Search
Close this search box.

ক্রনিক কিডনি রোগের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা- স্বর্ণাভ রায় চৌধুরি

প্রথম দিকে ক্রনিক কিডনি রোগের লক্ষণ খুব একটা প্রকাশ পায় না বললেই চলে, যখন সমস্যা খুব জটিল আকার ধারণ করে তখনই এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। ক্রনিক কিডনি রোগে বা Chronic Kidney Diseases ( CKD ) এমন একটি সমস্যা যা একদিনে সংঘটিত হয় না । কিছু বিশেষ সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস এর কারণে যখন কিডনি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে তখন তা জটিল কিডনির সমস্যা দেখা দেয় যাকে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ Chronic Kidney Diseases ( CKD ) বলা হয়।

এখন জেনে নেওয়া যাক মানব শরীরের কিডনির কাজ কি
কিডনি শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল যা নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পাদনা করে –

  • শরীরে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ এবং ইলেট্রোলাইটসের সাম্য বজায় রাখে
  • লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
  • রক্তের pH ভারসাম্য বজায় রাখা
  • শরীর থেকে জলে দ্রবীভূত বর্জ্য পদার্থ শরীরের বাইরে রেচন হিসাবে বার করে দেহকে দূষণ মুক্ত রাখা

তাই কিডনি বিকল হতে থাকলে ধীরে ধীরে উল্লিখিত কাজ সমূহ ব্যহত হয়।

ক্রনিক কিডনি রোগের সমস্যা বা Chronic Kidney Diseases ( CKD ) হওয়ার কারণ কি ?

উঃ ক্রনিক কিডনি ডিজিজ Chronic Kidney Diseases ( CKD ) হওয়ার সবচেয়ে প্রচলিত কারণ উচ্চ-রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস।

বৃক্ক বা কিডনির গঠণগত এবং কার্যগত একক নেফ্রন। প্রত্যেকটা কিডনিতে প্রায় ১০ লক্ষের মত নেফ্রন থাকে। যারা একএকটি সূক্ষ্ম ছাঁকনির মত কাজ করে। কোনো রোগ যখন এই নেফ্রনগুলোর ক্ষতি সাধন করতে শুরু করে তখন কিডনির সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ উভয়েই এই নেফ্রন গুলোর ক্ষতি করে।

উচ্চ রক্তচাপ কিডনি, হৃদপিন্ড এবং মস্তিস্কের রক্ত নালিকাগুলোকে বিকল করে। কিডনিতে প্রচুর পরিমাণে রক্ত নালিকা থাকে। সুতরাং রক্ত নালিকাগুলোতে সমস্যা হলে তা কিডনির পক্ষে মারাত্মক হতে পারে।

অটো-ইমিউন রোগ সমূহ রক্ত নালিকাগুলোর ক্ষতি করে এবং যে এন্টিবডি তৈরী করে তা কিডনির পেশী সমূহের ক্ষতি করে।

বিভিন্ন ধরণের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ Chronic Kidney Diseases ( CKD ) হয় যেমন – বংশগত ভাবে পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ থাকলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ Chronic Kidney Diseases ( CKD ) হওয়ার কারণ। গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস থাকলে Lupus হতে পারে। স্ট্রেপ্টোকক্কাল সংক্রমণের ফলেও এ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৬৫ উর্ধ বয়স্ক ব্যক্তিদের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যা বা Chronic Kidney Diseases ( CKD ) হওয়ার সম্ভবনা বেশি। বিশেষ করে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যার পারিবারিক প্রবনতা থাকলে CKD –র সম্ভবনা বাড়ে। তাছাড়া নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্যও দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যা বা Chronic Kidney Diseases ( CKD) দেখা দেয় –

