সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি কি, তা নিয়ে কমবেশি ধারণা আছে প্রায় সকলেরই। একটা বহুল প্রচলিত কথা আছে “সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে”, সমস্যা এখানেই। যে সংসারের কথা এক্ষেত্রে বোঝানো হয়, তা তো আর শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রীর সংসার নয়, বরং একসাথে এক ছাদের নীচে জুড়ে থাকা সকলকে নিয়েই সংসার।
আর সংসার নামক জীবনের এই অধ্যায়ে জড়িয়ে থাকে নানা ভাল-মন্দ। সম্পর্ক, ভালবাসা, দায়-দায়িত্বর হাত ধরেই আসে মেনে নেওয়া, মানিয়ে চলার গভীর পাঠ। বিশেষ করে একটি মেয়ে যখন বিয়ের পর অন্য পরিবারে গিয়ে থাকতে শুরু করে তখন তাঁকেই নানা পরিস্থিতির মোকাবিলা সবচেয়ে বেশি করতে হয়। বিশেষ করে শাশুড়ি-বউমা সম্পর্ক নিয়ে বিয়ের আগে থেকেই টেনশনে থাকেন অনেকেই।
যৌথ পরিবার ভাঙতে ভাঙতে ৩-৪ সদস্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ হচ্ছে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির পরিমাপ। সমস্যা দেখা দিচ্ছে সেখানেও। মনোবিদরা মনে করেন যত নিউক্লিয়ার পরিবার তৈরি হচ্ছে ততই কম মানুষের সঙ্গে থাকার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাচ্ছে মানুষের। তাই আধুনিক প্রজন্মের মেয়েদের ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ি বলতে সাধারণত, শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামী। তার উপর সাংসারিক ক্ষেত্রে মূল কর্ত্রী হলেন শাশুড়ি। তাই শাশুড়ির সঙ্গে বোঝাপড়া খারাপ হলে শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ আদৌ কেমন হবে এ নিয়ে অনেকেই বিয়ের আগে টেনশনে ভোগেন।
![শাশুড়ি-বউমা সম্পর্ক](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/05/শাশুড়ি-বউমা-সম্পর্ক-1.jpeg)
শাশুড়ি বৌমার চিরকালীন কথিত বিবাদ আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয় একমাত্র সন্তানের ক্ষেত্রে। তৈরি হয় দুরত্ব৷ মাঝখান থেকে চাপে পড়ে বাড়ির একমাত্র ছেলেটির অবস্থা স্যান্ডুইচের থেকেও খারাপ। একজনের পক্ষ নিলে, আরেক জনের মুখ ভার। কিন্তু মা এবং স্ত্রী’র মধ্যে বা শাশুড়ি-বৌমা সম্পর্ক ভালো রাখার চাবিকাঠি কিন্তু থাকে ছেলেটির হাতেই। কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলেই কেল্লাফতে।
শাশুড়ি-বৌমা সম্পর্ক ভালো রাখতে কি করবেন?
কথা শুনুন
নিজেদের মধ্যে সমস্যা হলে মা এবং স্ত্রী দুজনেই আপনার সাথে তা শেয়ার করতে চাইবেন। মন দিয়ে দুজনের কথা শুনুন৷ মাথা ঠান্ডা রেখে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, কারণ আবেগ অনেকসময়ই আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়৷ তারা যখন আপনাকে বলবে মাঝখান থেকে কথা না বলে, কথা শেষ হওয়ার পর নিজের মতামত স্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করুন। ভুল থাকলে তা বুঝিয়ে বলুন। দুজনের ঝগড়া মেটাতে নিজে কখনোই ঝগড়ার আশ্রয় নেবেন না। নিজের চিন্তাভাবনা, বক্তব্য দৃঢ় ভাবে প্রকাশ করুন৷
![স্বামী-স্ত্রীর সংসার](https://www.healthinside.in/wp-content/uploads/2021/05/স্বামী-স্ত্রীর-সংসার.jpeg)
নিরপেক্ষ থাকুন
মা এবং স্ত্রী দুজনের ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ থাকুন৷ দুজনের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হলে যাকে নিরপেক্ষ ভাবে ভুল মনে হচ্ছে তাকে বোঝান, তবে মনে রাখবেন সেটা আড়ালে। সামনাসামনি বিরোধিতা করবেন না৷ এটা দুজনের ক্ষেত্রেই আত্মসম্মানের বিষয় হতে পারে৷
