Search
Close this search box.

বারবার ইউরিন ইনফেকশনের কারণ কী?

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা ইউটিআই-এর সমস্যায় বহু মানুষই ভোগেন। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খানিকটা হলেও বেশি। প্রশ্ন হল ইউরিন ইনফেকশন কী?

শরীরের কোনও ব্যাকটেরিয়া বা মাইক্রো অর্গ্যানিজম প্রবেশ করলেই তা হল ইনফেকশন বা সংক্রমণ। ইউটিআই-এর ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ইউরিনারি ট্র্যাক্ট-এ প্রবেশ করে। ব্যাকটেরিয়া দু’ভাবে প্রবেশ করতে পারে। ১) সরাসরি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট কোনও ভাবে ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পরিবেশে উন্মুক্ত হলে। ২) কিংবা রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে। রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের আশঙ্কা শতকরা হিসেবে যথেষ্ট কম। প্রধানত সংক্রমণ হয় ইউরেথ্রার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের কারণে।

অতিপরিচিতি ব্যাকটেরিয়া

যে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে বেশি সংক্রমণ ঘটে তার নাম ই কোলাই বা এসচেরিচিয়া কোলাই। সাধারণভাবে এই ব্যাকটেরিয়াকে মানুষ বি কোলাই নামে ডেকে থাকেন।

ইউরিন ইনফেকশনের লক্ষণ

  1. রোগীর ঘন ঘন ইউরিনের বেগ আসে। ইউরিন চেপে রাখতে সমস্যা হয়।
  2. কিছু সময় পর ইউরিন করার সময় প্রবল জ্বালা ভাব থাকে।

দ্বিতীয় উপসর্গ প্রকাশ পাওয়া মাত্রই একটু সতর্ক হওয়া দরকার ও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। না হলে সাধারণ ইউটিআই বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে।

  • রোগের জটিল অবস্থায় তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
  • রোগীর জ্বর আসার আশঙ্কাও থাকে।

কাদের আশঙ্কা বেশি

পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে মহিলাদের ইউরিন ইনফেকশনের ঘটনা অনেক বেশি। তার কারণ রয়েছে। ভেঙে বললে সুবিধা হবে।

ই কোলাই নামে যে ব্যাকটেরিয়ার কথা বলা হল তা আসলে মানবদেহেই থাকে। কোথায় থাকে? — উত্তর হল মলদ্বারে। মলদ্বারই হল ই কোলাই-এর ঘরবাড়ি।

যতক্ষণ ই কোলাই ব্যাকটেরিয়া মলদ্বারে থাকছে ততক্ষণ কোনও সমস্যা নেই। মলদ্বার থেকে শরীরের অন্য যে কোনও অঙ্গে চলে গেলেই শুরু করে নানা জটিলতা।

মহিলাদের ইউরেথ্রার আকার খুব ছোট। মলদ্বার থেকে ইউরেথ্রার দূরত্বও কম হয়। এর ফলে শৌচকর্ম করার পর পরিষ্কার হওয়ার সময় মলদ্বার থেকে ব্যাকটেরিয়া এসে ইউরেথ্রার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

এই কারণেই মহিলাদের বারং বার ইউরিন ইনফেকশনের কবলে পড়তে দেখা যায়।

পুরুষের ক্ষেত্রে সমস্যাটা হয় অন্যরকম। ব্যাকটেরিয়া পূর্ণ টয়লেট বা অন্য কোনও জায়গার সংস্পর্শে পুরুষাঙ্গ সরাসরি এলে এমন সমস্যা হতে পারে।

ইউরিন অনেকক্ষণ ধরে রাখলে কি সংক্রমণ বেশি হয়?

ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার প্রধান কারণই হল শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করা। অন্য কোনও কারণেই সংক্রমণ হতে পারে না। এছাড়া খুব নোংরা কোনও টয়লেট ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়ার কারণেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউটিআই হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে মহিলাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজের দেহ থেকেই সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

বারবার ইউরিন ইনফেকশনের কারণ কী?

পুরুষদের ক্ষেত্রে কারণ

ছেলেদের সাধারণত বারবার ইনফকেশন হয় না। হলেও হতে পারে দুই জায়গায়— ক) কিডনিতে। এক্ষেত্রে এই সমস্যাকে বলে পাইলোনেফ্রাইটিস। দেখা যায় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েই রোগীর কিডনি থেকে সংক্রমণ পুরোপুরি সরানো সম্ভব হয় না। খ) প্রস্টেট ইনফেকশন। এক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে কোনও সংক্রমণ হলে ওষুধ খেতে হয় দীর্ঘদিন ধরে। কারণ প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে রক্ত সরবরাহ তেমন ভালো থাকে না। তাই ওষুধ খুব ভালোভাবে পৌঁছাতে পারে না। সংক্রমণ সারতে দেরি হয়। শর্ট কোর্স অ্যান্টিবায়োটিক দিলে কয়েকদিন পর ফের সমস্যা ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে যায়।

অতএব পুরুষের ক্ষেত্রে বারংবার সংক্রমণ হলে কিডনি ও প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে কোনও সংক্রমণ আছে কি না তার পরীক্ষা করিয়ে দিতে হবে দীর্ঘদিনের অ্যান্টিবায়োটিক।

নারীর ক্ষেত্রে কারণ

তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে প্রথমবার ইনফেকশন হলে পরবর্তীকালে পুনরায় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে ৩০ শতাংশ। যাঁর দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হয়েছে তাঁর তৃতীয়বার সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে ৫০ শতাংশ। যাঁর তৃতীয়বার হয়েছে তাঁর চতুর্থবার সংক্রমণ হওয়ার শঙ্কা থাকে ৬০ শতাংশ। অতএব মোদ্দা বিষয়টা হল, যাঁর যতবার সংক্রমণ হচ্ছে তাঁর ততবার সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।

রোগ নির্ণয়

ইউরিন রুটিন এবং কালচার করে ইউটিআই চিহ্নিত করা যায়।

ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসা

উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে আসুন। কারণ দেরি করলেই সংক্রমণ ক্রমশ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট বেয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে। প্রথমে প্রস্রাবের থলিতে ওঠে। এই সমস্যাকে বলে সিস্টাইটিস। আরও দেরি হলে ইউরেটর বেয়ে কিডনিতে পৌঁছে যেতে পারে। তখন তা হয়ে গেল পাইলোনেফ্রাইটিস! এমন ক্ষেত্রে রোগীকে টানা দুই সপ্তাহ আইভি অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। তাই এতদূরে অসুখ না গড়াতে দিতে চাইলে উপসর্গ প্রকাশ পাওয়া মাত্র চিকিৎসকের কাছে যান।

কয়েকদিনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই রোগী উপকার পান। কাকে কতদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে কতদিন অন্তর সংক্রমণ হচ্ছে তার উপর। বিশেষ করে মাসে মাসে সংক্রমণ হলে রোগ প্রতিরোধক হিসেবে দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স করাতে হবে।

মনে রাখবেন

ইউটিআই-এর সঠিকভাবে চিকিৎসা না হলে কিডনি ফেলিওর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীর ক্ষেত্রে কিডনিতে পুঁজ জমে কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে মানে সংক্রমণ খুব জটিল হয়ে পড়েছে।

রোগ প্রতিরোধ
  • বাড়ির টয়লেট যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন।
  • মহিলারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার সময় জল সামনে থেকে পিছনে টানুন।
  • ডায়াবেটিস থাকলে ব্লাড সুগার কন্ট্রোলে রাখুন।
সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক