথা থেকে উপশম পেয়েছন।
যদিও এর সবটাই সরাসরি ডিহাইড্রেশানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে কি না তার জন্য আরও গভীর গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে বৈজ্ঞানিকরা জানিয়েছেন।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে
প্রাত্যহিক জীবনে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা যা বাতকর্মের সময় কঠিন মল, মলদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসতে সমস্যার সৃষ্টি করে। এই অসুবিধা দুর করতে চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত জলপানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন । অল্প বয়স্ক এবং বয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই কম জল ব্যাবহারের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন সমস্যা হতে পারে । শরীরে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস পায়।একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ম্যাগনেসিয়াম এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ জল এ ব্যাপারে আরও ভালো কাজ করে।
৫. কিডনিতে পাথর নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে
কিডনিতে যে পাথরগুলো জমা হয় তা বিভিন্ন খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত স্ফটিক বা ক্রিস্টাল জাতীয় পাথর যেটি রোগীর পক্ষে খুবই যন্ত্রণাদায়ক । যাদের একবার কিডনি তে পাথর হয়েছে তাদের আবার হওয়ার একটা প্রবণতা থাকে তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে কিডনির মধ্যে জলের প্রবাহ বাড়ে ও এই খনিজ পদার্থ গুলি ধুয়ে মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে গিয়ে পুনরায় পাথর গঠনে বাধার সৃষ্টি করে ।
৭. হ্যাংওভার কাটাতে জল খান
হ্যাংওভার বলতে আমরা অ্যালকোহল খাওয়ার পরের অনুভূত লক্ষণগুলিকে বুঝি। অ্যালকোহল একটি মূত্রবর্ধক, তাই এটি আপনার জল গ্রহণের চেয়ে বেশি জল হারাতে বাধ্য করে এবং এতে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। যদিও ডিহাইড্রেশন হ্যাংওভারের প্রধান কারণ নয়। তবে তৃষ্ণা, ক্লান্তি, মাথা ব্যথা এবং শুষ্ক মুখের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/01/Pain2.jpg)
হ্যাংওভার কম করার ভাল উপায় হল জল পান করা। ঘুমোতে যাওয়ার আগে কমপক্ষে একটি বড় গ্লাসে জল পান করা।
৭. ওজন হ্রাস সাহায্য করতে পারে
জল আপনার বিপাক ক্রিয়ার হারকে বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। ২০১৩ সালে ৫০ জন অধিক ওজনযুক্ত যুবতী / মহিলার উপর একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই পরীক্ষায় তাদের ৮ সপ্তাহ ধরে খাবারের আগে প্রতিদিন ৩ বার অতিরিক্ত 500ml জল পান করানো হয়। পরীক্ষা শেষে পর্যবেক্ষণের পর দেখা যায়, এই মহিলাদের আগের তুলনায় শরীরের ওজন এবং শরীরের চর্বির পরিমাণে যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে।
![](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/03/Weight-Loss-1.jpeg)
সামান্য জলের অভাব বা ডিহাইড্রেশন আপনাকে মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্তত ২ লিটার/দিন জল পান করা যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের পক্ষে মঙ্গল।