Search
Close this search box.

Written by

Health and Wellness Blogger

অ্যাকনে দূর করার সহজ উপায়

অ্যাকনে কী?


জীবনের কোনও না কোনও সময় একবার অন্তত অ্যাকনের সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষ পাওয়া ভার। অ্যাকনের কারণে মুখে কালো দাগ হয়ে যায়। এমনকী অ্যাকনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অত্যন্ত ব্যথার উদ্রেক করে।

অ্যাকনে হতে দেখা যায় মুখে, পিঠে এমনকী বুকেও

অ্যাকনের ধরন

অ্যাকনে নানা ধরনের হতে পারে—
ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইট হেডস, প্যাপুলিজ, নডিউলস, সিস্ট ইত্যাদি।

অ্যাকনে দেখা দিলে কী করবেন?
বারবার মুখ ধোবেন না। বারংবার মুখ ধোওয়ার অভ্যেস ত্বকে অস্বস্তিকর উপসর্গ তৈরি করতে পারে। মুখ ধোওয়ার জন্য ঈষদুষ্ণ জল ব্যবহার করা উপযোগী। নখ দিয়ে অ্যাকনে খুঁটবেন না। অ্যাকনে থাকলে মুখে বেশি মেক আপ ব্যবহার করবেন না। কসমেটিক ব্যবহার করতে হলে ওয়াটার বেসড কসমেটিকস হওয়া বাঞ্ছনীয়। না হলে কসমেটকিস ত্বকের রোমকূপ আটকে অ্যাকনের সমস্যা আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে। বিছানায় যাওয়ার আগে মেক আপ সম্পূর্ণ তুলে দিন।

অ্যাকনে কীভাবে হয়?

রোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে সেখানে হতে পারে অ্যাকনে। রোমকূপ থেকেই চুল বেরিয়ে আসে। প্রশ্ন হল রোমকূপ বন্ধ হয় কীভাবে? চুলের গোড়ায় থাকে সিবেসিয়াস গ্লান্ড। সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে ক্ষরিত হয় তৈলাক্ত পদার্থ সিবাম। সিবাম ত্বক ও চুলকে শুষ্ক হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে হরমোনের প্রভূত পরিবর্তন হয়। এর ফলে সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড সিবামের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এই সিবাম আবার ত্বকে থাকা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে প্রভাবিত করে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া তার সক্রিয়তা বাড়িয়ে দেয় যা ত্বকে প্রদাহের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ও এর ফলে তৈরি হয় পুঁজ। পুঁজ জমে রোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় ও অ্যাকনে তৈরি হয়।

অ্যাকনের ঝুঁকি কাদের বেশি?

বংশে অ্যাকনে হওয়ার ইতিহাস থাকলে বা বাবা এবং মায়ের অ্যাকনে তাকলে সন্তানেরও অ্যাকনে হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রেগন্যান্সি এবং মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল চলাকালীনও অ্যাকনে দেখা দেয় কোনও কোনও মহিলার।

কারা বেশি প্রভাবিত হয়?
বয়ঃসন্ধিকালে প্রায় সব টিনএজার অ্যাকনের সমস্যায় ভোগে।

১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি মেয়েদের মধ্যে অ্যাকনের সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। ছেলেদের মধ্যে ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি হয়।

কিছু ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও কারও কারও অ্যাকনের সমস্যা রয়ে যায়।

টেস্টোস্টেরনের প্রভাব
জানা গিয়েছে, বয়ঃসন্ধিকালে অ্যাকনের প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে টেস্টোস্টেরন নামে হর্মোন। শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়লে সিবামের ক্ষরণ বাড়ে।

মহিলাদের মধ্যে অ্যাকনে

মহিলাদের মধ্যে অ্যাকনের প্রভাব দেখা যেতে পারে ঋতুচক্রের সময়ে। বিশেষ করে মেনস্ট্রুয়েশন শুরুর আগে এই ধরনের সমস্যা ভোগেন অনেক মহিলাই। এছাড়া প্রেগন্যান্সির প্রথমে তিনমাসে বহু মহিলাকেই অ্যাকনের সমস্যায় ভুগতে দেখা গিয়েছে।

অ্যাকনে হওয়ার পিছনে অনেকেসময় দায়ী থাকতে পারে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। ওজন বৃদ্ধি এবং হর্মোনের পরিবর্তনের কারণে ওভারিতে ওভ্যুলেশনে সমস্যা হয় ও ওভারিতে সিস্ট তৈরি হয়। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের রোগীর রক্তে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেশি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যাকনের সমস্যাও হওয়া স্বাভাবিক।

অন্যান্য কারণ
কিছু কসমেটিকস ব্যবহারের কারণেও বাড়তে পারে অ্যাকনের সমস্যা।

কিছু নির্দিষ্ট অসুখে ব্যবহৃত ওষুধ সেবনের কারণেও অনেকের অ্যাকনের সমস্যা মাথাচা‌ড়া ঩দিয়ে উঠতে পারে।

কিছু গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, অ্যাকনে হওয়ার পিছনে ধূমপান বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ তামাকে থাকা নানা অপদ্রব্য রক্তে মেশে ও রোমকূপ বন্ধ করতে ভূমিকা নেয়। এর ফলে অ্যাকনের সমস্যা দেখা যেতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার মধ্যে অ্যাকনে
হঠাৎ করে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ত্বকে অ্যাকনের মাত্রা বাড়লে বুঝতে হবে হর্মোনের ভারসাম্যে গন্ডগোল হয়েছে। বিশেষ করে অ্যাকনের সঙ্গে যদি দাড়ি-গোঁফ বেরনো এবং পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়ে তাহলে সতর্ক হতে হবে। কারণ বিষয়টি পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের (পিসিওএস) দিকে ইঙ্গিত করে। রক্তপরীক্ষা এবং আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানের মাধ্যমে সমস্যাটি নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা

ঠিক কোন কারণে অ্যাকনে তৈরি হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা। স্বল্প সংখ্যক অ্যাকনের জন্য ত্বকে লাগানোর ক্রিম যথেষ্ট। অবশ্য অ্যাকনে খুব ভয়াবহ আকার ধারণ করলে অ্যান্টিবায়োটিকও খেতে হতে পারে রোগীকে। তবে অ্যাকনের সমস্যা পিসিওএস-এর কারণে হলে সেক্ষেত্রে দীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় ও হর্মোন থেরাপিরও দরকার পড়তে পারে।

অ্যাকনের জন্য দাগ
অ্যাকনে খুব বেড়ে গেলে অজান্তেই অনেকে খুঁটে ফেলেন। অ্যাকনে খোঁটার কারণে মুখে ঘা ও পরবর্তী কালে দাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অ্যাকনে খুঁটবেন না। অনেকে আবার অ্যাকনের উপরে লেবুর রস, টুথপেস্ট ইত্যাদি প্রয়োগ করেন। এর ফলে পরিস্থিতি অনেক সময় খারাপ দিকে চলে যায়। তাই অ্যাকনে হলে জল দেওয়া ছাড়া আর কোনও চিকিৎসা নিজের থেকে করতে যাবেন না।

লেজার ট্রিটমেন্ট
অ্যাকনের জন্য ত্বকে দাগ হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে লেজার ট্রিটমেন্টের সাহায্য নেওয়া যায়।

এক্সারসাইজ এবং ডায়েট

অ্যাকনের জন্য আলাদা করে এক্সারসাইজ এবং ডায়েটে মেনে চলার প্রয়োজন নেই। তবে পিসিওএস-এর রোগীর ওজন কমালে হর্মোনের ভারসাম্য ফিরতে সুবিধা হয়। সেক্ষেত্রে পিসিওএস-এর রোগী প্রতিদিন এক্সারসাইজ করুন। খান ফল এবং সবুজ শাকসব্জি। সেক্ষেত্রে ওজন কমবে। হরমোনের ভারসাম্য ফিরে আসার ক্ষেত্রেও মিলবে সহায়তা।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক