Search
Close this search box.

দাঁতের-ব্যথা-থেকে-মুক্তি

Written by

Health and wellness blogger

দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার 10টি প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়া উপায়

দাঁতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কি করণীয়?

আমরা সকলেই ছেলেবেলা থেকেই দাঁতের যত্ন নেওয়ার কথা অনেকবার শুনেছি। বড়দের দেখে দাঁতের যত্ন নেওয়ার নানা উপায়ও শিখেছি। কিন্তু দাঁতের গোড়া বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন মারাত্মক যন্ত্রণা হতে থাকে। এই সময় ব্যথার কারণে চোখে ব্যথা, মাথা ব্যথার মতো নানা সমস্যা এক সঙ্গে শুরু হয়।

যদি দাঁতে ব্যথা হয় তবে সবার আগে ব্যথা  ঠিক কি কারণে হচ্ছে তা নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ। তার ফলে ব্যথা, ফোলাভাব বা অন্যান্য উপসর্গগুলি গুলি থেকে কিভাবে সহজেই মুক্তি মিলবে তার পথ নির্ধারণে সুবিধা হয়৷

দাঁতের ব্যথা একদিন বা দুদিনের বেশি স্থায়ী হলে দেরি না করে ডেন্টিস্টের শরণাপন্ন হওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে কোনও কারণে যদি চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা সম্ভব না হয় বা ওই সময় যদি কাছেপিঠে দন্ত চিকিৎসক না থাকেন তাহলে কী করবেন? এ ক্ষেত্রে খুব সহজে কয়েকটি প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় দাঁতের ব্যথা সাময়িক ভাবে কমিয়ে দিতে পারে।

১. নুন-গরম জলে মুখ ধুয়ে নেওয়া

বহু মানুষের ক্ষেত্রেই নুন গরম জলে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলা দাঁতের ব্যথার জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা। নুনের জল একটি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক এবং এটি দাঁতগুলির মধ্যে আটকে থাকা খাবারের কণা এবং অবশিষ্ট দূর করতে সহায়তা করে। দাঁতের ব্যথার চিকিৎসায় নুন জল মাড়ির ফোলা ভাব এবং মুখের ভিতর যেকোনো ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।

ব্যবহারিক পদ্ধতিঃ

এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ জলে ১/২ চা চামচ (tsp) লবণ মিশিয়ে মাউথওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করুন।

২. হাইড্রোজেন পারক্সাইড এর ব্যবহার

হাইড্রোজেন পারক্সাইড দ্রবণ দিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের ব্যথা এবং ফোলাভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। উপস্থিত ব্যাকটেরিয়াকে বিনষ্ট করার পাশাপাশি হাইড্রোজেন পারক্সাইড মুখের ভিতর উপস্থিত প্লাক হ্রাস করা এবং দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহারিক পদ্ধতিঃ

৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পারক্সাইডের সাথে সমপরিমাণ জল  মিশিয়ে মাউথওয়াশ হিসাবে ব্যবহার করুন। কিন্তু কখনোই গিলে ফেলবেন না।

৩. কোল্ড কমপ্রেস

যে কোনও ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে কোল্ড কমপ্রেস একটি অনন্য উপায়। বিশেষ করে দাঁতের ব্যথা সংক্রান্ত। কারণ এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করার সময় তা নির্দিষ্ট অঞ্চলের রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে তোলে। তার ফলে ব্যথার তীব্র অনুভূতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এটি ফোলাভাব এবং মুখের ভিতর প্রদাহকে হ্রাস করতে সাহায্য করে।

ব্যবহারিক পদ্ধতিঃ

২০ মিনিটের জন্য আক্রান্ত স্থানে কয়েকটি বরফ তোয়ালে তে মুড়িয়ে ধরে রাখুন, আইসব্যাগ বাড়িতে থাকলে সেটিও ব্যবহার করতে পারেন। কয়েক ঘন্টা পর পর কোল্ড কমপ্রেস করুন যতক্ষণ না ব্যথার অনুভূতি কমছে।

৪. পেপারমিন্ট টি ব্যাগ

পেপারমিন্ট টি ব্যাগগুলি ব্যথা কম করতে এবং মাড়ির সংবেদনশীলতা প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়।

