বাত বা আর্থ্রাইটিস রোগটির সঙ্গে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত। মূলত, রোগী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আর্থ্রাইটিস এবং বাতজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ১২ অক্টোবর বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস হিসাবে পালিত হয়। রিউমাটোলজিকাল রোগের বেশিরভাগই অটোইমিউন রোগ। অটোইমিউন রোগ শুরু হয় যখন আমাদের বিকৃত ইমিউন সিস্টেম সেলফ অ্যান্টিজেনকে বিদেশি বলে মনে করে এবং আমাদের নিজস্ব অঙ্গকে আক্রমণ করে ও বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে।
বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রদাহের উদাহরণ আর্থ্রাইটিস (জয়েন্ট), ভাস্কুলাইটিস (রক্তবাহী), গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস (কিডনি), মায়োসাইটিস (পেশী), মাইলাইটিস (মেরুদন্ড), ইউভাইটিস (চোখ) ইত্যাদি। সাধারণভাবে পরিচিত বাতজনিত রোগ হল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস, এসএলই স্যাজওগ্রেনস সিনড্রোম, সেলেরোডার্মা – এইসব হল মাল্টি-সিস্টেম রোগ, যেমন- জয়েন্টে অ্যানকিলোসিং স্পন্ডিলাইটিস (বাত), ভার্টিব্রাল কলাম (স্পন্ডিলাইটিস), চোখ (ইউভেইটিস), গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট (ক্রোহনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস) এবং ত্বক (সোরিয়াসিস) সাধারণত আক্রান্ত হয়।
এই বিশ্ব বাত দিবস উপলক্ষে সকলকে জানানো হচ্ছে যে, বাতজনিত রোগগুলি কেবল জয়েন্টেই সীমাবদ্ধ নয়। এর দ্বারা অন্যান্য অঙ্গগুলিও আক্রান্ত হয়। যেহেতু অকার্যকর ইমিউন সিস্টেমের কারণে বাতজনিত রোগ দেখা দেয়, তাই বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দিয়ে ইমিউন-মডুলেশন বা ইমিউনো-সপ্রেশন চিকিৎসার প্রধান ভিত্তি। যদিও এই ডিসকেসের অনেক ক্ষেত্রে ‘নিরাময়’ সম্ভব নয়, তবে জৈবিক থেরাপি সহ আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
রুমা আচার্য নামে ৪৭ বছর বয়সী এক মহিলা (প্রকৃত নাম পরিবর্তিত) গত ২ বছর ধরে ভারসাম্যের সমস্যায় ভুগছিলেন এবং বারবার পড়ে যাচ্ছিলেন। অন্ধকারে বা চোখ বন্ধ করে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তিনি বেশ কিছুদিন মিথাইল-কোবালামিন নেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর সমস্যা আরও বেড়ে যায়। একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তাঁকে রিউমাটোলজিস্টের কাছে রেফার করেন। যে রোগটির সন্দেহ করা হচ্ছিল সেটি হল স্যাজওগ্রেনস সিনড্রোম। কিছু রক্ত পরীক্ষা – ANA, Ro, La, স্নায়ু এবং ঠোঁট বায়োপসির মাধ্যমে স্যাজওগ্রেনস সিনড্রোম বলে বাত বিশেষজ্ঞ দ্বারা নিশ্চিত করা হয়। ওই রোগীকে মিথাইল-প্রেডনিসোলোন এবং রিটুক্সিমাব দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছিল এবং ২ মাস ফলোআপের পর তাঁর উন্নতি দেখায়। এক্ষেত্রে, প্রধানত স্নায়ুগুলি জড়িত থাকলেও এই রোগটি আসলে একটি বাতজনিত রোগ (স্যাজওগ্রেনস সিনড্রোম)।
রিউম্যাটোলজিকাল রোগ আসলে জয়েন্ট ছাড়া অন্য অনেক অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে, যেমন, চোখ, মস্তিষ্ক, পেশী, স্নায়ু, কিডনি, ফুসফুস, হৃদয়, ত্বক এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট। ১২ অক্টোবর বিশ্ব বাত দিবস উপলক্ষে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে জানানো হচ্ছে যে, বাতজনিত রোগগুলি জয়েন্টের বাইরেও অন্যান্য অনেক অঙ্গকে প্রভাবিত করতে পারে। আর তাই এদিন ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস কলকাতায় ‘রোগী সচেতনতা প্রোগ্রাম’ এবং একটি সিম্পোজিয়াম ‘রিউমাটোলজি বিয়ন্ড জয়েন্ট’ নামক আলোচনা সভার ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন রিউমাটোলজি বিভাগের ডাঃ শ্যামাশিস দাস এবং ডাঃ দেবাঞ্জলি সিনহা।