  • দীর্ঘ সময় ধরে নিয়মিত কম জলপান করা
  • ওবেসিটি বা স্থুলতা
  • অবস্ট্রাকটিভ কিডনি ডিজিজ
  • বিনাইন প্রস্টাটিক হাইপারপ্লাসিয়া গত কারণে ব্লাডার অবস্ট্রাকশান
  • এথেরোস্ক্লেরোসিস
  • সিরোসিস এবং যকৃতের বিকল অবস্থা বা লিভার ফেলিয়োর
  • কিডনির সাথে যুক্ত আর্টারী সরু হয়ে যাওয়া
  • ব্লাডার ক্যান্সার
  • কিডনিতে পাথর ( Kidney Stone )
  • কিডনি সংক্রমণ
  • Systemic Lupus Erythematosus
  • স্ক্লেরোডার্মা
  • ভ্যাস্কুলাইটিস
  • ভ্যাসিকোইউরেটারাল রিফ্ল্যাক্স ( যখন মূত্র বাইরে প্রবাহিত না হয়ে আবার কিডনিতে ফিরে আসে)

এই কারণগুলোই সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যা বা Chronic Kidney Diseases ( CKD ) হওয়ার জন্য দায়ী।

ক্রনিক কিডনি রোগের লক্ষণ কি?

উঃ একদিনে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি সমস্যা বা Chronic Kidney Diseases ( CKD ) প্রকাশ পায়না। তাই ঠিক কবে থেকে সিকেডি শুরু হচ্ছে তা বোঝা সম্ভব নয়। যেহেতু ধীরে ধীরে এই সমস্যা বাড়তে থাকে তাই আক্রান্ত ব্যক্তিও চট করে কোনো উপসর্গ বুঝে উঠতে পারেন না।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিডনি প্রায় বিকল হয়ে এলেই এই সমস্যা ধরা পড়ে। তবে ধীরে ধীরে নিম্নলিখিত শারীরিক উপসর্গ মারফত সিকেডি তাঁর উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করে –

  • চোখের চারপাশ ফোলা অর্থাৎ পেরিঅরবিটাল এডেমা
  • অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ
  • পা ফোলা বা পেডাল এডেমা
  • ক্লান্ত ভাব বা অবসন্নতা
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের হ্রাস
  • বমি ভাব, বিশেষ করে সকালে এবং খাওয়ার পর
  • চুলকানি
  • ওজন হ্রাস
  • মাংসপেশীর টান ধরা
  • অনিদ্রা
  • যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া

ক্রনিক কিডনি রোগের সমস্যা হওয়ার সময়টা দীর্ঘ তাই অন্যান্য যে কোনও শারীরিক অস্বাভাবিকতাই এই কঠিন রোগের লক্ষণ হতে পারে।

তাই শরীরে কোনো অস্বস্তি অনুভব করলে বা কোনো অস্বাভাবিকতা নজরে এলেই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়ের অপচয়ে অসুখ সারে না বরং তা রোগকে আরো কঠিন পর্যায় নিয়ে যেতে পারে।

কিডনি রোগের লক্ষণ দিলে কি করবেন?

Water
  • ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দুরে থাকুন
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে জলপান করুন
  • দুধ এবং সোয়া প্রোডাক্ট একেবারে এড়িয়ে চলুন
  • মাছ, মাংস ও ডাল জাতীয় প্রোটিন পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন অথবা বর্জন করুন
  • ব্যথার ওষুধ থেকে দুরে থাকুন
  • নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

মনে রাখবেন, একবার ক্রনিক কিডনি ডিজিস হয়ে গেলে সেটি আর সারে না, তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, নিয়মিত শরীরচর্চা, উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এর মতন সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা ভীষণ জরুরি।

সাবস্ক্রাইব করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর, তথ্য এবং চিকিৎসকের মতামত আপনার মেইল বক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন.

Table of Contents

আমাদের সাম্প্রতিক পোষ্ট গুলি দেখতে ক্লিক করুন

আমাদের বিশিষ্ট লেখক এবং চিকিৎসক