একটি ব্যবহৃত টি ব্যাগকে ঠান্ডা করে আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে।

টি ব্যাগ ঠান্ডা করে ব্যবহার করাই বেশি কার্যকর হয়। প্রয়োজনে কয়েক মিনিটের জন্য ফ্রিজে রেখে তারপর আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন৷

৫.  রসুন

রসুন ঘরোয়া অ্যান্টিবায়োটিক। রসুন দাঁতে তৈরি হওয়া ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ও ব্যথা উপশমেও সহায়ক। একটি-দুটি রসুনের কোয়া নিয়ে থেঁতলে সামান্য লবণ মিশিয়ে ব্যথার জায়গায় লাগান। রসুন চিবিয়েও খেতে পারেন। যন্ত্রণা কম না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন লাগাতে পারেন।

৬. ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্ট

ভ্যানিলার নির্যাসে অ্যালকোহল রয়েছে, যা ব্যথাকে কম করতে সহায়তা করে। এটি প্রমাণিত যে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যেকোনো উপাদান ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।

ব্যবহারিক পদ্ধতিঃ

আঙুলে বা একটি কটন বল অল্প পরিমাণে ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্টের মধ্যে ডুবিয়ে নিন, তারপর আক্রান্ত স্থানে সেটি লাগিয়ে দিন। প্রতিদিন কয়েকবার করে এটি সরাসরি আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন।

৭. লবঙ্গ

দাঁতের ব্যথা উপশমে রসুনেদ বহুল ব্যবহার যুগ যুগ ধরেই। দুটো লবঙ্গ থেঁতো করে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগান। লবঙ্গ চিবিয়ে আক্রান্ত স্থানে রেখে দিতে পারেন। আধ গ্লাস জলে লবঙ্গ তেল মিশিয়ে খেলেও উপকার পাবেন। এছাড়া এক গ্লাস জলে এক ফোঁটা লবঙ্গ তেলও মিশিয়ে মাউথওয়াশ করতে পারেন। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি থাকে যা দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে।

৮. পেয়ারা পাতা

পেয়ারা পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ক্ষতগুলি সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা এন্টিমাইক্রোবায়াল গুণাগুণ মুখের যত্নে সহায়তা করে।

ব্যবহারিক পদ্ধতিঃ

টাটকা এবং সতেজ পেয়ারা পাতা চিবিয়ে নিন। এছাড়া পেয়ারা পাতা ফুটন্ত জলে মিশিয়ে মাউথওয়াশ করুন।

৯. দুর্বার রস

দুর্বার রসের মধ্যে থাকা উচ্চ ক্লোরোফিল ব্যাকটেরিয়াগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তাই দূর্বার রস দাঁতে ব্যথা কমাতে খুব উপকারী। দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রতি দিন দূর্বার রস খান। এছাড়াও ফুটন্ট জলের মধ্যে দিয়ে মাউথ ওয়াশ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।

১০. গোলমরিচ

গোলমরিচের সাথে সম পরিমাণে নুন মিশিয়ে জল দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। দাঁতের উপর এই পেস্ট লাগিয়ে করেক মিনিট রাখুন। দাঁতে ব্যথা কমে গেলেও এটা কয়েক দিন করে গেলে আরাম পাবেন।

সতর্কীকরণঃ

দাঁতের সমস্যা যদি গুরুতর হয় অথবা যদি কোনো শারীরিক অবস্থার ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তাহলে অবশই ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন৷ এক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজন। এর সাথে প্রয়োজন দাঁতের সঠিক যত্নও৷ তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার আগে যদি ব্যথা তীব্রতর হয়, সেক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি পেইনকিলার হিসেবে Ibruprofen (Combiflam) এর ব্যবহার করতে পারেন৷

তবে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির কোনও একটি দেখা দিলে অবশ্যই দাঁতের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবেঃ

  • জ্বর
  • শ্বাস নিতে বা গিলতে সমস্যা
  • এক বা দুই দিনের বেশি ব্যথা স্থায়ী হলে।
  • ফোলাভাব
  • খাবারে কামড় বসানোর সময় দাঁতে ব্যথা হলে।
  • অস্বাভাবিক লাল মাড়ি
  • ফাউল-টেস্টিং ডিসচার্জ অথবা পুঁজ বেরোলে।
সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক