আজ আমরা আলোচনা করে নেবো সেসব খাবার, ওষুধ এবং ভেষজগুলির সম্বন্ধে যেগুলি আপনার মাতৃদুগ্ধের সরবরাহ কমিয়ে দেয়।
স্তন্যপান জীবনদায়ী। সদ্যোজাত সন্তানের জন্য মাতৃদুগ্ধ-এর চেয়ে উৎকৃষ্ট অন্য কোনও খাদ্যবস্তু নেই। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য এই মাতৃদুগ্ধের জুড়ি মেলা ভার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে বাচ্চাদের রোগমুক্ত রাখতে তাদের অবশ্যই স্তন্যপান করানো উচিত। এটি শিশুর পাশাপাশি মায়ের পক্ষেও উপকারী। তবে, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাঁরা নতুন মা হন কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাঁরা ঠিক মতোন তাঁদের শিশুদের ব্রেস্ট ফিডিং বা বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হতে পারে। আপনি যদি আপনার শিশুকে স্তন্যপান করানোর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হন, তবে আপনার জেনে রাখা উচিৎ যে কিছু কিছু খাদ্য সামগ্রী মায়ের দুধের উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। কিছু কিছু খাবারের পাশাপাশি কিছু কিছু ওষুধের প্রথম ডোজ নেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই দুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
মাতৃদুগ্ধের সরবরাহ কমিয়ে দেয় কোন কোন খাবার ?
১) অ্যালকোহল:- অ্যালকোহল অক্সিটোসিনের নিঃসরণকেও বাধা দেয়। এর ফলে একজন স্তন্যপান করানো মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়। অ্যালকোহল কিভাবে স্তন্যপান করানোর প্রক্রিয়াকে হ্রাস করে সেই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছু জানা না গেলেও লক্ষ্য করা গেছে যে অ্যালকোহল মানুষের দুধের স্বাদ এবং গন্ধ পরিবর্তন করতে পারে। তবে একটি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে চার আউন্স ওয়াইন, এক আউন্স হার্ড লিকার, বা আট আউন্স বিয়ার আপনার শিশুর উপর এবং আপনার স্তন্যজাত দুধ সরবরাহের ওপর কোনো রূপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। তবে, দীর্ঘমেয়াদী অ্যালকোহল গ্রহণ দুধের গুণমান এবং দুধের পরিমাণকে কমিয়ে দিতে পারে।
২) সেগ, পার্সলে, পেপারমিন্ট এবং মেনথল:- অনেক ভেষজই প্রাকৃতিকভাবে ল্যাকটোজেনিক খাবার হয়ে থাকে। এগুলো স্তনের দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। তবে, স্তনের দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সমস্ত ভেষজ সমানভাবে কাজ করে না। সেগ, পার্সলে, পেপারমিন্ট এবং মেনথল প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করলে অনেক সময় স্তন্যপান করানো মায়েদের দুধের সরবরাহ কমে যায়। এই সমস্ত ভেষজযুক্ত খাবারগুলিকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা না করলেও এগুলি যে সব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয় সেই খাবারগুলি সম্পর্কে সাবধান হওয়া প্রয়োজন। যেমন, ক্যান্ডি বা পার্সলে বিভিন্ন স্যালাডের কাজে ব্যবহার করা হয়।
৩) চ্যাস্টবেরি:- চ্যাস্টবেরি চ্যাস্ট গাছের শুকনো ফল, যা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে জন্মায়। এটি দীর্ঘকাল ধরে এন্ডোমেট্রিওসিস এবং মেনোপজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রজনন সমস্যাগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে, গবেষণায় দেখা গেছে যে, চ্যাস্টবেরি সরাসরি পিটুইটারি গ্রন্থির উপর কাজ করে এবং প্রোল্যাক্টিন নিঃসরণকে বাধা দেয়। যখন স্তন্যপান করানো মায়ের শরীরে প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা কমে যায়, তখন তার শরীরে দুধের সরবরাহ সাধারণত কমে যায়। তাই, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের চ্যাস্টবেরি সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া ঠিক নয়। এর বিকল্প ভেষজ হিসেবে, হলুদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪) সিউডোফেড্রিন, মেথারজিন এবং ব্রোমোক্রিপ্টিন:- কিছু কিছু ওষুধ স্তন্যপানকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে সিউডোফেড্রিন (প্রদাহ বিরোধী ওষুধ হিসেবে কাজ করে), মেথারজিন (প্রায়শই প্রসবের পরে গুরুতর জরায়ু রক্তপাতের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়) এবং ব্রোমোক্রিপ্টিন ওষুধগুলি স্তন্যপান করানো মায়েদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদি আপনার শরীরে দুধের উৎপাদন কমে যায় এবং আপনি বুঝতে পারেন বা অনুভব করতে পারেন যে আপনি এখানে তালিকাভুক্ত ওষুধগুলির মধ্যে একটি গ্রহণ করেছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে বিকল্প ওষুধ গ্রহণ করা উচিৎ। তবে প্রাকৃতিক ভাবে বা সাধারণ ভাবে অতিরিক্ত পাম্পিং, ল্যাকটোজেনিক ভেষজ বা ওষুধ, এগুলি খাবারের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এবং এগুলি আপনাকে দুধের উৎপাদন আবার বাড়াতে সাহায্য করে।