ভিটামিন ই হল এমন একটি ভিটামিন, যা ফ্যাটে দ্রবীভূত। ভেজিটেবল অয়েল, মাংস, ফল, শাক সব্জি, পোল্ট্রির ডিম, শস্য দানা ইত্যাদি থেকে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট হিসাবেও পাওয়া যায়। শরীরে ভিটামিন ই এর অভাবে যে সকল সমস্যা বা রোগ দেখা দেয় তা প্রতিহত করতে ভিটামিন ই এর ব্যবহার করা হয়। যদিও এটি খুবই বিরল, তাও কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক ডিসঅর্ডার থাকলে এটা দেখা যায়, এবং খুব কম ওজন যুক্ত প্রি ম্যাচিওর বাচ্চাদের ভেতরও দেখা যায়। এছাড়াও মাংস পেশির নানা সমস্যার চিকিৎসা করতে প্রধানত খেলাধূলার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সঠিক ভাবে কাজ করানোর জন্য ভিটামিন ই এর প্রয়োজন হয়। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবেও কাজ করে, ফলে কোশকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ রোধে
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যে ভিটামিন ই গ্রহন করলে অ্যালঝাইমার্স ডিজিজের বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রন করা যায়। যদিও সমস্ত গবেষণায় তা দেখা যায়নি। ভিটামিন ই অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ কে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তবে অ্যান্টিঅ্যালঝাইমার্স ওষুধের সাথে সাথে ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট নিলে রোগের বৃদ্ধির গতিকে ধীর করে দেওয়া যায়।
ক্রনিক রোগের ফলে হওয়া অ্যানিমিয়া
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ভিটামিন ই erythropoietin ওষুধের গ্রহণ ক্ষমতা শরীরে বৃদ্ধি পায়, যা শিশু ও বড়দের ভেতর লোহিত রক্তকনিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
বিটা থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা
এটি একটি রক্ত সম্পর্কিত রোগ, যাতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান কমে যায়। যেসব শিশুদের মধ্যে বিটা থ্যালাসেমিয়া দেখা গেছে, তাদের ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট খেতে দেওয়া হয়।
এক্সট্রাভ্যাসেশান
ইন্ট্রাভেনাস ড্রাগ লিকেজ হয়ে আশেপাশের ত্বক ও টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়লে তাকে এক্সট্রাভ্যাসেশান বলে। ডাইমিথাইলসাফক্সাইড এর সাথে ভিটামিন ই দিয়ে চিকিৎসা করলে কেমোথেরাপির ফলে তৈরি হওয়া এই এক্সট্রাভ্যাশেসান কে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
মেন্সট্রুয়াল ক্র্যাম্পস
মেন্সট্রুয়াল সাইকেল শুরু হওয়ার দুদিন আগে থেকে এবং সাইকেল শেষ হওয়ার দুদিন পর পর্যন্ত যদি ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়া যায়, তাহলে মেন্সট্রুয়াল ক্র্যাম্পস এবং ব্লাড লস অনেক কম হয়। ফিস অয়েলের সাথে ভিটামিন ই নিলে তা আরো ভালো কার্যকরী হয়।
গ্লোমেরুলোস্ক্লরোসিস
এর ফলে কিডনির ভেতরের ব্লাড ভেসেল গুলো শক্ত হয়ে যায়। দেখা গেছে যে, ভিটামিন ই খাওয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করলে গ্লোমেরুলোস্ক্লরোসিসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ্র্যানুলোমা অ্যানুলেয়ার
এটি একটি ননক্যান্সারাস ত্বকের ক্ষত। ভিটামিন ই ত্বকের আক্রান্ত অংশে ব্যবহার করলে রোগ বাড়তে পারে না এবং ত্বকের ক্ষতগুলো সেরে যায়।
Huntington disease
এটি একটা ব্রেন ডিসঅর্ডার যার ফলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চলাচল ক্ষমতা, অনুভূতি এবং চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। ন্যাচারাল ভিটামিন ই (RRR–alpha—tocopherol) আর্লি হানিংটন ডিজিজের রোগলক্ষন কমাতে খুব ভালো ভাবে কাজ করে, যদিও অ্যাডভান্স স্টেজে ত্রমন কাজ করে না।
ইন্ট্রাক্রানিয়াল হেমারেজ
ব্রেন টিস্যু এবং স্কাল এর ভেতর থেকে রক্তপাত হতে শুরু হয়, যা ব্রেন ড্যামেজ করতে পারে এবং তা মৃত্যুর কারনও হতে পারে।
ভিটামিন ইক্যাপসুল এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভিটামিন ই খাওয়ার নিয়ম
সাবধানতা
গর্ভাবস্থা — প্রেগন্যান্সির প্রথম আট সপ্তাহে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন ই গ্রহন করা উচিত নয়। যদিও প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে এটি একদম সেফ যদি দৈনিক 1000 m.g পরিমানে গ্রহণ করা হয় (১৮ বছরের বেশি বয়সের মহিলাদের ক্ষেত্রে)।
ব্রেস্ট ফিডিং — যেসব মায়েরা শিশুদের স্তন দুগ্ধ পান করাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই খাওয়া একদম নিরাপদ, যদি তা দৈনিক 1000 m.g পরিমানে খাওয়া হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে — ভিটামিন ই শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত নিরাপদ, যদি তা সঠিক পরিমানে খাওয়া যায়। ১ থেকে ৩ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে 300 IU, ৪ থেকে ৮ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে 450 IU, ৯ থেকে ১৩ বছরের বয়সীদের ক্ষেত্রে 900 IU, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে 1200 IU হল সঠিক পরিমান।
প্রিম্যাচিওর ইনফ্যান্ট দের ক্ষেত্রে ইন্ট্রাভেনাস ভিটামিন ই ক্ষতিকর এবং দৈনিক পরিমানের থেকে বেশি খেলে তাও ক্ষতিকর।
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি — অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির ঠিক আগে এবং পরে ভিটামিন ই এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন যেমন, ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। তা দ্রুত সুস্থতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ব্লিডিং ডিসঅর্ডার থাকলে ভিটামিন ই গ্রহন করা যাবে না।
ডায়াবেটিস থাকলে এবং তার সাথে ভিটামিন ই খেলে তা হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রতিদিন 400 IU এর বেশি ভিটামিন ই খাওয়া যাবে না।
হেড, নেক ক্যান্সার থাকলে ভিটামিন ই প্রতিদিন 400 IU এর বেশি খাওয়া যাবে না। এর বেশি খেলে ক্যান্সার আবার গিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।
দু’বছরের বেশি সময় ধরে ভিটামিন ই খেতে থাকলে, তা ইনসুলিন রেসিস্টেন্স এর ক্ষতি করে এবং নন অ্যালকোহোলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে।
যাদের পূর্বে হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে দৈনিক 400 IU এর বেশি ভিটামিন ই মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
অস্টিওপরোসিস এ আক্রান্ত ব্যক্তিরা হাই ডোজে ভিটামিন ই এবং সি গ্রহন করলে এক্সারসাইজ এর মাধ্যমে যে উন্নতি ঘটার কথা, তা হয় না।
ভিটামিন ই প্রস্টেট ক্যান্সার এর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে এবং যে পুরুষেরা প্রস্টেট ক্যান্সার এ ভুগছেন তাঁদের অবস্থার আরো অবনতি হয়।
রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, যা রাতের বেলার দৃষ্টিকে দুর্বল করেব দেয় এবং সাইড ভিশন কে নস্ট করে দেয়, এই রোগ থাকলে ভিটামিন ই এই সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দেয়। এই রোগে ভিটামিন ই সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়াই সবথেকে ভালো।
যাদের পূর্বে স্ট্রোক হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে 400 IU এর বেশি ভিটামিন ই খুব বিপজ্জনক হয়ে ওঠে এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
সার্জারির সময়ে এবং পরে ভিটামিন ই রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই সার্জারির কমপক্ষে দু’সপ্তাহ আগে থেকে ভিটামিন ই খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
যাদের শরীরে ভিটামিন কে কম পরিমানে আছে, তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই রক্ত সঠিক ভাবে জমাট বাঁধায় বাধা সৃষ্টি করে।
অন্যন্য ওষুধের সঙ্গে বিক্রিয়া
· Cyclosporine (Neoral, Sandimmune) এর সাথে খুব হাই ডোজে ভিটামিন ই খেলে তা Cyclosporine শরীরে কতটা শোষিত হবে, তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। ভিটামিন ই Cyclosporine এর এফেক্ট এবং সাইড এফেক্টর ওপর প্রভাব ফেলে।
কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…
ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…
সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…
পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…
ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…
This website uses cookies.
Read More
Leave a Comment