কর্মরতা মহিলা গর্ভাবস্থায় কখন কী করবেন ও কী খাবেন ?

Published by

গর্ভাবস্থায় মহিলারা দ্বিধায় ভোগেন— কাজটা কি তাহলে ছেড়ে দেব? প্রেগন্যান্সিতে কি জার্নি করা উচিত হবে? সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা উচিত কি? এক এক করে প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া যাক।

ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার

সমগ্র প্রেগন্যান্সি সম্পূর্ণ হয় ৪০ সপ্তাহে। প্রেগন্যান্সির প্রথম ১২ সপ্তাহকে বলা হয় ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার। এই সময়ে সন্তানসম্ভবাকে অত্যন্ত সাবধানে থাকতে বলা হয়। দেখা গিয়েছে প্রতি পাঁচটি দম্পতির মধ্যে একটি দম্পতির ক্ষেত্রে মিসক্যারেজ হয়। তাই বলে কাজকর্ম ছাড়ার কোনও অর্থ নেই। অফিসে অবশ্যই যান। তবে ডেস্ক-এ দীর্ঘসময় বসে থাকবেন না। প্রত্যেক ৩০ মিনিট অন্তর একটু হেঁটে নিন। সঙ্গে হাত, ঘাড় একটু স্ট্রেচ করে নিন। দু’টি চোখও কিছুটা সময় বন্ধ করে ফের কাজ শুরু করুন। মাথা ব্যথা কম হবে। এই নিয়ম মেনে চললে সারাদিনের পর বাড়ি ফেরার সময় শারীরিক দুর্বলতা বোধ অনেক কম হবে।

ডায়েট :- সমগ্র প্রেগন্যান্সি জুড়েই ঘরে বানানো পুষ্টিকর খাদ্য খান। জাঙ্কফুড, বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন। কেউ কেউ বলেন, ‘খাবার দেখলেই বমি পাচ্ছে।’ এক্ষেত্রে একটাই সমাধান— একেবারে অনেকটা খাবেন না। অল্প অল্প করে বার বার খাবার খান। খিদে পাক আর না পাক প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অন্তর অল্প মাত্রায় কিছু না কিছু খাদ্য খান। খেতে পারেন মিলিয়েমিশিয়ে কয়েকটা কাজু, আখরোট, আমন্ড-এর মতো বাদাম ও শুকনো ফল। মোট কথা পেট খালি রাখবেন না। পেট খালি না থাকলে গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যাও থাকবে না। আর যে কোনও ফল খাওয়া যায়। রোজ একই ফল খেতে ইচ্ছে না করলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা রকম ফল খেতে পারেন।

হেলথ ড্রিংকস :-যে কোনও ধরনের প্রোটিন ড্রিংকস বা হেলথ ড্রিংকস পছন্দমতো খেতেই পারেন। দু’টি প্রধান মিল-এর মধ্যে সময়ের অন্তর কমাতে সাহায্য করে হেলথ ড্রিংকস।

অফিস থেকে ফিরে কি করবেন :- ঘরে ফেরার পর একটু নিজের জন্য সময় রাখবেন। এই সময়ে মৃদু স্বরে কোনও সঙ্গীত বা বাদ্য সঙ্গীত চালিয়ে করতে পারেন ধ্যান। মোট কথা শরীর ও মন শান্ত করার জন্য একটা সময় বরাদ্দ করুন। চাইলে রাগ নির্ভর গানও শুনতে পারেন। শুনতে পারেন মন্ত্রোচ্চারণ।এই সময়টা বরাদ্দ রাখুন নিজের ও সন্তানের জন্য। দেখা গিয়েছে এইভাবে সময় কাটালে শরীরে ভালো হরমোন বেরোয় যা আগামীর শিশুর জন্যও উপকারী। এইভাবে ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার শেষ হয়। মোটামুটি ৮ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে ডেটিং স্ক্যান নামে আলট্রাসাউন্ড করা হয়। ১১ থেকে ১৩ সপ্তাহের মধ্যে করা হয় আরও দু’টি টেস্ট। ভ্রূণের জিনগত কোনও সমস্যা আছে কিনা জানতে এনটি স্ক্যান এবং ব্লাড ফর ডাবল মার্কার নামে টেস্ট করা হয়।

সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার

১৩ থেকে ২৮ সপ্তাহ হল সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার। এই সময়কালকে হানিমুন পিরিয়ড অব প্রেগন্যান্সি বলা হয়। কারণ এই পর্যায়ে ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারের বমি, অ্যাসিডিটির মতো অনেক সমস্যাই আর মায়েরা অনুভব করেন না। ব্লিডিং, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের মতো সমস্যা না থাকলে ছোটখাট ট্যুরও করা যায়। সেকেন্ড ট্রাইমেস্টারে ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে করতে হয় অ্যানোমলি স্ক্যান। এই পরীক্ষায় বাচ্চার শারীরিক গঠনগত কোনও ত্রুটি থাকলে তা ধরা পড়ে যায়। এছাড়া বাচ্চার হার্টে কোনও সমস্যা আছে কি না তা জানার জন্য ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফিও করা হয়। প্রেগন্যান্ট মহিলার টিটেনাস ভ্যাকসিন নিতে হয় এই সময়কালে। ২৪ সপ্তাহে ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট করা হয় সন্তানসম্ভবার জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বা মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিস আছে কি না জানার জন্য।

থার্ড ট্রাইমেস্টার

২৮ থেকে ৪০ সপ্তাহ হল থার্ড ট্রাইমেস্টার। এই পর্যায়ে বাচ্চা ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ আকার নিতে থাকে। গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা সঠিক অবস্থানে চলে আসে। সন্তানসম্ভবার পেটের আকার বড় হয়ে যায় বলে রোগীর কাজকর্ম চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তাঁরা বলেন সিঁড়ি চড়তে খুব কষ্ট হচ্ছে। পেটের আকার বাড়ার কারণে পেটের ডায়াফ্রামে চাপ পড়ে। তাই প্রেগন্যান্সির আগে থেকে যোগা ও প্রাণায়ামের অভ্যেস থাকলে তা এই সময় শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে। এইসময় গ্রোথ স্ক্যান করে বাচ্চার বৃদ্ধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়া এই পর্যায়ে সন্তানসম্ভবাকে বুসট্রিক্স ভ্যাকসিন বা টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, পারটুসিস-এর টিকা দেওয়া হয়। ফ্লু ভ্যাকসিনও দেওয়া হতে পারে। ৩৬ সপ্তাহ নাগাদ সন্তানসম্ভবার শারীরিক পরিস্থিতি দেখে নর্মাল নাকি সিজারিয়ান ডেলিভারি হবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রক্তপাতের সমস্যা দেখা দিলে বা বাচ্চার আকার ছোট হতে শুরু করলে ৩৬ সপ্তাহের পরে কর্মরতারা চাইলে বিশ্রাম নিতে পারেন। তবে নিতেই হবে এমন নয়। তবে কাজের জায়গা বাড়ির থেকে দূরে হলে এমন যানবাহনে যাতায়াত করুন যে যানে চাপলে ঝাঁকুনি কম লাগে। এছাড়া আলাদা করে কোনও নিষেধাজ্ঞা থাকে না। এইভাবে সম্পূর্ণ হয় প্রেগন্যান্সি।

Dr. Tanuka Dasgupta

Dr. Tanuka Dasgupta is one of the Best Lady Gynecologist and Infertility Specialist in Kolkata. She has obtained MBBS Degree from (NRS), MS (G&O) from (Medical College and Hospital), DNB (Delhi) & FMAS (Minimal Access Surgery) Cochin. She has an experience of more than 13+ years in the field of Gynae and Obstetrics as the Top Gynecologist.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago