বুকে ব্যাথার কারণ ও কমানোর উপায়

বুকে ব্যাথা বর্তমান সময়ে একটি কমন ডিজিস।আজকের আলোচনায় আমরা জানাবো বুকে ব্যাথার কারণ ও কমানোর উপায়।

সহজ ভাবে বললে বোঝায় যখন মানুষের হার্ট পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন গ্রহন করতে অক্ষম হয় তখন এই ব্যাথার উদ্ভব  হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ব্যাথা বুকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা ঘাড়, কাঁধ, হাতে ছড়িয়ে পরে।এই  ব্যাথা এতটাই তীক্ষ্ণ হয় যে তা কাবু করে দিতে পারে, আবার কখনও সামান্য চিনচিনে ব্যাথা হয়, যা কিছুসময় পর কমে যায়। অনেকসময় সিরিয়াস হার্ট ডিজিস এবং ফুস্ফুসের সমস্যা থেকেও বুকে ব্যাথা হওয়া সম্ভব। ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ সটাডিস এর তথ্য অনুযায়ী,  প্রায় ১৩ শতাংশ এমারজেন্সি রুমে এই ধরনের ব্যাথারই  চিকিৎসা করা হয়।

বুকে ব্যাথার কারণ

বুকে ব্যাথা হালকা হোক কিংবা সাঙ্ঘাতিক, মেডিকেল হেল্প নেওয়া আবশ্যিক। কিছু ক্ষেত্রে এইধরনের ব্যাথা জীবনঘাতী হতে পারে। বুকে ব্যাথা যে শুধুমাত্র হার্টের সমস্যার কারণে হতে আরে এমন ভাবা ভুল; পেট, ফুসফুস এমনকি মাংসপেশি এবং হাড়ের সমস্যা থেকেও এই ব্যাথার সূত্রপাত হতে পারে।

হার্টজনিত সমস্যা

  • হার্ট অ্যাটাক অর্থাৎ যখন হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল বিঘ্ন ঘটে।
  • অ্যাঞ্জাইনা এমন একধরনের বুকে ব্যাথা যা হার্ট সম্বন্ধিত রক্তনালিতে কোনোরকম বাধাবিপত্তি সৃষ্টি হলে দেখা দিতে পারে।   
  • হৃৎপিণ্ডের চারপাশে যে থলিবিশেষ থাকে তাকে পেরিকারডিয়াম বলে,সাধারণত প্রশ্বাসের সময়ে এই অংশে টান বা ব্যাথার সৃষ্টি হয়,এইধরনের প্রদাহকে  পেরিকারডাইটিস বলা হয়।
  • অ্যাওরটিক ডিসেক্সন হল মূল ধমনি রক্ত সঞ্চালন বিঘ্ন হওয়ার ফলে যখন ছিঁড়ে যায়। এটি  একটি বিরল ঘটনা তবে এতে প্রাণের সংশয় সবচেয়ে বেশি থাকে।
  • মাইকারডাইটিস হল একধরনের জীবাণু সংক্রমণ, যার ফলে হার্টের মধ্যপর্দায় টান ধরে, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং বুকে ব্যাথা উঠতে পারে এমনকি আকস্মিক মৃত্যুরও সম্ভাবনা থাকে।

বিপাক জনিত সমস্যা

বিপাক জনিত সমস্যা
  • অম্লত্ব অর্থাৎ অ্যাসিডিটি থেকে ব্যাথার সূত্রপাত হতে পারে।
  • খাদ্যনালির সমস্যার কারণে গিলতে অসুবিধা হওয়া।
  • পিত্তথলিতে স্টোন বা গলস্টোন ।
  • আগ্ন্যাশয় এবং পিত্তথলিতে বিপাকজনিত সমস্যার কারণে।

ফুস্ফুসজনিত সমস্যা

  • নিউমোনিয়া থেকে অনেকসময় বুকের পেশীতে টান ধরতে পারে।
  • ফুসফুসের বহিঃপর্দা এবং অন্তঃপর্দার মাঝের থেকে যখন বাতাস বেরিয়ে আসে অর্থাৎ এয়ার লিক হয়, একে নিউমোথোরাক্স বলে। ফলত শ্বাস নিতে কষ্ট  হয় এবং ফুস্ফুস রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • ফুস্ফুসীয় শিরা এবং কোশে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে ব্যাথার উদ্ভব হতে পারে, একে পালমোনারি এমবোলিসম বলে।   
  • ব্রঙ্কস্প্যাসম (Bronchospasms)  দেখা যায় মুলত তাদের মধ্যে যাদের অ্যাস্থমা বা দীর্ঘস্থায়ী পালমোনারি ডিজিস অর্থাৎ COPD (chronic  obstructive pulmonary disease) থাকে,  সেক্ষেত্রেও বুকে ব্যাথা পরিলক্ষিত হয়।
  • অতিরিক্ত কাশির ফলে ফুসফুসীয় পর্দার উপর চাপ সৃষ্টি হয় যার কারণে বুকে ব্যাথা হতে পারে। 

পেশি এবং হাড়জনিত সমস্যা

  • পাঁজর ভেঙ্গে গেলে বুকে ব্যাথা প্রাথমিক ভাবে হতে পারে।
  • পরিশ্রমের ফলে পেশীতে টান।
  • কম্প্রেসন ফ্রাকচার থেকে স্নায়ুতে চাপ পড়লে ব্যাথা হতে পারে।

এছাড়াও Shingles অর্থাৎ একধরনের  দাঁদ যা প্রধানত চিকেনপক্সের ভাইরাসের থেকে সংক্রামিত হয়, তা যদি   ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে, তাহলে বুক এবং পিঠে পেইন শুরু হতে পারে। কোনোরকম ঘটনা থেকে ভীত হয়ে পড়লে  দ্রুত হৃৎস্পন্দন, দ্রুত শ্বাসক্রিয়া,  বমিবমি ভাব, মাথা ঘোরানো এবং মৃত্যুশঙ্কা ইত্যাদি থেকে প্যানিক অ্যাটাক হয়, যার কারণে অনেকসময় বুকে ব্যাথা হতে পারে।

বুকে ব্যাথা কি কি লক্ষণের সাথে দেখা দেয়

এত অবধি এতটুকু জানা গেল যে বুকে ব্যাথা  শুধুমাত্র বুক অর্থাৎ হৃৎপিণ্ড এবং ফুস্ফুসের সমস্যা নয়, এটি পেটের গোলমাল, গ্যাসের সমস্যা বা বিপাকজনিত কারণেও হয়। তাছাড়াও হাড়ের সমস্যা এবং প্যানিক হওয়ার কারনেও এই বুকে ব্যাথা অনুভুত হতে পারে। অনেকসময় এমন হয় বুকে ব্যাথা প্রাথমিক ভাবে দেখা যায়না কিন্তু পড়ে গিয়ে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে দেখা যায়ঃ

  •  বুকে চাপ এবং জ্বালা
  • পিঠ এবং হাত-এ ব্যাথা,
  • ক্লান্তি,
  • হালকা মাথা ব্যাথা,
  • শ্বাসকষ্ট
  • বমি বমি ভাব।

যদি হার্টের সমস্যা সম্বন্ধিত বুকে ব্যাথা না হয়ে থাকে, সেইক্ষেত্রে নিম্নোক্ত লক্ষণগুলি দেখা যায়ঃ

  • মুখে অম্লভাব,
  • গিলতে কষ্ট হওয়া,
  • জোরে শ্বাস নিতে গেলে এবং কাশি হলে বুকে টান ধরা
  • জ্বর
  • দ্রুত গতিতে শ্বাস নেওয়া
  • পিঠের ব্যাথা যা বুকে চাপ সৃষ্টি করে

বুকে ব্যাথা কমানোর উপায় – চিকিৎসা

X-ray

বুকে হালকা ব্যাথা হোক কিংবা বেশি, সেটিকে তাচ্ছিল্য করে ফেলে রাখতে নেই, কারণ এমন অনেকসময় হয়ে থাকে এই সামান্য ব্যাথা পরবর্তীকালে এক বিরাট আকার নিতে পারে। প্রাথমিক ভাবে হার্টের কি পরিস্থিতি তা বোঝার জন্য ECG, Chest X-ray এবং রক্তপরীক্ষা করা খুব জরুরী। পরে প্রয়োজন হলে এবং ডাক্তার যদি বুঝে থাকেন তাহলে MRI, Angiogram দিতে পারেন।

 সাধারণত এর নিরাময়ের জন্য ওষুধ অর্থাৎ মেডিকেসনের পথই ডাক্তাররা বেছে নেন যেমন  nitroglycerin যা জিভের তলায় রাখতে হয় ফলে রক্তপ্রবাহ সহজ হয় । তাছাড়া অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয় যা রক্তকে পাতলা করে এবং Thrombolytic drugs যা রক্ত জমাট বাঁধতে প্রতিরোধ করে। যদি বুকে ব্যাথা কোন সাংঘাতিক কারণে হয়ে থাকে যেমন হার্টের  গুরুত্বপূর্ণ কোনো রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সেক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারি করার অতি প্রয়োজন। অ্যাসিডিটির কারণে বুকে ব্যাথা হলে সাধারনত Antacid জাতীয় ওষুধ এর উপর নির্ভর করতে হয়। যেহেতু প্যানিক অ্যাটাকের কারনেও বুকে ব্যাথা হয়, ডাক্তাররা তাই হতাশা উপশমকারী ওষুধ অর্থাৎ Antidepressants দিয়ে থাকেন। অ্যাওরটিক ডিসেক্সন এর ক্ষেত্রে খুব শীঘ্র সার্জারির প্রয়োজন হয়, তবে এতে ঝুঁকিও থাকে। ফুসফুস কোলাপ্স করে গেলে অনেকসময় ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন Lung reinflation করার অর্থাৎ কৃত্রিম উপায়ে ফুস্ফুসে বাতাস ভরা। অনেকসময় বিপাকজনিত কারনে বুকে ব্যাথা হয়, সেই ক্ষেত্রে সঠিক পরিমানে জল খাওয়া প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.