প্রয়োজনে শক্ত হোন, সহানুভূতিহীন নয়
অনেকের ক্ষেত্রে বিয়ে বেশ কয়েক বছর হলেও শাশুড়ির সঙ্গে বৌমার বোঝাপড়ার খুব মসৃণ নয়। কোথাও কোনও ভুলচুক থেকে যাচ্ছে কি? হতেই পারে, দোষের পাল্লা একজনের কম, অপরজন লাগাতার একই ভুল করে যাচ্ছেন৷ সংসার কোনো যুদ্ধক্ষেত্র নয়, তাই যিনি ভুল করেন তিনি না বুঝেই করেন৷ এরকম ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শক্ত হোন, বুঝিয়ে দিন এরকম ভাবে চললে সংসারে থাকা প্রতিটি মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ তবে কখনওই কথাবার্তা বা আচরণে, এমনকি মন থেকেও সহানুভূতিহীন হবেন না কারো প্রতিই৷
সন্তানের সাথে বাবা-মা’র সুসম্পর্ক তৈরি করুন
খেয়াল রাখবেন আপনার স্ত্রী’র সাথে আপনার মায়ের সম্পর্কে তৈরি হওয়া সমস্যা যেন কখনওই সম্পর্কে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি না করে৷ মা আগের প্রজন্মের মানুষ। হয়তো চাকরিও করতেন না। তাই নানা কাজে মতবিরোধ থাকতেই পারে। বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়েও সংঘাত আসতে পারে। আপনার স্ত্রী’র কাজের ক্ষেত্রটিও হয়তো তিনি তেমন বোঝেনই না, সে ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বোঝান তিনি যেন তাঁকে অবজ্ঞা না করে বরং কয়েক দিন গল্পের ছলে তার কাজ, নানা বিশ্বাস তৈরির কারণ তাঁকে বলুন৷ নিজেদের সমস্যার আঁচ যেন সন্তানের উপর না আসে। আপনার সন্তানকে, বাবা-মা’র কাছে রাখুন৷ তাঁদের জীবনের গল্প, লড়াইয়ের গল্প তার শৈশবকে আরও সমৃদ্ধ করবে৷ সেও বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে৷ শাশুড়ি -বৌমার সাথে সম্পর্কের জটিলতার আঁচ আপনার মায়ের বা স্ত্রী’র তরফ থেকেও আপনার সন্তানকে প্রভাবিত করছে কিনা সেদিকেও নজর রাখুন, এবং প্রয়োজনে যত্নশীল হোন।
কোন কোন জিনিস এক্কেবারেই করবেন না
মিথ্যের আশ্রয় নেবেন না
একজনের হয়ে অন্য জনকে বোঝাতে গিয়ে মিথ্যের আশ্রয় নেবেন না। এই নয় যে ঝামেলা মেটানোর জন্য অপ্রিয় সত্যি বলতেই হবে৷ মনে রাখা ভালো, দুজনেই আপনার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা কেউ কখনও কারোর পরিপূরক হতে পারেনা৷ প্রয়োজনে কাছে বসে বুঝিয়ে সমস্যা মেটান৷ কিন্তু মিথ্যে কখনওই নয়।
অবিশ্বাস কখনওই নয়
একজনের কথা শুনেই অপরজনকে অবিশ্বাস করবেন না। সমস্যা এলে সবাই একইরকম মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে পারেন না, রাগের মাথায় অনেক কথা বলতেই পারেন সেগুলো শুনেই অন্যজনকে দোষারোপ করবেন না। এতে যাকে বলছেন তিনি মন থেকে আঘাত পেতে পারেন, যা কাম্য নয়।
দোষারোপ নয়
কারো দোষ বুঝিয়ে বলা মানেই দোষারোপ নয়। তাই কথা বলার সময় সহনশীলতা বজায় রাখুন৷ যে দুজন ইতিমধ্যেই পারস্পরিক জটিলতার মধ্যে আছেন তাদের সমস্যা মেটাতে গিয়ে কোনো অবস্থাতেই নিজে মেজাজ হারাবেন না। সরাসরি কারো পক্ষ দিয়ে অপরজনকে দোষারোপ করবেন না৷ মা বা স্ত্রী কেউ যদি এক্ষেত্রে আঘাত পান, তাতে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবেনা৷
একটা কথা মনে রাখা জরুরি, যেকোনো সুস্থ সম্পর্কই তৈরি হয় একে অপরের ভালোবাসা, বিশ্বাস আর ভরসা দিয়ে৷ তাই শুধু বাড়ির শান্তি নয়, পারস্পরিক সম্পর্কের সুস্থতা বজায় রাখতে একে অপরের সাথে মন খুলে কথা বলুন৷ পরিবার ভাঙতে ভাঙতে তৈরি হওয়া এই তিন চার সদস্যের সংসারে কেউ কারো শত্রু হতে পারে না, হওয়া টা কাম্যও নয়। সম্পর্ক রক্ষার দায়ভারও কারো একার নয়। কোনো অবস্থাতেই ভরসা হারাবেন না৷ যত জটিলতাই আসুক, দিনের শেষে সবাই সবাইকে বুঝিয়ে দিন “আমি আছি, আমরা আছি”।