Search
Close this search box.

ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড -মেনে চলুন সঠিক স্বাস্থ্যবিধি

ঋতুস্রাব বা মাসিকের সময় সঠিক স্বাস্থ্যবিধি চলাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ । আসলে আমরা নিজেদের আধুনিক মনে করলেও ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে একটু কুণ্ঠিত বোধ করি। নিজেদের আধুনিকতার মোড়কে ঢেকে রাখলেও ‘ঋতুস্রাব’ বা ‘মাসিক’ বা ‘পিরিয়ড’ এই’ শব্দ গুলো লোকসমাজে আমাদের বেশ লজ্জায় ফেলে। ‘পিরিয়ড’ বা মাসিক’ বা ঋতুস্রাব একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা প্রতি মাসেই ঘটে, কারও ৭ দিন, কারও ৫দিন, বা কারও ৩ দিন স্থায়ী হয়। এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নারীকে প্রজননে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভুল ধারনা রয়েছে। বিভিন্ন রকম গঠনমূলক প্রচারে কিছু ভুল ধারণা মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে পারলেও কিছু থেকে গেছে। যেমন আজও সমাজে এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া কে অশুচি বলে ধরা হয়, কোনো পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না। মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

তবে,শহরের দিকে মেয়েদের অবস্থা তুলনা মূলক ভাবে উন্নত হলেও একটু গ্রামের দিকে মেয়েরা আজও ঐ কদিন অবহেলিত থাকেন, তাদের সকলের সাথে দেখা করা নিষিদ্ধ থাকে, একটি অন্ধকার ঘরে চটের উপর তাদের দিন কাটাতে হয়। স্নান করতে দেওয়া হয় না। খাবারেও থাকে বহু নিষেদাজ্ঞা । এখনো মহিলারা পিরিওড বা মাসিক কে চলতি ভাষায় ‘শরীরখারাপ’ বলা হয়। কিন্তু কেন? এটা তো একটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যার উত্তর হয়ত তারাও দিতে পারবেনা। তবে এইসময় যদি পরিষ্কার, পরিছন্ন না থাকা যায় তবে শরীর খারাপ হতে বাধ্য।

ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার পরিচছন্ন না থাকলে কি কি হতে পারে?

ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের লক্ষণ
  • মাসিক বা পিরিয়ডের সময় শরীরের যত্ন না করলে আমাদের সম্মুখীন হতে হবে-
  • ইউ. টি. আই (U.T.I) অর্থাৎ ইউরিনারি ট্রাক ইনফেকশান বা যোনিপথে জীবাণু সংক্রমন।
  • হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) আক্রমণ।
  • পরবর্তী কালে গর্ভধারণে সমস্যা।
  • এমন কী সারভিক্যাল ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধি ও হতে পারে।

ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড চলাকালীন সময় সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে কোন বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ ?

মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। সেগুলো হল-

পিরিয়ড বা মাসিকের সময় অনেকে কাপড় ব্যবহার করে। কিন্তু কাপড় ব্যবহার করা ঠিক নয়। এইসময় উচ্চশোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উচিত। তবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে পরিষ্কার কোনো কাপড় জীবাণু নাশক দিয়ে ধুয়ে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।

সকলের রক্ত প্রবাহ সমান হয় না। কারও কম কারও বেশি। সেই বুঝে স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করতে হবে। একটি প্যাড ৪ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করলে চলবেনা, এতে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে।

2. শরীরের সকল অঙ্গের মতোই যোনি পথে স্বাভাবিক জীবাণু বাস করে, কিন্তু রক্ত যখন দেহের বাইরে নির্গত হয়ে যায়,তখন তা জীবাণু বেড়ে ওঠার পক্ষে অনুকূল হয়, তাই একটি প্যাড দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা যাবে না।

প্যাড পরিবর্তন বা ব্যবহারের আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাতে ধুয়ে নিন

3. প্যাড বদলে নতুন প্যাড নেওয়ার আগে হাত ও সেই স্থান  পরিষ্কার করে ধুয়ে ও মুছে নিতে হবে। যাতে প্যাডে লেগে থাকা জীবাণু নতুন প্যাডে সংস্পর্শে সংক্রমন ঘটাতে পারে এবং জীবাণু সেখান থেকে জরায়ুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রয়োজনে জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।

4. টয়লেটে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা যাবে না, কারণ টয়লেটে থাকা নানারকম জীবাণু  প্যাডের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে । জীবাণুযুক্ত প্যাড ব্যবহার করলে তার থেকে মারাত্বক স্বাস্থ্য হানি ঘটতে পারে।

5. যোনিপথের বাইরের অংশে ও চামড়ার ভাজে রক্ত ও জীবাণু থাকতে পারে। তাই দিনে কয়েকবার গরম জল দিয়ে সেই স্থান পরিষ্কার করতে হবে। এতে পরিছন্ন থাকার পাশাপাশি মাসিক চলাকালীন ক্লান্তি, পিঠ হাত-পা ব্যথা ভাব কম অনুভূতি হবে।

6. মাসিক চলকালীন প্রতিদিন সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করতে হবে। তবে, যোনিপথ বা তার আসে পাশে সাবান ব্যবহার করা যাবেনা। এমনকি ডেটল,বা সেভলন ব্যবহার করাও অনুচিত হবে। যোনিপথ পরিষ্কারের জন্য সঠিক পি এইচ ব্যালেন্স যুক্ত লিকুইড ব্যবহার করতে হবে।

স্নান

7. স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন বা ব্যবহারের আগে সাবান দিয়ে ভালো করে হাতে ধুয়ে ও মুছে নিতে হবে।

8. ব্যবহার করা স্যানিটারি প্যাড কাগজে মুড়ে ডাস্ট বিনে ফেলতে হবে,যাতে তার থেকে অন্য কারোর সংক্রমন না হয়।

9. এইসময় পাবলিক বাথরুম ব্যবহার না করাই ভাল। তবে, একান্ত প্রয়োজন হলে পাবলিক বাথরুম ব্যবহারের আগে বাথরুমের সেই জায়গা টিকে ভালো করে ধুয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে । প্রয়োজনে সাথে ছোট বোতলে ডেটল বা সেভলন রাখতে হবে। জলের সাথে অল্প করে ডেটল বা সেভনল মিশিয়ে জায়গাটিকে ধুয়ে তারপর মূত্র ত্যাগ করতে হবে।

10. প্রতিদিন অন্তর্বাস গরম জলে ডেটল দিয়ে ধুতে হবে।                                     

মাসিকের সময় সঠিক স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় ভারত সরকারের উদ্যোগ

মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বহু মহিলা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন যা পরবর্তী কালে ক্যান্সারে পরিণত হয় ফলে প্রাণ হারান বহু ভারতীয় মহিলা। এই ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখে ২০১১ সালে ‘মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফার ‘ সংগঠন ১০ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের জন্য’ ‘মাসিক পরিছন্নতা’ বিষয়ক একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সর্বপ্রথম তারা ১৭ টি রাজ্যের ১০৭ টি জেলাকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেন ।  সেখানে তারা ‘ফ্রী ডেস’ নামক একটি স্যানিটারি প্যাকেট বিতরণ করেন গ্রামীণ কিশোরীদের মধ্যে মাত্র ৬টাকার বিনিময়ে। ২০১৪ সালের পর থেকে এই পরিকল্পনা টি জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় আসে এবং তার দায় ভার গ্রহণ করে প্রতিটি রাজ্য।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক