ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার হল জরায়ুর ভেতর গঠিত হওয়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এদের ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড, মায়োমাস এবং লিয়োমায়োমাস নামেও ডাকা হয়। ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার ক্যান্সারাস বা জীবন ঘাতক নয়, তবে এর ফলে শরীরে অনেক সমস্যা ও জটিলতা দেখা দেয়।
ফাইব্রয়েড জরায়ুর দেওয়ালের ভেতরে এবং জরায়ুর দেওয়ালের গায়ে গড়ে ওঠে। এগুলো মাসল ও অন্যান্য টিস্যু দিয়ে তৈরি হয়। এগুলো যেমন একটা বীজের আকৃতির মতো ছোট হতে পারে, তেমনি একটা টেনিস বলের সাইজের মতো বড় হতে পারে। রোগীর একাধিক বা একটিমাত্র ফাইব্রয়েড থাকতে পারে।
চিকিৎসকেরা ফাইব্রয়েড তৈরি হওয়ার সঠিক কারন জানেন না। ওভার ওয়েট বা ওবেসিটি ফাইব্রয়েড হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, তেমনি কিছু পুষ্টি উপাদানের অভাবের কারণেও ফাইব্রয়েড হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
প্রায় ৮০% মহিলার জীবনে ফাইব্রয়েডের সমস্যা দেখা যায়। এই সমস্যাটা বংশগতির কারণেও হয়ে থাকে। কারোর মা বা বোনের যদি ফাইব্রয়েডের সমস্যা থাকে তাহলে সেই মহিলার ফাইব্রয়েডের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ফাইব্রয়েডের রোগলক্ষন ও সমস্যাগুলি হল—
যদিও মাত্র ২০—৫০% মহিলারই ফাইব্রয়েডের রোগলক্ষন প্রকাশ পায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাইব্রয়েডের চিকিৎসা প্রয়োজনই হয় না। রোগীকে চিকিৎসক অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন, দেখতে বলেন যে ফাইব্রয়েডের সমস্যা বাড়ছে কি না নাকি ফাইব্রয়েড নিজে থেকেই মিলিয়ে যাচ্ছে।
যদিও খাদ্য ফাইব্রয়েড কে সারাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কিন্তু প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও জীবন ধারণ পদ্ধতি ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। খাদ্যাভ্যাস হরমোনের সমস্যা কে নিয়ন্ত্রন করে রাখতে পারে এবং হরমোনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখলে ফাইব্রয়েডের সমস্যা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা যায়। কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য ফাইব্রয়েডের সমস্যা কে দূরে রাখতেও সাহায্য করে।
খাদ্যাভ্যাস ও জীবন ধারনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনলে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
সবুজ এবং টাটকা খাদ্য
খাদ্যে প্রচুর পরিমানে কাঁচা এবং রান্না করা শাক সব্জি রাখতে হবে। এছাড়াও বিন্স জাতীয় খাদ্য এবং মাছ প্রচুর পরিমানে খাদ্যে রাখতে হবে। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে এই ধরনের খাদ্য তালিকায় রাখলে ফাইব্রয়েডের সমস্যা বেশ কম থাকে এবং দেখা গেছে যে যাদের খাদ্যে রেড মিটের পরিমান বেশি তাদের মধ্যে ফাইব্রয়েডের সমস্যা বেশি।
অ্যালকোহল বন্ধ করা
যেকোনো ধরনের অ্যালকোহলই ফাইব্রয়েডের সমস্যা কে বাড়িয়ে দেয়। যে ধরনের হরমোনের প্রভাবে ফাইব্রয়েডের জন্ম হয়, অ্যালকোহল সেই ধরনের হরমোনের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। অ্যালকোহল ফাইব্রয়েডের প্রদাহকেও বাড়িয়ে দেয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যেসব মহিলারা দিনে একটি থেকে তিনটি বিয়ার খেয়ে থাকেন তাদের ফাইব্রয়েডের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০% বেশি। অ্যালকোহল কমিয়ে বা বন্ধ করে দিলে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকিও কমে যায়।
ইস্ট্রোজেন কে ব্যালান্সড রাখা
মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের মধ্যেই সুস্থ স্বাভাবিক ফার্টিলিটির জন্য ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রয়োজন হয়, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন ফাইব্রয়েডের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় বা তা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ফাইব্রয়েডের সমস্যা সারানোর অনেক চিকিৎসাতেই ইস্ট্রোজেনের পরিমান কমানো হয়। এছাড়াও ইস্ট্রোজেন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা যায় আরও যে যে পদ্ধতিতে, সেগুলো হল —
সার, কীটনাশক, রান্নার নন–স্টিক বাসন পত্র, রঙ, কলপের রঙ, বিভিন্ন পার্সোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট।
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যেসব মহিলাদের ফাইব্রয়েডের সমস্যা আছে, তাদের হাউ ব্লাড প্রেশারের সমস্যাও আছে। যদিও এই ব্যাপারে এখনও অনেক সমীক্ষা করা বাকি আছে।
ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা যদিও সামগ্রিক শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। এই পদ্ধতিগুলি অবলম্বন করতে পারেন —
যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে
ভিটামিন ডি প্রায় ৩২% পর্যন্ত ফাইব্রয়েডের সমস্যা কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে আমাদের শরীর নিজে থেকেই এই ভিটামিন তৈরি করতে পারে। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট ছাড়াও আর যে যে খাবার শরীরে ভিটামিন ডি এর পরিমান বাড়াতে পারে, সেগুলো হল —
ধূমপান এবং ডায়েটের সম্পর্ক
উজ্জ্বল রঙিন ও সবুজ শাক সব্জি শরীরের সামগ্রিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন। লাল, হলুদ এবং কমলা রঙের সবজি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান বাড়ায়। গাঢ় সবুজ রঙের শাক সব্জিও শরীরের নানা রকমের পুষ্টির প্রয়োজন যোগায়। এই ধরনের খাদ্য শরীর কে ক্যান্সার সহ অন্যান্য রোগ থেকেও রক্ষা করে।
যদিও একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে হলুদ ও কমলা রঙের খাদ্যে যে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়, তার সাথে ফাইব্রয়েডের উপশমের কোনো সম্পর্ক নেই। ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে বিটা ক্যারোটিন আরও বিপদ ডেকে আনে। একজন্য আরও সমীক্ষা করা প্রয়োজন। তবে ধূমপান বন্ধ শরীরের সামগ্রিক উন্নতি এবং ফাইব্রয়েডের সমস্যা কে দূরে রাখতে সাহায্য করে।
খাদ্যাভ্যাস একা ফাইব্রয়েডের সমস্যা কে কমাতে পারে না। তবে ব্যালান্সড ডায়েট মেনটেন করলে ফাইব্রয়েডের রোগলক্ষনগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকে—
সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা শরীর কে সামগ্রিক ভাবে সুস্থ রাখে। যে সাবধানতাই নেওয়া হোক না কেন ফাইব্রয়েড হওয়া কে প্রতিরোধ করা যায় না তবে তার দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। শরীরে কোনো বদল হয়েছে মনে হলে তৎক্ষনাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার যদি ফাইব্রয়েডের সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে চিকিৎসকই সব থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে কি চিকিৎসা করা হবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন ধারণ পদ্ধতি ফাইব্রয়েড সমস্যার সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment