Search
Close this search box.

মেচেতা কিভাবে প্রতিরোধ করবেন

আমরা আমাদের আজকের আলোচনায় এমনই একটি সমস্যা নিয়ে কথা বলব। মুখমণ্ডলের ত্বকের এই সমস্যার নাম মেচেতা। কথায় বলে মুখ হল মনের আয়না। তবে সত্যিটা আরও বিস্তৃত। মুখ শুধু মন নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের আয়নাও বটে। অনেকসময় মুখের ত্বকের উপর অযাচিত কিছু সমস্যা বাসা বাঁধে। আর মুখ যেহেতু আমাদের পরিচয় বহন করে তাই মনের উপরও মুখের এই সমস্যাগুলি ক্ষত ছেড়ে যায়। মুখের অনেক সমস্যাই শারীরিক অসুখের দিকে ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষ করে মুখে কোনও দাগ তৈরি হলে তা একদিকে যেমন সৌন্দর্যহানি ঘটায়, তেমনই শরীরের অন্দরের নানা সমস্যার উপসর্গ হিসেবেও বিবেচিত হয়। এমনিতে ত্বকের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রায় সব মানুষই যত্নবান হন। আর মুখের ত্বক নিয়ে তো যত্ন একটু বেশিই করি আমরা। অবশ্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অসুখের নাম মেলাজমা। এই রোগে মুখমণ্ডলের ত্বকের উপর নানা আকারের প্যাচ দেখা দেয়। প্যাচগুলি গায়ের রঙের থেকে অনেকটা গাঢ় হয়। দেখা গিয়েছে মূলত গালেই মেলাজমার সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে এছাড়া কপাল, নাকের দুই ধারে, থুতনিতেও মেচেতা হয়। খুব কম সংখ্যক ক্ষেত্রে গলা এবং ঘাড়েও মেলাজমা দেখা যেতে পারে। আরও একটা বিষয় বলা প্রয়োজন, মেচেতা মুখের দুই দিকেই হয়। অর্থাৎ বাম এবং ডান গালে একসঙ্গে হয়। আবার মুখের একদিকে মেচেতা হল আর অন্যদিকে হল না, এমনটা প্রায় হতে দেখা যায় না।

মেচেতার প্রকৃতি

মনে রাখবেন, মেচেতা কোনওভাবেই চুলকায় না। এমনকী কোনওরকম জ্বালাও হয় না। যেখানে মেচেতা হয় সেই জায়গা ফুলে ওঠে না। শুধু ত্বকের রঙের পরিবর্তন করে। সমস্যা হল আমরা মুখ নিয়ে এত বেশ সচেতন থাকি যে, মুখমণ্ডলের ত্বকের রং সামান্য পরিবর্তন হলেই তা আমাদের মনের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। দেখা গিয়েছে, এই সমস্যায় আক্রান্ত বেশিরভাগ মহিলাই নিজেকে নিয়ে বড় বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন। সবসময় ভাবেন, এই দাগ নিয়ে নিশ্চয় বাকিরা আলোচনা করছে। কিংবা তিনি হয়তো আর কারও কাছে গ্রহণযোগ্য নেই ইত্যাদি। এই ভাবনা থেকে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। তাই এই রোগটিতে প্রথম থেকে যেমন সতর্ক থাকা জরুরি, তেমনই মনের জোর হারানোও উচিত নয়।

মেচেতা রোগের কারণ

এখনও অবধি এই অসুখের নির্দিষ্ট কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেচেতা নারী-পুরুষ সকলেরই হতে পারে। তবে মহিলাদের এই সমস্যা পুরুষের তুলনায় বহু গুণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দেখা গিয়েছে, মেচেতায় আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে ৯০ জনই মহিলা।

মেচেতা কখন হয় ?

i. দেখা গিয়েছে, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।

ii. সন্তানসম্ভবা বহু মহিলা মেচেতার সমস্যায় পড়েন। সন্তানসম্ভবাদের এই রোগ হলে তাকে ক্লোয়াজমা অথবা মাস্ক অব প্রেগন্যান্সি বলা হয়।

iii. দেখা গিয়েছে গায়ের রং গাঢ় হলে এই সমস্যা বেশি হয়।

iv. ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যের অভাব থেকেও এই রোগ হতে দেখা যায়।

v. একটানা জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খেলে দেখা দিতে পারে মেচেতা।

vi. হরমোন থেরাপির প্রভাবেও মেচেতা হতে পারে।

vii. মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তাও একটি কারণ।

viii. থাইরয়েডের অসুখ, সূর্যের আলোয় বেশি সময় কাটালেও মেলাজমার ঝুঁকি বাড়ে।

রোগ নির্ণায়ক পরীক্ষা

চিকিৎসক চোখে দেখে এই রোগ নির্ণয় করতে পারেন। এছাড়া ‘উডস লাইট’-এর মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যায়।

চিকিৎসা

ওষুধের সাহায্যে মেলাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ‘মেডিক্যাল পিল’ চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নিলে ভালো হয়। আবার মাইক্রোডার্মাব্রেশন পদ্ধতিতেও চিকিৎসা চালানো সম্ভব।দরকার পড়লে মৃদু মাত্রায় লেজার থেরাপিও করা যায়। এছাড়া বাড়িতে মাখার জন্য ক্রিম ব্যবহার করতে হয়। মনে রাখবেন, চিকিৎসার পরও মেচেতা আবার ফিরে আসতে পারে। তবে ভেঙে পড়বেন না। পুনরায় চিকিৎসা করালে রোগ নিয়ন্ত্রণে আসে।

মেচেতা প্রতিরোধ

রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করলে মেলাজমার সমস্যা বাড়তে পারে। তাই যথাসম্ভব রোদে বেরনো এড়িয়ে চলতে হবে। তবে অনেকেরই রোদে বেরিয়েই কাজ করতে হয়। তেমন ক্ষেত্রে রোদে বেরনোর প্রয়োজন হলে ত্বকে সানস্ক্রিন ক্রিম মাখতেই হবে।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক