Search
Close this search box.

ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় ৪টি ভিটামিন

ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। একটা কথা কিন্তু আপনাকে সবসময় মাথায় রাখতেই হবে যে ত্বক হচ্ছে শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। তাই, ত্বককে সুস্থ রাখার জন্য বেশিরভাগ সময়েই বিশেষজ্ঞরা সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী (UV) রশ্মির হাত থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে চলার পরামর্শ দেন। সেই কারণেই যখন আপনি সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসবেন তখন আপনার সানস্ক্রিন ব্যবহার করা খুবই জরুরী।

এই প্রসঙ্গেই বলে রাখা দরকার যে, সূর্যরশ্মি কিন্তু সবসময় খারাপ নয়। প্রতিদিন মাত্র 10-15 মিনিটের এক্সপোজার পুরো ত্বক জুড়ে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে সহ ভিটামিন ডি আপনার ত্বকের জন্য সেরা ভিটামিনগুলির মধ্যে অন্যতম। আসলে, পর্যাপ্ত ভিটামিনই আপনার ত্বককে সুস্থ ও তরতাজা রাখতে পারে। শুধু তাই নয়, কালো দাগ, লাল লাল ছোপ, বলিরেখা, রুক্ষতা, অত্যধিক শুষ্কতার মত সমস্যাগুলিকে কমাতেও পারে।

ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলি সাপ্লিমেন্ট আকারে পাওয়া যায়। এছাড়াও, ত্বকের যত্নের জন্য ব্যবহৃত পণ্যগুলিতেও এই ভিটামিনগুলির কিছু অংশ থাকে।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি ভিটামিন হল :

ভিটামিন ডি :- যখন সূর্যের আলো আপনার ত্বকে শোষিত হয় তখন শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। তারপরে আপনার লিভার এবং কিডনি ভিটামিন ডি গ্রহণ করে ও সুস্থ কোষ তৈরি করার জন্যেই ভিটামিন ডি সারা শরীরে পরিবাহিত হয়। ভিটামিন ডি ত্বককে টানটান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি এটি সোরিয়াসিসের সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে । এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, ক্যালসিট্রিওল হল এক ধরণের ভিটামিন ডি এর একটি মানবসৃষ্ট সংস্করণ। এটি একটি টপিকাল ক্রিম যা সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় কার্যকরী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যালসিট্রিওল প্রয়োগে সোরিয়াসিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের ত্বকের প্রদাহ এবং জ্বালার পরিমাণ হ্রাস পায়।

ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির লিনাস পলিং ইনস্টিটিউট প্রতিদিন 600 আইইউ ভিটামিন ডি গ্রহণের পরামর্শ দেয়। আপনি যদি গর্ভবতী হন বা 70 বছরের বেশি বয়সী হন তবে আপনার আরও প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিদিন 10 মিনিট সূর্যের আলোর নীচে থাকা (প্রথমে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, বিশেষ করে যদি আপনার ত্বকের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে), প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি আছে এমন খাবার খাওয়া ( যেমন: সালমন , টুনা এবং কড) দরকারি।

ভিটামিন সি :- এপিডার্মিসের (ত্বকের বাইরের স্তর) পাশাপাশি ডার্মিসে (ত্বকের ভেতরের স্তর) উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) এবং কোলাজেন উৎপাদনে এই ভিটামিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই কারণেই ভিটামিন সি বহু অ্যান্টি-এজিং স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে পাওয়া মূল উপাদানগুলির মধ্যে একটি। ভিটামিন সি শরীরের প্রাকৃতিক কোলাজেন তৈরীতে সাহায্য করার পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলিকেও প্রতিরোধ করতে পারে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কিছু ক্ষেত্রে বলিরেখা কমিয়ে দেয়।পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কেটে যায় খুব তাড়াতাড়ি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ভিটামিন সি প্রয়োজন 1,000 মিলিগ্রাম। আপনি যদি দেখেন যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি পাচ্ছেন না, সেক্ষেত্রে কয়েকটি খাদ্যকে রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখা খুবই প্রয়োজনীয়। কমলালেবুর মতো বেশি সাইট্রাস জাতীয় খাবার খান। ভিটামিন সি-এর অন্যান্য উদ্ভিদ-ভিত্তিক উৎস যেমন স্ট্রবেরি, ব্রোকলি এবং পালং শাক পাতে রাখুন। এছাড়াও, শীতকালে প্রচুর পরিমাণে কমলার রস পান করুন। সর্বোপরি, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরিপূরক গ্রহণ করুন।

ভিটামিন ই :- ভিটামিন সি এর মতো, ভিটামিন ই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ত্বকের যত্নে এর প্রধান কাজ হল সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করা। ভিটামিন ই ত্বকে লাগালে সূর্যের ক্ষতিকর UV আলো শোষিত হয়ে যায়। এটি কালো দাগ এবং বলিরেখা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। সাধারণত, শরীর সিবামের মাধ্যমে ভিটামিন ই তৈরি করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সিবাম হল তৈলাক্ত পদার্থ যা ত্বকের ছিদ্র থেকে নির্গত হয়। সিবাম ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে এবং শুষ্কতা প্রতিরোধ করে। ভিটামিন ই ত্বকের প্রদাহ নিরাময়েও সাহায্য করে।

আপনার রোজকার খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন ই থাকা প্রয়োজনীয়। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন প্রায় 15 মিলিগ্রাম ভিটামিন ই দরকার। বেশি করে আলমন্ড বাদাম এবং সূর্যমুখী বীজ খাওয়া, একটি মাল্টিভিটামিন বা পৃথক ভিটামিন ই সম্পূরক গ্রহণ করা, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন সি উভয়ই ধারণ করে এমন টপিক্যাল পণ্য ব্যবহার করা খুবই জরুরি।

ভিটামিন কে :- ভিটামিন কে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন কে ত্বকের কিছু বিশেষ অবস্থা যেমন- স্ট্রেচ মার্কস্, বিভিন্ন ধরনের দাগ,কালো ছোপ,আপনার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন কে ত্বকের জন্য টপিক্যাল ক্রিমে পাওয়া যায় এবং এটি ত্বকের বিভিন্ন অবস্থার চিকিৎসা করতে সাহায্য করে। এমন রোগীদের জন্য যাদের সবেমাত্র অস্ত্রোপচার করা হয়েছে তাদের শরীরের ফোলাভাব এবং ক্ষত কমানোর জন্য চিকিৎসকরা এই ধরণের ভিটামিন ব্যবহার করেন।

ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন 90 থেকে 120 ug এর মধ্যে ভিটামিন কে প্রয়োজন। আপনি খাওয়ার মাধ্যমে এই ভিটামিন গ্রহণ বাড়াতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পাতে রাখতে হবে শাক, লেটুস, বাঁধাকপি, সবুজ মটরশুটির মত বেশ কয়েকটি খাবার।

ভিটামিন ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য :-

যেহেতু ভিটামিন আপনার স্বাস্থ্য এবং শরীরের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য, তাই ভিটামিনের অভাব ত্বকে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু ভিটামিন সি এবং ই আপনার ত্বককে সূর্য থেকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই উভয় ভিটামিনের ঘাটতি ত্বকের ক্ষতি সহ ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

জেনে রাখা দরকার, আপনি কিন্তু আপনার দৈনন্দিন খাদ্যের মাধ্যমে এই ভিটামিনগুলির যথেষ্ট পরিমাণ পেতে পারেন। আপনার শরীরে কোন ভিটামিনের ঘাটতি আছে কিনা তা নির্ধারণ করতে একটি রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন। তবে শরীরে যাতে ভিটামিনগুলির মাত্রা অতিরিক্ত না হয়ে যায় সেই জন্য একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক