প্রস্রাবের সময় ব্যথা (Dysuria) একটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে

Published by

শরীরের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে বেদনাদায়ক প্রস্রাব বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা একটি গুরুতর সমস্যা ৷ বিভিন্ন কারণে মূত্রাশয়ে সমস্যা হতে পারে যে কারণে প্রস্রাব করবার সময় আমরা অস্বস্তি বোধ করি৷ মূত্রাশয় বা শরীরের রেচনাঙ্গ কোনভাবে সংক্রমিত হলে, রেচনতন্ত্রে পাথর বা টিউমারের সৃষ্টি হলে প্রস্রাব করার সময়ে ব্যাথার সৃষ্টি হয়৷ চিকিৎসকদের পরিভাষায় এই সমস্যাটি ডাইসুরিয়া(Dysuria)  নামে পরিচিত ৷

 প্রস্রাবের সময় ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে৷ এই ব্যথার অনুভব মূত্রাশয়, মূত্রনালী বা পেরিনিয়াম থেকে হতে পারে৷ মূত্রনালী হল একটি নলাকার অংশ যা শারীর বৃত্তীয় ক্রিয়ার পর আমাদের দেহের বাইরে পরিস্রুত জলীয় অংশ অর্থাৎ বর্জন যোগ্য মূত্রকে বহন করে বাইরে নিয়ে যায়৷ পুরুষ শরীরের ক্ষেত্রে অন্ডকোষ এবং মলদ্বারের মধ্যেকার অঞ্চল পেরিনিয়াম হিসাবে পরিচিত৷ স্ত্রী শরীরের ক্ষেত্রে আবার মলদ্বার এবং যোনির মধ্যবর্তী অংশে থাকে পেরিনিয়ামটি৷ মনে রাখবেন,  মূত্র ত্যাগের সময় ব্যথা বা জ্বালা একটি গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়ার কারণ

মূত্রনালীর সংক্রামন (UTI)- প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়ার একটি সাধারণ কারণ হল মূত্রনালীর সংক্রামনের বা ইউটিআই যা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এর ফলে হতে পারে৷ ৷ বৃক্ক বা কিডনি হলো আমাদের প্রধান রেচন অঙ্গ ৷ অন্যান্য রেচন অঙ্গ গুলি হল মূত্রনালী এবং মূত্রথলি৷ এর মধ্যে মূত্রের বাহকের কাজটি করে মূত্রনালী৷ এই অঙ্গ গুলির কোন একটিতেও অসুবিধা সৃষ্টি হলে মূত্রত্যাগের সময় অস্বস্তিবোধ হতে পারে৷ একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই জাতীয় সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে৷ মহিলাদের মূত্রনালীর দৈর্ঘ্যে তুলনামূলক ছোট হয়৷ তাই প্রস্রাব করবার সময় খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়াগুলি স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে মহিলাদের মূত্রনালীতে সংক্রমণ ঘটায় ৷ গর্ভাবস্থায় বা মেনোপোজাল সময়ে মূত্রনালীর সংক্রামন এর সম্ভাবনা মহিলাদের অনেকটা বেড়ে যায়৷

 প্রস্টাইটিস (prostatitis)- কোনও রকম আঘাত, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বা Immune System Disorder এর কারণে অনেক সময় প্রস্টেট গ্রন্থিটি ফুলে যায়, একে প্রস্টাইটিস বলা হয় । এই প্রস্টাইটিসের কারণে পুরুষদের প্রস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে ৷

STI বা যৌন বাহিত সংক্রমণ- STI বা যৌন বাহিত সংক্রমণের দ্বারাও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যৌনাঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা যেমন হার্পস, গনোরিয়া এবং ক্ল্যামিডিয়া এই সংক্রমনের সাথে সম্পর্কযুক্ত৷ সেক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ বেশ আবশ্যক কারণ এগুলির বাহ্যিক লক্ষণ সব সময় বোঝা যায় না৷ অসাবধানী যৌনাভ্যাস এক্ষেত্রে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে৷ কন্ডোম ছাড়া যৌন সংসর্গ, একাধিক সঙ্গীর সাথে সহবাস এবং যৌনজীবনে সক্রিয় আছেন এরকম যেকোন মানুষই এস টি আই দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন ।

আইসি  (IC)  বা  ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস- মূত্রাশয় আস্তরনের প্রদাহ বা সিস্টাইটিস হল প্রস্রাবের সময় ব্যথার আরেকটি কারণ৷ মূত্রাশয় এবং পেলভিক অঞ্চলের ব্যাথার কারণ হতে পারে ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস।  ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস এন্ড ডাইজেস্টিভ এন্ড কিডনি ডিজিস (NIDDK), এর ডাক্তাররা এখনো বুঝতে পারেননি কি কারনে IC হয়৷ কিছু ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেরাপি কারণে মূত্রাশয়ে ব্যথা হতে পারে৷ একে বলে রেডিয়েশন সাইস্টিটিস৷

কিডনিতে পাথর- কিডনিতে পাথর থাকলে প্রস্রাব করতে সমস্যা দেখা যায়৷ কিডনির পাথর আসলে কিডনির মধ্যে থাকা পদার্থ গুলির শক্ত রূপান্তর৷এই পাথর গুলি শুধু কিডনিতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, অনেক সময় তা বাহিত হয়ে মূত্রনালিতেও এসে জমা হয় এবং সেক্ষেত্রে যন্ত্রণা ও অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়।  

অন্যান্য সমস্যা-প্রস্রাব জনিত সব সমস্যাই সংক্রমণ থেকে হয় না৷ গোপনাঙ্গের পরিচর্যায় আমরা কোন ধরনের জিনিস ব্যবহার করি এটি তার ওপরও নির্ভর করে৷ সাবান, লোশন এর ব্যবহার যোনির টিস্যুগুলিতে প্রভাব ফেলে৷

প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা যন্ত্রণা হলে চিকিৎসা কি?

একজন চিকিৎসক,  আমাদের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ি কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন৷ ইউটিআই (UTI), ব্যক্টেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট প্রস্টাইটিস, এবং কিছু যৌন বাহিত সংক্রমণের চিকিৎসায় কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারেন৷ মূত্রাশয়ে সমস্যা বা অতিসক্রিয়তা থাকলে তা শান্ত করতে কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। বেদনাদায়ক প্রসাবের কারণ যদি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয় সেক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগের সঙ্গে-সঙ্গে সুফল মিললেও আইসি বা ইন্টারস্টিশিয়াল সিস্টাইটিস এর চিকিৎসা কিন্তু বেশ জটিল, বিভিন্ন রকম ওষুধ প্রয়োগ করেও সবসময় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। তাই সব সময় ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ মতো সঠিক ওষুধ খাওয়া উচিত৷

প্রস্রাবকালীন ব্যথার সমস্যা থেকে কিভাবে দুরে থাকবেন?

যত্র-তত্র অপরিষ্কার স্থানে মূত্রত্যাগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
যৌনাঙ্গ পরিষ্কারে ব্যবহৃত লোশান বা ক্লিনার থেকে এই সমস্যা হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে।
একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ হতে পারে, তাই সঙ্গমের পূর্বে কন্ডমের ব্যাবহার করতে হবে।
অ্যালকোহল, ক্যাফিন, মসলাজাতীয় খাবার, কৃত্রিম মিষ্টিজাত খাবার এবং বিশেষ করে এসিডিক খাবার-দাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago