অ্যাসিড রিফ্লাক্স কি? অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি ও তার থেকে মুক্তির উপায়

Published by

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ফলে পেটের অ্যাসিড খাদ্যনালী অব্দি উঠে আসে। যার ফলে মুখে দুর্গন্ধও হতে পারে। অনেক সময় মশালাদার খাবার খাওয়ার ফলে বা অ্যাসিড কমানোর ওষুধ খাওয়ার ফলেও এই দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।  সুতরাং কিছু ভুল  অভ্যাসগুলি পরিবর্তন করা উচিত যাতে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা এড়ানো যায় ।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স কি?

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যাটিকে ডাক্তারি  ভাষায়  গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি /GERD) বলা হয়। আজকাল শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বৃদ্ধ বয়সে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা  দেখা যায়। প্রায়শই, খাদ্যাভাসের ভুল অভ্যাস যেমন অকালীন খাবার খাওয়া বা খালি পেট থাকা এবং খাওয়ার  পরেই শুয়ে পড়া ইত্যাদি কারণে অ্যাসিড রিফ্লাক্স হয়।

আমাদের পাকস্থলীর মধ্যে হাইড্রোলিক অ্যাসিড নামক কড়া একপ্রকার অ্যাসিড থাকে। এই   অ্যাসিড কার্যকারীভাবে খাবার হজম করতে সাহায্য করে  এবং  ব্যাকটেরিয়ার মতন অযাচিত মাইক্রোবসের হাত থেকেও রক্ষা করে।ইসোফেগাস হল পাকস্থলী ও গলার সংযোগকারী নালী। পাকস্থলীর এই অ্যাসিড যখন পেছনের দিকে ইসোফেগাসে আসে তাকে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বলে। অ্যাসিড রিফ্লাক্স বিশেষভাবে গ্যাস্ট্রোসোফিজিয়াল- রিফ্লাক্স নামেও পরিচিত। অ্যাসিড রিফ্লাক্সের সময়ে, কেউ হয়ত মুখের মধ্যে গিলে নেওয়া খাবার কিংবা টক তরলের স্বাদ পেতে পারে কিংবা বুক জ্বালা করতে পারে।

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণ কী?

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের নিম্নলিখিত লক্ষণ রয়েছে তবে বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন লক্ষণ হয় । হার্টবার্ন একটি অস্বস্তিকর জ্বালা যা খাদ্যনালীতে ঘটে এবং এটি স্তনের অঞ্চলের পিছনে অনুভূত হয়। শুয়ে থাকলে বা ঝুঁকলে  এটি আরও হয়। অ্যাসিড রিফ্লাক্স বেশ কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে এবং প্রায়শই খাওয়ার পরে হয়। অম্বল ব্যথা যা ঘাড়ে এবং গলা পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। পেটের তরল কিছু ক্ষেত্রে গলার পিছনে পৌঁছতে পারে, যার ফলে তিক্ত বা টক স্বাদের ঢেকুর ওঠে।

  • অম্বল
  • হজম প্রক্রিয়া দুর্বল হওয়া ।
  • শুষ্ক একটানা কাশি
  • গলার সমস্যা-যন্ত্রণা, ঘরঘর আওয়াজ কিংবা ল্যারিংজাইটিস
  • হাঁপানি ও বারবার নিউমোনিয়া হওয়া
  • বুক কিংবা তলপেটের ওপরদিকে ব্যথা
  • গিলবার সময়ে কষ্ট বা যন্ত্রণা হওয়া
  • বুকজ্বালা,
  • দাঁতের ক্ষয় ও মুখে দুর্গন্ধ
  • বদহজম।
  • অনিয়মিত রুটিন থাকা।
  • খারাপ খাবার এবং পানীয় গ্রহণ ।
  • টক ঢেকুর উঠে আসা ।
  • নাকে সোঁ সোঁ শব্দ হওয়া, গা গোলানো, বমি ।
  • বিচলিত বোধ করা।
  • তলপেটে জ্বালা হাওয়া ।
  • মুখে খাবার ফায়ার আসা ।
  • খাবার গিলতে অসুবিধা  হওয়া ।

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণ কী?

অ্যাসিড রিফ্লাক্স ঘটে যখন পেটের অ্যাসিডের কিছু উপাদান খাদ্যনালীতে, গুলালের মধ্যে প্রবাহিত হয়। হার্টবার্নের হৃদয়ের সাথে কোনও সম্পর্ক নেই। পেটে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে, একটি শক্তিশালী অ্যাসিড যা খাদ্য ভাঙে  এবং ব্যাকটিরিয়ার মতো রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। পেটের আস্তরণটি শক্তিশালী অ্যাসিড থেকে রক্ষা করার জন্য বিশেষভাবে কাজ করে  তবে খাদ্যনালী সুরক্ষিত করে  না।

মাংসপেশীর একটি রিং , গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল স্পিঙ্কটার সাধারণত একটি ভালভ হিসাবে কাজ করে যা খাদ্য পেটে প্রবেশ করতে দেয় তবে খাদ্যনালীতে ফিরে আসে না। যখন এই ভাল্ব ব্যর্থ হয়, এবং পেটের সামগ্রী  খাদ্যনালীতে পুনর্বার হয়ে যায়, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণগুলি অনুভূত হয়, যেমন – অম্বল, বুকে জ্বালা ।

  • GERD কখনও কখনও অজানা কারণে সমস্ত বয়সের লোককে প্রভাবিত করে। প্রায়শই এটি একটি লাইফস্টাইল ফ্যাক্টরের কারণে হয়।  তবে এটি সবসময় প্রতিরোধ করা যায় না, এমন কারণেও হতে পারে।
  • প্রতিরোধযোগ্য না হওয়ার একটি কারণ হলো হার্নিয়া (বা হিটাস)। ডায়াফ্রামের একটি গর্ত পেটের উপরের অংশটি বুকের গহ্বরে প্রবেশ করতে দেয়, কখনও কখনও তাই জন্য  জিইআরডি বাড়ে।
অন্যান্য  কারণগুলি  যা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে
  • চকোলেট, ভাজা খাবারের মতন নির্দিষ্ট কিছু খাবার সমস্যার কারণ হতে পারে
  • জিইআরডি-র সবথেকে প্রচলিত কারণ হল বেঠিক খাবার কিংবা খাওয়ার অনিয়ম
  • শর্করাযুক্ত পানীয়, কার্বোনেটেড পানীয়, কফি এবং অ্যালকোহলও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের জন্য দায়ী।
  • হিয়াটাল হার্নিয়াও জিইআরডি-র কারণ। পাকস্থলীর সামান্য অংশ যখন ডায়াফ্রামের খোলা দিয়ে বুকের দিকে বেরিয়ে আসে, তখন এটা হয়
  • ধূমপান (সক্রিয় ও নিস্ক্রিয় )
অ্যাসিড রিফ্লাক্সের চিকিৎসা  কী?

অ্যাসিড রিফ্লক্সের ওষুধগুলির মধ্যে অ্যান্টাসিড, প্রোটন পাম্প ইনহিবিটারস, ফেমোটিটিন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। সকল রোগীকে অ্যাসিড রিফ্লাক্স ওষুধ দেওয়া হয় না। যাদের সবসময় অ্যাসিড রিফ্লাক্সের  সমস্যা থাকে কেবল তাদের ওষুধ দেয়া হয় ।অ্যাসিড রিফ্লাক্সে যারা বারংবার আক্রান্ত হয়, তাদের চিকিৎসার মুখ্য উপায় হল, প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটার নামক বিশেষ শ্রেণীর ওষুধ ।

প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটার নামক ওষুধটি , অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে অ্যাসিড রিফ্লাক্স থেকে হওয়া ক্ষতি কম করে । সাধারণত প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটার নিরাপদ, সুরক্ষিত ও কার্যকারী কিন্তু অন্যান্য প্রেশক্রিপশান ওষুধের মতন সবার পক্ষে ঠিক হয় না এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল শোষণের ত্রুটি থেকে হওয়া পুষ্টির অভাব।

মুখ্য কিছু প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটার হলঃ ল্যান্সোপ্রাজোল, ইসোমেপ্রাজোল, রেবেপ্রাজোল, ওমেপ্রাজোল, প্যান্টোপ্রাজোল ইত্যাদি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে  ব্যাবহার করাই ভাল ।

কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে, ডাক্তার রোগীকে  অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। এই সার্জারিতে ফান্ডোপ্লিকেশন সার্জারি, এন্ডোস্কোপিক ইত্যাদি করা হয়

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের অসুবিধাগুলি কী কী হতে পারে

অ্যাসিড রিফ্লাক্স দেখা দিলে বেশ কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

  • হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড গঠন
  • শ্বাসকষ্ট
  • গলা ভারী লাগছে
  • মুখ ছালা
অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধ কিভাবে করা যেতে পারে ?

অ্যাসিড রিফ্লাক্স সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার পেছনে জীবনযাত্রা অনেকটা ভূমিকা পালন করে। ব্যবহারিক অথবা জীবনযাত্রার পরিবর্তন সমস্যা প্রতিরোধ করতে কিংবা সেটার উন্নতিতে সহায়তাকরে।অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

  • প্রতিদিন ব্যায়াম করা উচিত।
  • এমন কোনও অনুশীলন করবেন না যা পেটে চাপ সৃষ্টি করে ।
  • সব সময় শোবার 2 বা 3 ঘন্টা আগে খাবার খান।
  • ঢিলা ঢালা জামা  পরুন।
  • ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন করবেন না।
  • খাবারে কম মশলা খাবেন।
  • বছরে একবার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
  • অবশ্যই বীজযুক্ত ফল খান।
  • দিনে তিনবার সামান্য (একটি ছোট কাপ) ঠান্ডা মিষ্টি দুধ পান করুন।
  • পেঁয়াজ দইয়ের সাথে খেলে এসিডিটি  থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
Dhruba Biswas

Hi, I am Dhruba and I’m a Health Blogger. My goal is to make everyone aware of physical and mental health as well as new methods and technologies in the field of medical science.

Leave a Comment
Share
Published by

Recent Posts

ব্রঙ্কাইটিস: কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

কাকে বলে ব্রঙ্কাইটিস? ফুসফুসের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি অংশে বাতাসের অক্সিজেন রক্তে মেশে। এই অংশটির…

4 months ago

ডায়াবেটিস রোগীকে কখন দিতে হয় ইনসুলিন?

ডায়াবেটিস এমন একটি অসুখ যা শরীরের সব অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে…

4 months ago

ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই যে চিকিৎসা করাতে হয় এমন নয়। একমাত্র যখন ইউরিক অ্যাসিড থেকে…

4 months ago

কুকুরে কামড়ালে করণীয় কি

পাড়ার রাস্তা দিয়ে আনমনে হাঁটছিলেন বিধুবাবু। হঠাৎ পাড়ার কুকুর কালুর লেজে দিলেন পা! কালুর কী…

4 months ago

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে কী করণীয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী? হার্টের চারটি কুঠুরি বা চেম্বার থাকে। ওপরের দু’টি চেম্বার এবং নীচের দু’টি…

4 months ago

ব্রেন স্ট্রোক: এই লক্ষণগুলি থাকলে সতর্ক থাকুন

ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে আগে শরীরে কী কী সঙ্কেত আসে? ব্রেন স্ট্রোক কিন্তু একটা ভয়াবহ…

4 months ago