সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার কিভাবে প্রতিরোধ করবেন ?

Published by

ভারতীয় নারীদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার। প্রথম স্থান অধিকার করে রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সার। এই কারণেই সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার কী ?

ইউটেরাসের মুখের অংশকে বলে সার্ভিক্স। এই অংশটি ইউটেরাসের সঙ্গে ভ্যাজাইনার যোগাযোগ স্থাপন করে। সার্ভিক্সের কোষগুলি ক্যান্সার আক্রান্ত হলে তাকে বলে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার (cervical cancer)।

সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার রোগের কারণ

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) সংক্রমণ থেকে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার হয়। তবে সব এইচপিভি ভাইরাস (hpv virus) থেকে ক্যান্সার হয় না। এই ভাইরাসের বিশেষ কিছু স্ট্রেন রয়েছে। তাদের মধ্যে এইচপিভি ১৬, ১৮ স্ট্রেনগুলি সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। সাধারণত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেই শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাস। অবশ্য ভাইরাস ঢুকল মানে আগামীকাল বা ৩৬৫ দিনের মধ্যেই ক্যান্সার হবে— এমন নয়। শরীরে প্রবেশ করার বহু বছর বাদেও এই ভাইরাসের কারণে ক্যান্সার হতে পারে। এইচপিভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করা মাত্র শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এইচপিভি ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই শুরু করে ও ভাইরাসকে কোনও ক্ষতি করার হাত থেকে প্রতিহত করে। ফলে লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করে দীর্ঘকাল টিকে যায় ও সার্ভিক্সের কোষগুলিতে এমন কিছু পরিবর্তন করে যার ফলে কোষগুলিতে ক্যান্সার দেখা দেয়। সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের মূল কারণ এইচপিভি ভাইরাস হলেও আরও নানা কারণেও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন মহিলারা। অনেকসময় ক্যান্সার হওয়ার পিছনে দায়ী থাকে জিন। কিছু ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার কাদের বেশী হয় ?

একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত শারীরিক ঘনিষ্ঠতা, অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণি, গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দা— এমন মহিলাদের সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ভয় বেশি। সাধারণত ৩৫ বছর বয়সের পর, মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর (মেনোপজ) এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ভয় বাড়ে।

সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার রোগের লক্ষণ

• ভ্যাজাইনা থেকে ব্লিডিং এই রোগের প্রধান লক্ষণ। এছাড়া মেনোপজের পর রক্তপাত, মেনস্ট্রুয়েশনের সময় বাদেও অন্য সময় রক্তপাত, ইন্টারকোর্সের পর ব্লিডিং ইত্যাদি।

• ইনফেকশনের লক্ষণও দেখা যেতে পারে। ভ্যাজাইনা থেকে সাদা স্রাব বের হয়। 

• অনেক ক্ষেত্রে এই রোগের প্রথম দিকে কোনও লক্ষণ থাকে না। সেই সুযোগে রোগ মূত্রনালী, লিভার বা অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। 

• এছাড়া শারীরিক দুর্বলতা, রক্তাল্পতা এই ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ।

রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা

এই রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট (pap smear) করা হয়ে থাকে। পরীক্ষার রিপোর্টে ক্যান্সার প্রমাণ হলে বায়োপ্সি করে দেখে নেওয়া হয়। ক্যান্সার কোথায় কোথায় ছড়িয়েছে বোঝার জন্য প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান, সিরিজ বায়োপ্সি করা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা

প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ স্টেজ-১ বা ২-এ ক্যান্সার ধরা পড়লে সার্জারি করে সার্ভিক্স, ইউটেরাস, ভ্যাজাইনার কিছুটা অংশ বাদ দেওয়া হয়। প্রয়োজনমতো ল্যাপারোস্কোপি এবং ওপেন সার্জারি—এই দুই পদ্ধতিতেই এই অস্ত্রোপচার করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা হলে ৯০ শতাংশ রোগীই সুস্থ হয়ে যান। রোগ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে এগিয়ে গেলে আর সার্জারি করা যায় না। এক্ষেত্রে কেমো এবং রেডিয়েশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে হয়। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী এই চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যান। অসুখ চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মাধ্যমে রোগীর উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়।

রোগ প্রতিরোধ

এইচপিভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী টিকা এখন সহজেই বাজারে পাওয়া যায়। এই টিকাটি ৯ থেকে ২৬ বছর বয়সের মধ্যে বা যৌন সম্পর্ক শুরু করার আগে নিতে হয়। এই ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো যায়। আর ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকলে প্রথম পর্যায়েই রোগ নির্ণয়ে জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনও লক্ষণ না থাকলেও ২১ বছর বয়সের পর থেকে প্যাপ স্মিয়ার টেস্টটি করানো শুরু করতে হবে। প্রথম দিকে চার থেকে পাঁচ বছর অন্তর এই টেস্ট করা দরকার। টেস্ট রিপোর্টে কোনও রকম খারাপ পরিবর্তন দেখা দিলে এক বছর অন্তর এই টেস্ট করতে হবে। তবেই প্রাথমিক স্তরে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago