Search
Close this search box.

ডেঙ্গু-রোগের-লক্ষণ

Written by

Health and Wellness Blogger

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বর অ্যাডিস এজিপ্টি (Aedes aegypti ) নামক মশা বাহিত একটি রোগ। মূলত চার ধরনের ভাইরাস এই ডেঙ্গু রোগের জন্য দায়ী এবং ঐ চারটি ডেঙ্গু ভাইরাসের যে কোনও একটি ভাইরাস রক্তে শরীরে প্রবেশ করলেই মানুষ এই জ্বরে আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাসগুলি Yellow fever এবং West Nile virus সংক্রমণের জন্যও দায়ী।

 কোনো ব্যক্তি একবার কোনও একটি ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সেই ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধক তন্ত্র (Immune System) সারাজীবন সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে  প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। যদিও তিনি অন্য  তিনটি ভাইরাসে সংক্রামিত হতে পারেন।  Center for Disease Control & Prevention এর দেওয়া তথ্য অনুসারে প্রতি বছর সারা বিশ্বে কমপক্ষে ৪০০ মিলিয়ন লোক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। বিশেষ ভাবে ক্রান্তীয় অঞ্চলগুলিতে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায় হয়। যে সকল অঞ্চলে সংক্রমণের সর্বাধিক ঝুঁকি রয়েছে সেগুলির মধ্যে রয়েছে

  • ভারতীয় উপমহাদেশ
  • দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া
  • দক্ষিণ চীন
  • তাইওয়ান
  • প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ
  • ক্যারিবিয়ান (কিউবা এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ ব্যতীত)
  • মক্সিকো
  • আফ্রিকা
  • মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা (চিলি, প্যারাগুয়ে এবং আর্জেন্টিনা বাদে)

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ

আপনি যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন, তবে প্রাথমিক সংক্রমণের প্রায় চার থেকে সাত দিন পর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলি শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণগুল হালকা মাত্রায় হয়ে থাকে ফলে অনেকেই সামান্য সর্দি-জ্বর ভেবে অবহেলা করে থাকেন। নিচে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলি দেওয়া হল-

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
  • হঠাৎ তীব্র জ্বর যা 106 ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত
  • তীব্র মাথাব্যথা
  • ফোলা লিম্ফ গ্ল্যান্ড
  • হাড়ের জয়েন্টে এবং পেশিতে ব্যাথা
  • জ্বর হওয়ার দুই থেকে পাঁচ দিনের মাথায় স্কিন র‍্যাশ
  • হালকা থেকে মারাত্মক বমি বমি ভাব
  • নাক বা মাড়ি থেকে হালকা রক্তপাত
  • ত্বকে হালকা ক্ষত ভাব
  • খিচুনি জ্বর

ডেঙ্গু জ্বর হলে রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে, কমতে কমতে ২০০০০ পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, যেখানে একজন সুস্থ লোকের প্লেটলেটের সংখ্যা ১.৫ থেকে ২ লাখের মধ্যে থাকে।

চিকিৎসায় অবহেলা করলে প্লেটলেট উৎপাদনকারী বোন ম্যারো পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা পরবর্তীকালে বিপদজনক হয়ে ওঠে। তাই এই সব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্টার বা নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে অবশ্যই নিজের পরীক্ষা করান।

ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে?

মশা যখন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দেয়, তখন ভাইরাসটি মশার মধ্যে প্রবেশ করে এবং সেই সংক্রামিত মশা যখন কোনও ব্যক্তিকে কামড় দেয় তখন ভাইরাসটি সেই ব্যক্তির রক্ত ​​প্রবাহে প্রবেশ করে, এখন যদি একই ভাইরাস দ্বারা তিনি পূর্বেও আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে সমস্যা থাকে না তবে যদি অন্য ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন তাহলেই সমস্যা এবং সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। গুরুতর ডেঙ্গু জ্বর ফুসফুস, যকৃত বা হার্টের ক্ষতি করতে পারে।  রক্তচাপ বিপজ্জনক স্তরে নেমে যেতে পারে, যার ফলে মৃত্যুও ঘটতে ঘটে।

ডেঙ্গু জ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?

 – ডেঙ্গু জ্বর রোধ করার জন্য কোনও ভ্যাকসিন নেই। মশার কামড় থেকে বাঁচা এবং মশার সংখ্যা হ্রাস করাই রক্ষার সর্বোত্তম পদ্ধতি।

  • প্রচুর জনবহুল আবাসিক অঞ্চলগুলি এড়িয়ে চলুন
  • লম্বা হাতা শার্ট এবং প্যান্ট মোজা মধ্যে পরুন
  • খোলা জানালায় mosquito net লাগান।
  • বাড়ির আসে পাশে জমা জল থাকলে পরিষ্কার করুন।
  • রাত্রে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন
  • মশা তাড়ানো ক্রিম বা ধুপ ব্যাবহার করুন
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার

মশার জনসংখ্যা হ্রাস করার সাথে মশার প্রজনন অঞ্চল থেকে মুক্তি পাওয়া প্রয়োজন।  কোনও জায়গায় জল জমে রয়েছে কি না দেখা বা জল জমতে পারে এমন জায়গার দিকে নজর দিন। ফুলদানি, ক্যান এই জাতীয় জিনিস নিয়মিত পরীক্ষা করা, খালি করা বা পরিবর্তন করা উচিত।

ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয়

-ডেঙ্গু জ্বর নির্ণয় করা কঠিন হতে পারে, কারণ এর লক্ষণগুলি সহজেই অন্যান্য জ্বর  যেমন ম্যালেরিয়া এবং টাইফয়েড জ্বর ভেবে ভুল হতে পারে হতে পারে। এই কারণেই আপনার চিকিৎসক কিছু নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তবেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নিশ্চিন্ত হন।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা

– ডেঙ্গু জ্বরের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে ব্যাথা এবং জ্বর কমাতে কিছু Pain Killer এবং প্যাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। তীব্র জ্বর থেকে ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে বলা হয়। ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলি নিচে দেওয়া হল-

  • প্রস্রাব হ্রাস
  • শুকনো মুখ বা ঠোঁট
  • অলসতা বা বিভ্রান্তি

প্রচুর জলপান ছাড়াও বেদানার রস খেতে বলা হয়, বেদানার রস শরীরে জলের পরিমাণ যেমন বজায় রাখতে সাহায্য করে তেমনি আবার রক্তঅল্পতাও দুর করে। অনেকে আবার পেঁপে পাতার রস খাবার পরামর্শও দিয়ে থাকেন।   

যদি আপনার ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক রূপ ধারণ করে তখন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এই সময় ডিহাইড্রেশন দুর করতে স্যলাইন দেওয়া হয়। রক্ত বা প্লেটলেট সংখ্যা কমে গেলে প্রতিস্থাপন (Transfusion to replace blood loss) করা হয়।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক