কলকাতা, ১৮ ডিসেম্বর: শিশু ও কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে কলকাতার মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস সম্প্রতি চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি বিভাগের সূচনা করল। বিভাগটির পরিষেবা প্রদানের সূচনা উপলক্ষ্যে ১১ ডিসেম্বর ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফ থেকে একটি আলোচনাচক্র আয়োজিত হয়। দেশ বিদেশের বিশিষ্ট মনোবিদরা আলোচনাচক্রে যোগ দেন। পরিষেবা প্রদানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন রাজ্যের শিল্প এবং নারী, শিশুবিকাশ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। অটিজম নিয়ে ভাষণ দেন সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইল্ড সাইকিয়াট্রিস্ট ভ্যালসমাম্মা ইয়েপেন।
আই এন কে-র চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট বিভাগের প্রধান, সাইকিয়াট্রিস্ট প্রবীণ কুমার জানালেন- এখনকার দিনের ছেলেমেয়েরা বয়ঃসন্ধিতেই অনেক পরিপক্ব। হাতে হাতে স্মার্টফোন এসে যাওয়ায় প্রায় সারাক্ষণ ইন্টারনেটের সঙ্গেও সংযুক্ত থাকে তারা। একই সঙ্গে দৈহিক সৌন্দর্য নিয়েও তাদের মধ্যে সচেতনতা এসে যায়। তারা মনে করে রোগা না হলে সুন্দর হওয়া যায় না। তাই তারা যে কোনো মূল্যে বাইরের দুনিয়ার কাছে নিজেদের ছিপছিপে হিসেবে দেখাতে চায়। রোগা হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে তারা। অন্য দিকে বেশীরভাগ কিশোরকিশোরী আজকাল জাঙ্ক ফুডে অভ্যস্ত যার দরুণ তারা অনেকেই বেশ গোলগাল। দেখা যাচ্ছে, নিজেদের ছিপছিপে দেখাতে হঠাৎ করে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে তারা। তিনি আরো জানালেন- শুধু জেদ থেকেই তারা এমন করছে তা নয়। মনোজগতে কিছু পরিবর্তন আসায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে ছেলে-মেয়েরা। ওজন বেড়ে যাবে, এমন এক আতঙ্ক সব সময়ে এখনকার কিশোর-কিশোরীদের তাড়া করছে। অতএব খাওয়াদাওয়া বন্ধ করতে তাদের এত বাড়াবাড়ি। কেউ কেউ খাওয়ার পরে গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে দেয় যাতে খাওয়াটা গায়ে না লাগে। এই ধরণের মনোবিকারকে বলে বুলিমিয়া নার্ভোসা। অন্য দিকে, খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দেওয়ার পরে
কারুর কারুর খাবার খেলেই বমি হয়ে যায়। একে বলে অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা।
এ ধরণের মনোবিকারের চিকিৎসা না করালে অবধারিতভাবে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হ’বে। সেগুলি এরকম- দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, রক্তাল্পতা, আঙুলের নখ নীলচে হয়ে যাওয়া, চুল পড়া এবং নখ ও হাড় ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
আলোচনাচক্রে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকদের বক্তব্য থেকে আরো জানা গেল, বডি ডিজমর্ফিক ডিজঅর্ডার নামে এক মনোবিকারের জেরেও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে খাওয়াদাওয়া অস্বাভাবিক কমিয়ে বা ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। শরীরের ওপর এই মনোবিকারের প্রতিক্রিয়াও বিধ্বংসী।
আপনার নিজের সন্তানটির মধ্যে এই ধরণের মানসিক সমস্যা, খাওয়া কমিয়ে দেওয়া লক্ষ্য করলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অবিলম্বে আই এন কে-তে এসে চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি বিভাগের অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্টদের পরামর্শ নিন।
